শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ম্যাগি: বাংলাদেশে গণমাধ্যমের মুখ বন্ধের চেষ্টা

ম্যাগি: বাংলাদেশে গণমাধ্যমের মুখ বন্ধের চেষ্টা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণের পর ভারতে ম্যাগি নুডলস নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে বাজার ধরে রাখতে আকর্ষণীয় মূল্য ছাড় আর একটার সঙ্গে আরেকটা ফ্রি অফার করেও ভোক্তা টানতে পারছে না ম্যাগি নুডলস। এছাড়া বিষয়টিতে সরকারের নিল্পিপ্ততার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় ম্যাগি নুডলসের বাংলাদেশে আমদানিকারক নেসলে বাংলাদেশ এবার বিকল্প পথে এগোচ্ছে। বাংলাদেশর বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে শনিবার থেকে তারা নগদ অর্থ লেনদেন শুরু করেছে। প্রথমে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করলেও এবার আর বিজ্ঞাপন না দিয়ে পত্রিকা ও টিভিগুলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরাসরি নগদ অর্থ দেওয়া শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিউজওয়ার্ল্ডবিডি ডট কম-কে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার খবর জানতে পেরে বাংলাদেশে বিপণন কর্মকা-ে জড়িত শীর্ষ ও মাঝারি সারির সুপার শপ থেকে শুরু করে বাজারকেন্দ্রিক দোকান ও গলির মোড়ের মুদি দোকানের বিক্রেতারাও আগের মতো ম্যাগি নুডলস তুলছেন না। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ বাংলাদেশে ম্যাগি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসলে বাংলাদেশের বিক্রয়কর্মীরাও। গত মাসের শেষের দিকে ৬৬ টাকার প্যাকের দাম কমিয়ে ৫০ টাকা এবং ১৩০ টাকার প্যাকের দাম ১০০ টাকা নির্ধারণ ও নেসলে কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে দুইটি মিনিপ্যাক ফ্রি দেয়া সত্ত্বেও দোকানিরা আর আগের মতো বড় অর্ডার দিচ্ছেন না। আসলে বিক্রিই কমে গেছে। বিএসটিআই থেকে ‘ভাল’ সার্টিফিকেট নিলেও ভোক্তাদের মধ্যে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকায় ম্যাগির ভাবমূর্তিই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, এই নুডলসে ক্ষতিকর সিসার উপাদান আছে- ভারতীয় আদালত কর্তৃক এমন তথ্য প্রমাণিত হওয়ার পর থেকেই দেশের বাজারে ম্যাগির চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এ অচলাবস্থা চলছে বলে বিক্রেতারা দাবি করছেন। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারে ম্যাগি নুডলসের শক্তিশালী ভিত ক্রমেই নড়বড়ে হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিক্রেতারা বাংলাদেশে ম্যাগির মার্কেট শেয়ারে ধস নামারও আশংকা করছেন। আর তা থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র বাংলাদেশের গণমাধ্যম। তাই যেন তেন প্রকারে গণমাধ্যমকে হাতে রাখতে অর্থ লেনদেনের দিকেই এগিয়েছে ম্যাগি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ম্যাগিতে ক্ষতিকর সীসা নেই- মান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) এমন দাবির প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না ক্রেতারা। সংশ্লিষ্ট ক্রেতারা বলছেন, খাদ্যপণ্যের মান নির্ধারণ নিয়ে বিএসটিআইর অবস্থান অতি প্রশ্নবিদ্ধ। এ প্রতিষ্ঠানটি জনগণের স্বার্থরক্ষা না করে অজ্ঞাত কারণে কোম্পানির স্বার্থরক্ষার মিশনে নেমেছে। তাই একটি নির্দিষ্ট গ-ি থেকে ম্যাগির গুটিকয়েক নমুনা পরীক্ষা করেই ফলাও করে প্রচার করছেন এতে ক্ষতিকর কোনো উপাদান নেই।
অন্যদিকে বিএসটিআইর সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এ পণ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হতে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এ সিদ্ধান্তে ত্বরিত কোনো ফলাফল আজও পাওয়া যায়নি। ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার দরুন এখন বিএসটিআইর পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিও কেউ কেউ সংশয়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন।
আসলে ম্যাগির প্যাকেট বাংলাদেশে হলেও এর ভেতরের পণ্য কোথায় তৈরি হয় তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যেমন নেসলে তাদের বেশ কিছু গুড়ো দুধ নিয়ে আসে ভারত থেকে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, দেশে ম্যাগি তৈরি হলেও এর বেশির ভাগ কাঁচামাল ভারত থেকে আনা হয়। এছাড়া দেশে ম্যাগির বড় বাজার রয়েছে। এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড।
বিএসটিআইর সার্টিফিকেশন অব মার্কস (সিএম) বিভাগের পরিচালক কমল প্রসাদ দাস বলেন, দেশে আমদানি করা ম্যাগি নুডলস বিক্রি হয় কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। আমরা দেশের বাজারে পাওয়া যায় এমন ম্যাগি নুডলস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে ম্যাগি নুডলসের মূল কোম্পানি ‘নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডে’র কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর নকীব খান একটি পত্রিকাকে বলেছেন, একটা নেতিবাচক প্রচারণা একটি সৃষ্টিকে হত্যার শামিল। তাই ম্যাগি নুডলস নিয়ে ভোক্তার আস্থার জায়গাটিতে কিছুটা চিড় ধরেছে। আমরা ভোক্তার ভুল ধারণা নিরসনে পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে সত্যিকার অর্থেই মার্কেটে আমাদের কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেটি এখনই জানা সম্ভব হবে না। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম