শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > আন্তর্জাতিক > মোদি চান জানুয়ারি থেকেই শুরু হোক অর্থবর্ষ

মোদি চান জানুয়ারি থেকেই শুরু হোক অর্থবর্ষ

শেয়ার করুন

আন্তজার্তিক ডেস্ক ॥
বাজেট অধিবেশন এগিয়ে আনার পর এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য অর্থবর্ষকে এগিয়ে আনা। প্রধানমন্ত্রী চান, নয়া অর্থবর্ষ শুরু হোক জানুয়ারি থেকে, শেষ হোক ডিসেম্বরে।

নীতি আয়োগের বৈঠকে এ বিষয়ে তিনি রাজ্যগুলিকে ভাবনা চিন্তা শুরু করতে বলেছেন। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে তিনি একাধিক গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন বলে খবর।

জানুয়ারি থেকে নয়া অর্থবর্ষ শুরুর লক্ষ্যে প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা শঙ্কর আচার্যের নেতৃত্বে একটি প্যানেল তৈরি হয়েছে। এই প্যানেল বিষয়টির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি-সহ বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করবে কেন্দ্রকে। বর্তমানে এ দেশে এপ্রিল থেকে শুরু হয় নয়া অর্থবর্ষ। যদিও বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পয়লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নতুন অর্থবর্ষ। এবার সেই পথেই হাঁটতে চান দেশের প্রধানমন্ত্রী।

রবিবার নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের তৃতীয় বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘ, মাঝারি ও স্বল্পমেয়াদি অ্যাকশন প্ল্যান সব রাজ্যকেই সুবিধা দেবে। তিনি নীতি প্রণয়নে রাজ্যের দায়িত্বের কথাও উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, নীতি আয়োগের মূল কথাই বল সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতি। লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করার জন্য কেন্দ্র যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়েও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মমতা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির জন্য তিনি বৈঠকে থাকতে পারবেন না।  রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এদিন দিল্লিতে ছিলেন। কিন্তু তিনি বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। কারণ বৈঠকটিতে কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীদের রাজ্যের তরফে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বলা হয়েছিল। অন্যদিকে, এদিন দিল্লিতে পুরভোট থাকার কারণে বৈঠকে আসতে পারেননি কেজরিওয়াল।

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, “নীতি আয়োগ ১৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, সাত বছরের মাঝারি মেয়াদি কৌশল এবং তিন বছরের অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। ” তিনি বলেন, “নতুন ভারত-এর লক্ষ্য একমাত্র সকল রাজ্যের মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব। সব রাজ্যের ও মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতাতেই তা বাস্তব হবে। ”

স্বাধীনতার পরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যোজনা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেখানে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ হত। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংস্কার কর্মসূচিতে গতি আনতে যোজনা কমিশনের বিলোপ করা হয়। সেই জায়গায় গঠিত হয় নীতি আয়োগ। প্রধানমন্ত্রীর মতে, দেশের বিকাশে নীতি আয়োগ ক্রমশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্র, বেসরকারি ক্ষেত্র ও নাগরিক সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রশাসনিক বা অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নয়, নীতি আয়োগের আসল শক্তি হল ভাবনায়।

পণ্য ও পরিষেবা কর সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট চারটি বিলে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর সেই বিলগুলি রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়ার অপেক্ষা। ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এই অভিন্ন অপ্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা কার্যকরের লক্ষ্য স্থির করেছে কেন্দ্র সরকার। এদিনের বৈঠকে পণ্য ও পরিষেবা কর নিয়েও সব রাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেন, জিএসটি বিল সব রাজ্যের ঐকমত্য ইতিহাসের পাতায় সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির নিদর্শন হয়ে থাকবে। জিএসটি-র মাধ্যমে এক দেশ, এক লক্ষ্য, এক ইচ্ছার আদর্শ প্রতিফলিত হয়। এই নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলতেই পারে। অন্যদিকে, লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গে করার যে প্রস্তাব কেন্দ্র থেকে করা হয়েছে, তা নিয়েও আলোচনার প্রয়োজনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ছিলেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। বৈঠকে ‘দারিদ্র দূরীকরণ’ এবং ‘কৃষি উন্নয়ন’ নিয়ে টাস্কফোর্স চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেজরিওয়াল উপস্থিত থাকতে না পারলেও দিল্লি সরকারের হয়ে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, মুখ্যমন্ত্রী বা উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। বৈঠকে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে পাঞ্জাব, বিহার, ওড়িশা, কর্নাটক, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও সেখানে ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজনাথ সিং, নীতিন গড়করি, সুরেশ প্রভু, প্রকাশ জাওড়েকর ও স্মৃতি ইরানি।