শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মেয়ের আবদার পূরণ করছেন শিক্ষামন্ত্রী!

মেয়ের আবদার পূরণ করছেন শিক্ষামন্ত্রী!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ভাষাবিজ্ঞান থেকে পাস করে স্কুল-কলেজে বাংলা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আন্দোলন ক্রমাগত বড় আকার ধারণ করছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ এ ধরনের অযৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের মেয়ে নাদিয়া নন্দীতা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষক। তিনি চাচ্ছেন ভাষাবিজ্ঞান থেকে পাস করেও যেন শিক্ষার্থীরা বাংলার শিক্ষক হতে পারে। আর সে কারণেই বাবা নুরুল ইসলাম নাহিদকে দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়াচ্ছেন।

তবে বাংলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ভাষাবিজ্ঞান তাদের দাবির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে এবং শিক্ষামন্ত্রী প্রাথমিকভাবে সম্মতিও দিয়েছেন। কার প্রভাবে এটা হয়েছে তা তারা জানেন না। তবে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের এ দাবি অযৌক্তিক। যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে নেয়া উচিৎ।

বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা ৪ বছরের অনার্স কোর্সে মূল বিষয়ের সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মনোবিজ্ঞানসহ আরো কিছু বিষয় ৫০ বা ১০০ নম্বরে পড়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে কি আমরা এসব বিভাগের শিক্ষক হতে পারবো? ভাষাবিজ্ঞানে তো ১০০ নম্বরের ইংরেজিও পড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে কি সরকারি কলেজে তাদের ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক বাংলামেইলকে বলেন, ‘যেখানে আমরা ১২০ ক্রেডিটের বাংলা সাহিত্য পড়িয়ে থাকি সেখানে ভাষাবিজ্ঞানে পড়ানো হয় মাত্র ৬ ক্রেডিট, যা ১০০ নম্বর বিবেচ্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভাষাবিজ্ঞানের মূল পাঠ্যসূচি বিভিন্ন ভাষার ব্যাকরণ নিয়ে। ধরতে গেলে বাংলা সাহিত্য তারা পড়ায় না। বাংলা বিভাগের মূল পাঠ্যসূচি বাংলা সাহিত্য নিয়ে। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী ৩ হাজার নম্বরের বাংলা সাহিত্য পড়ে। এসএসসি লেভেলে একজন শিক্ষার্থীকে ২০০ নম্বরের মধ্যে ব্যাকরণ পড়তে হয় ৩০ নম্বর আর বাকি ১৭০ নম্বর পড়তে হয় বাংলা সাহিত্য নিয়ে। এ ক্ষেত্রে কীভাবে একজন ভাষাবিজ্ঞান থেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক বাংলা সাহিত্য পড়াতে পারে?’

এরইমধ্যে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘ভাষাবিজ্ঞান ১৯৯২ সালে বাংলা বিভাগের অন্তর্ভূক্ত ছিল। কিন্তু এখন দুটো আলাদা বিভাগে আলদা বিষয়ে জ্ঞান চর্চা হয়। বর্তমানে ভাষাবিজ্ঞানে ১০০ নম্বর বাংলা সাহিত্য পড়ানো হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা পড়িয়ে থাকি ৩ হাজার নম্বর।’

এ সম্পর্কে ভাষাবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মো. হাকিম আরিফ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা বাংলা বিভাগের বিরুদ্ধে নই। আমাদের বিভাগে উচ্চতর ব্যাকরণ পড়ানো হয়। কিন্তু যাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাকরণের অংশটা পড়াতে পারে সেই নিবন্ধনের জন্য আমরা জাতীয় নিবন্ধন কমিটি বরাবর আবেদন করেছি।’

তিনি দাবি করে বলেন, ‘১৯৯২ সালের আগে বাংলা বিভাগের সঙ্গে ভাষাবিজ্ঞানের সংযুক্তি ছিলো, বিষয়টি বিবেচনা করে শিক্ষামন্ত্রলায় প্রাথমিক নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে মাত্র।’

তিনি আরও বলেন, ‘এইচএসসি লেভেলে বাংলায় যে ২০০ নম্বর রয়েছে তার মধ্যে ১০০ বাংলা সাহিত্যের আর ৩০ নম্বর সরাসরি ব্যাকরণের। আর বাকি ৭০ নম্বর ব্যাকরণের এক্সটেনশন যা ব্যাকরণের মধ্যেই পড়ে। সেক্ষেত্রে নিবন্ধন নেওয়াটা অযৌক্তিক হবে কেন। তাছাড়া আমরা তো কেবল যাতে শিক্ষক হতে পারে তার নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। সরাসরি চাকরির জন্য তো করিনি।’

ভাষাবিজ্ঞানের এ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘২০১০ সালেও আমাদের বিভাগের ছেলে মেয়েরা নিবন্ধন করতে পারতো। কিন্তু নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে অনলাইন প্রক্রিয়া আসায় আমরা বাদ পড়ি সেটা ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের এ আবেদন।’

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দু’একদিনের মধ্যে ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীর দাবি দু’টি বিভাগ যদি একটি বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে আন্দোলন করে তাহলে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।

আরো একটি সূত্র জানিয়েছে, জামায়াত-শিবিরের ব্লেম দিয়ে ছাত্রলীগ দিয়েও আন্দোলন নস্যাৎ করে দেয়ারও পরিকল্পনা তাদের আছে।

এ সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা বিভাগে অধ্যায়নরত হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, ‘হলের নেতারা আমাদের আন্দোলনে আসতে বারণ করেছিল। কিন্তু আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় করেই ছাড়বো।’

আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটি মন্ত্রাণালয়ের কোনো ব্যাপার না। যারা তাদের পড়াচ্ছেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ভাষাবিজ্ঞান ইনিস্টিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তৈরি করেছে। তাই যা সিদ্ধান্ত নেয়ার তা ঢাবি কর্তৃপক্ষই নেবে। তারাই ঠিক করবেন আন্দোলনের বিষয়টি কী।’ বাংলামেইল২৪ডটকম