বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
সিরাজগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও নদীভাঙনের কবলে পড়ে জেলার ৫ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে বানভাসিরা।
ভাঙন কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। বন্যাকবলিত এসব এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে (সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায়) বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি অব্যাহত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় মানুষের চরম দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। জেলার কাজিপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি এবং সদর উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি, শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি, চৌহালী উপজেলার ৭টি, বেলকুচি উপজেলার ৬টি এবং কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নসহ মোট ৪৮টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া হাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলচতল, ঢেকুরিয়া, শ্রীপুর, সুতানারা, মল্লিকপাড়া, বদুয়ারপাড়া, দাদবোরা, খিরাইকান্দি, খাসরাজবাড়ি, ভেটুয়া, বাশজান, ভাঙ্গারছেও গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নাটুয়ারপাড়া চরের পূর্বপাশের বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। লোকজন তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। খাসরাজবাড়ি, জজিরা, মল্লিকপাড়া, মাজনাবাড়ি চরের মানুষ ভাঙনের শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বন্যা কবলিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজিপুরের শুভগাছাসহ চরাঞ্চলের প্রায় দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকে বসতভিটা ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ তৎপরতা শুরু না হওয়ায় এসব মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ২০০৭ সালে ভেঙে যাওয়ার পর সংস্কার না করায় ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে রানীগ্রাম ও গুনেরগাতী এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত মানুষ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে।
মনসুরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রাজমহর জানান, ৮০ লাখ টাকা খরচ করে সাধারণ জনগণের নির্মাণ করা মনসুরনগর ইউনিয়নের মাজনাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ১ হাজার ৯শ ফুট দৈর্ঘ্যের এই বাধটি ভাঙলে প্রায় দেড় হাজার বসতবাড়ি মুহূর্তে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাজনাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, এই বাঁধের ফলে স্কুলসহ অনেক স্থাপনা বন্যা-ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে। ফলে বাঁধটি নির্মাণে সরকারি সহায়তা জরুরি। এছাড়া বন্যায় চরাঞ্চলের নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় ধস নেমেছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয় থেকে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১ মেট্রিক টন, কাজিপুরে ৪ মেট্রিক টন, চৌহালীতে ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইমাম বলেন, বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীতে আরো কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি পাবে। ভাঙনরোধে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।শহর রক্ষা বাঁধগুলো যাতে ভেঙে না যায় এজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।