স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাজারে সরবরাহের কমতি নেই। আড়ত ও পাইকারদের গুদামও ঠাসা। তবুও চালের দাম বাড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেও বিভিন্ন মানের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা। মোটা চাল ৩৬ টাকার নিচে মিলছে না। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ পড়েছেন বেকায়দায়। কাওরান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মিরপুর ১ নম্বর শাহ আলী মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, চাল নিয়ে শুরু হয়েছে চালবাজি। ক্রেতারা দুষছেন খুচরা দোকানদারদের। খুচরা দোকানদাররা দুষছেন আড়ত ও পাইকারদের। আবার আড়তদাররা বলছেন মিলমালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন। তাই তারাও দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল পর্যন্ত মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা, মিনিকেট ৪৪ থেকে ৪৮, টেপি ৫০, পারিজা ৩৬ থেকে ৩৮, বিআর-২৮ চাল ৩৮ থেকে ৪০, বিআর-২৯ ৩৮ থেকে ৪০, গুটি স্বর্ণা ৩৬, আতপ ৪০ থেকে ৫০ ও কাটারিভোগ ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। কাওরান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. ফোরকান হোসেন বলেন, চালের দাম তো আমরা বাড়াই না। আড়তদারদের কাছ থেকে কিনে কেজিতে ১-২ টাকা লাভ করি। যদি দাম বেড়ে থাকে তার কারণ মিলমালিকদের সিন্ডিকেট। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও মিলাররা অল্প অল্প করে তাদের সুবিধামতো চাল সরবরাহ করেন। এ জন্যই দাম বাড়ে। মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী মো. বশীর আহমেদ জানান, ক্রেতারা চালের দাম নিয়ে চেঁচামেচি করেন। কিন্তু আমাদের কি দোষ বলেন? আমরা যে দামে চাল কিনি কেজিতে ১ টাকা লাভ করলেও অনেক কষ্ট হয়। সেখানে বেশি পরিমাণ লাভের সুযোগ কই? মিলমালিকদের কারসাজি ও সিন্ডিকেট বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ক’জন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, চালের বাজার এখন সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। করেন জোতদার ও উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক কিছু চাতাল ও মিলমালিক। তাদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে সবাই অসহায়। বাজারে পর্যাপ্ত ধান ও চাল থাকার পরও তাদের কারসাজি এবং অসাধু তৎপরতার কারণে চালের দাম লাগামছাড়া হচ্ছে। রাজধানীর বাবুবাজারের মেসার্স প্রত্যাশা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের চালের ব্যবসা পুরোটাই চাতাল ও মিলনির্ভর। চালের সরবরাহ ও দাম সবকিছুই নির্ভর করে তাদের ওপর। সরকার যদি সেদিকে নজর দেয় তাহলে হয়তো দামে তারতম্য হতে পারে। আলমগীর হোসেন বলেন, গুটি স্বর্ণা (মোটা চাল) পাইকারি বিক্রি করছেন প্রতি বস্তা ১৭০০ টাকা (কেজি ৩৪ টাকা)। খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর নয়াগলার মেসার্স মোজাম্মেল রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. মোজাম্মেল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বর্গাচাষিরা ধান বিক্রি শেষ করেছেন। কিন্তু জোতদাররা বেশি দামের আশায় ধান আটকে রাখছে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। ধানের সরবরাহ না থাকলে মিলাররা চাল উৎপাদন করবেন কোত্থেকে? মিলাররা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ধান পাচ্ছেন না। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে চালের দাম কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধানের দাম বাড়লে চালের দাম এমনিতেই বাড়ে।’