আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
রোহিঙ্গা নির্যাতন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ও নিন্দা এসেছে তুরস্কের কাছ থেকে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে তুরস্ক কেন এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে?
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিনপি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড.তাজ হাশমী বলেন, তুরস্ক এক সময় মুসলিম বিশ্বের খুবই নামকরা একটা দেশ ছিল। ভার্চুয়ালি পুরো মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও ইরান ছাড়া সবই তুরস্কের স¤্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এরদোগানকে অনেকেই নিউ সুলতান বলে থাকেন । উনি তুরস্কে এসে পুরোনো রোলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। উনি ইসলামপন্থি এবং উনি চান মুসলমানদের প্রধান প্রতিনিধি হবেন। সৌদি আরব বা পাকিস্তানের বদলে তুরস্কের হাতে থাকবে নেতৃত্ব।
হাশমী আরো বলেন, যেমন সৌদি আরবে ৪ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। কিছুদিন আগে এরদোগান ইরানের সাথে কথাবার্তা বলেছেন। ব্যাপারটা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তান বা সৌদিআরবের বদলে তুরস্ক নিজেকে মুসলিম প্রধান শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি ব্যাপারে তার প্রভাব কতটুকু?
জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের দুইটা বড় শক্তি চীন এবং ভারত তারা মিয়ানমারকে একেবারে সাদা চেক দিয়ে একশ ভাগ সমর্থন করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিবেন। চীন সিকিউরিটি কাউন্সিলের ভেটোও দিয়েছে। তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের এ্যাকশনের বিরোধী।
এই বিষয়ে মনে হচ্ছে না আমেরিকা এগিয়ে আসবে। আমেরিকার মিডিয়াতেও খুব একটা উচ্চবাক্য দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং আমেরিকা পরোক্ষভাবে চীন এবং ভারত প্রত্যক্ষভাবে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠিকে সমর্থন করছে। সেখানে তুরস্ক কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। সেই জন্যই তুরস্ক মনে করছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য একটা ফান্ড দাঁড় করানো যায় কিনা।
যদি মিয়ানমারের উপর চাপ তৈরি করা সম্ভব না হয় তাহলে এখান থেকে এরদোগানের লাভ কি।
জবাবে তিনি বলেন, লাভ হচ্ছে দেশে একটা ইমেজ সৃষ্টি হবে। মুসলিম বিশ্বে একটা ইমেজ সৃষ্টি হবে, উনি ইসলাম বিশ্বে একজন চ্যাম্পিয়ান। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইরান ও বাংলাদেশ নিয়ে যদি একটি ফান্ড করা যায়। ইতিমধ্যে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৫৫ টি মুসলিম দেশ নিয়ে জোট গঠিত হয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে তুরস্ক। বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হওয়ায় একে নিয়ে যদি শুরু করতে পারে এবং ইরানকে যদি সংযুক্ত করতে পারে তাহলে সৌদি আরবের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। তাহলে তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে, দেশীয়ভাবে জনপ্রিয়তা পাবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নানা মুখী তৎপরতা চালাতে শুরু করছে মুসলিম প্রধান দুই দেশ তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু এই সংকটের সবচেয়ে বড় ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশকেই।
সূত্র : বিবিসিৃ