আর্ন্তজাতিক ডেস্ক ॥
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রয়াত মুরসির ছেলে আবদুল্লাহ মুরসি। পিতার মৃত্যুর ঠিক ৩ মাস পরে আব্দুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে গেছেন আবদুল্লাহ মুরসি। বাবা মুরসিকে উদ্দেশ্য করেই দিয়েছিলেন সেই স্ট্যাটাস। জেলখানায় বাবার মৃত্যু যে এই যুবক মেনে নিতে পারছিলেন না সেটি স্পষ্ট আবদুল্লাহর স্ট্যাটাসে।
আবদুল্লাহ মুরসির সেই স্ট্যাটাসটি প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা। যা প্রতিটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
আরবিতে লেখা আবদুল্লাহ মুরসির স্ট্যাটাসটির অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায়-
‘আল্লাহর শপথ! হে আমার পিতা! আমার অন্তর সুস্থ হবে না, আমার ভাঙা হৃদয় জোড়া লাগবে না এবং আমার দুশ্চিন্তাও দূর হবে না; যতক্ষণ না আমি আপনার সঙ্গে আপনারই পথে মিলিত হই। (যদি আমার আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ পূরণ করেন) তাহলে এরপর আমার জীবনে দুনিয়ার আর কোনো কিছুই আকর্ষণ করবে না।’
কারাবন্দি অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মুরসির মৃত্যু আবদুল্লাহ মুরসি মেনে নিতে পারেননি সেটি স্ট্যাটাসে স্পষ্ট। পিতার সঙ্গে পুত্রের আত্মার মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও ছিল তীব্র। আর বিশ্লেষকরাও ধারণা করছেন যে, পিতার শোকেই আবদুল্লাহ মুরসি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন।
গত বুধবার কায়রোর একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আবদুল্লাহ মুরসির মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৪ বছর। তবে এ বিষয়ে মিসরের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি।
প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি গত জুনে আদালতে মারা গেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কায়রোর আদালতে তার বিচার চলছিল।
বছরখানেক ক্ষমতায় থাকার পর সেনাশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তাকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে বলা হয়েছে, বাবার মৃত্যুর পর বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ তৌফিক, তার পূর্বসূরি মাজদি আবদেল গাফ্ফার ও মোহাম্মদ শারিন ফাহমি এবং যে বিচারক বিচারের কাজ করছিলেন, তারাসহ বেশ কিছু লোক মোহাম্মদ মুরসিকে হত্যায় সহায়তা করেছেন বলে আবদুল্লাহ মুরসি অভিযোগ করেন।
৬ বছরের নির্জন কারাবাসের পর গত ১৭ জুন আদালত কক্ষে হঠাৎ পড়ে যান মোহাম্মদ মুরসি। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
কারাগারে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, যকৃত ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু ছয় বছর ধরে পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা আইনজীবীদের সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। অনেকটা বিনা চিকিৎসা ও অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা দাবি করছেন।