শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মুম্বাইয়ে ভোটের রাজনীতিতে বাংলাদেশি ইস্যু!

মুম্বাইয়ে ভোটের রাজনীতিতে বাংলাদেশি ইস্যু!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ভারতের বাণিজ্যিক শহর মুম্বাইতে অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে ফের শুরু হয়েছে শোরগোল। এটি কোনো নতুন বিষয় নয়। প্রতিবার নির্বাচনের সময় এলেই এই বাংলাদেশিদের বিতর্কের কেন্দ্রে টেনে আনা হয়।
উগ্র হিন্দুবাদী দল শিবসেনার বক্তব্য, এই বাংলাদেশিদের জন্যই নাকি শহরে অপরাধ বাড়ছে। কিন্তু পুলিশের তথ্যমতে তাদরে এ অভিযোগ ধোপে টিকছে না। তারপরও নিরীহ বাংলাদেশিদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মুম্বইতে পুলিশি অভিযান চলছে নিয়মিতই।

কাজের সন্ধানে মুম্বাইতে আসা অসহায় বাংলাদেশিরা কীভাবে নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন এবং শহরের বাসিন্দারাই বা তাদের কী চোখে দেখেন এ নিয়েই এ প্রতিবেদন।

গত সাত-আট মাস আগে মুম্বাই শহরে শক্তি মিল নামে একটি পরিত্যক্ত কারখানা চত্বরে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক তরুণী চিত্রসাংবাদিক। এ পাশবিক ঘটনায় শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। অপরাধীরা কেউ গ্রেফতার হওয়ার আগেই মুম্বাইয়ের প্রভাবশালী দল শিবসেনা বলে বসে, এটা অবৈধ বাংলাদেশিদেরই কাজ! দলের ডাকসাইটে নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, এসব বাংলাদেশিরা মুম্বাইতে ঢুকছে হুড়মুড় করে। তাদের কোনও রেকর্ড কোথাও নেই । আর তার সুযোগ নিয়েই তারা খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে।

পরে দেখা যায় ধর্ষণকারীরা সবাই মুম্বইয়ের স্থানীয় দাগী অপরাধী। সম্প্রতি তাদের মৃত্যুদণ্ড সাজা হয়েছে।

কিন্তু শিবসেনা তাদের ওই বক্তব্যের জন্য কোনো রকম দু:খপ্রকাশ করেনি। উল্টো চলতি সপ্তাহে দাদারে শিবসেনা নেত্রী ও মুখপাত্র শ্বেতা পারুলকর বিবিসিকে বলছিলেন, মুম্বইতে বাংলাদেশিদের ঠাঁই হবে না! তাঁর যুক্তি হল, বাংলাদেশিরা যদি এ শহরে আসতেই থাকেন, মুম্বই শহর সেই চাপ সামলাতে পারবে না।এতে করে শহরের পরিবহন, জল সরবরাহ বা সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধার ওপরই তখন চাপ বাড়বে ।

শুধু তাই নয়, শিবসেনা বিশ্বাস করে মুম্বই শহরে অপরাধের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে অবৈধ বাংলাদেশিদের সরাসরি সম্পর্ক আছে।

এগুলো আসলে এক ধরনের সস্তা রাজনীতি বা সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে জনমতকে উসকে দিয়ে মুম্বইয়ের রাজনীতি সরগরম করার চেষ্টা নতুন নয়। মুম্বাইয়ের নির্বাচনে এই বাংলাদেশিরা বরাবরই একটা বড় ইস্যু। পুলিশের পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে, শহরে অপরাধের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। মুম্বইয়ের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মহেশ পাটিল বিবিসি প্রতিনিধিকে বলছিলেন, শহরে বড় বড় অপরাধে বাংলাদেশিদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা খুঁজে পাননি।

মুম্বাইতে বসবাসকারী গুটিকয়েক মানুষদের বেশিরভাগই রাস্তা বা বাড়িঘর নির্মাণের কাজে যুক্ত, কিংবা ছোটখাটো শিল্পে। তাদের মজুরিও অনেক কম। পুলিশ নিয়মিত এদের বিরুদ্ধে তল্লাসি বা চিরুনি অভিযান চালায়। ধরা পড়লে আদালতের নির্দেশ মেনে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে। মুম্বাইতে কাজের সুযোগ কমতে থাকায় এরা এখন ছড়িয়ে পড়ছেন আরও দূরদূরান্তে – শহরতলির নভি মুম্বাই, থানে বা কল্যাণে।

মুম্বইয়ের মিশ্রবান্দ্রা-চার্চগেট রেলপথটা মুম্বইয়ের একটা লাইফলাইন, সেখানে নিত্যযাত্রীদের অভিমত দেখা গেল বিভক্ত। এরা কেউ বলছেন, গরিব মানুষ রুটিরুজির জন্য তো আসবেই। কারও মত, প্রথমে কলকাতায় এসে তারপর সেখানে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে মুম্বইতে পাড়ি দেয় এরা – সেটা কিছুতেই মানা যায় না।মুম্বাইয়ের প্রবীণ এক নাগরিক আবার বলছেন, পঞ্চাশ বছর এ শহরে আছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু কখনও কোনও সমস্যা তৈরি করেনি, কিন্তু তাদের নিয়ে রাজনীতি হয়ে এসেছে চিরকালই।

পশ্চিমবঙ্গ থেকেও অনেক বাঙালি মুম্বাইয়ে এসে থিতু হয়েছেন – তারাও সীমান্তের অন্য পারের বাঙালিদের নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না।

মুম্বইয়ে ধারাভি, সান্তাক্রুজ বা পারেলের বস্তিতে এই বাংলাদেশিদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেক কষ্টে চার-পাঁচজন বাংলাদেশী যুবকের সন্ধান মিলল নভি মুম্বইয়ে একটি নির্মীয়মান বহুতলের সাইটে। বছরতিনেক মুম্বাইতে কাটালেও তাদের অবশ্য এখনও কোনও ঝুটঝামেলায় পড়তে হয়নি, আর শহরটা নিয়েও বড় একটা অভিযোগ নেই তাদের। নাম-ঠিকানা জানাতে অনিচ্ছুক ওই যুবকদের একজন বললেন, বাইরে অনেকে ঝামেলায় পড়লেও গত বছরতিনেকে তাদের বিশেষ একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি। কারণ তারা কয়েকজন বাঙালি যে এখানে আছেন সেটা বাইরের কারও জানা নেই।

অন্যরাও বললেন, মুম্বই শহর তাদের খুব একটা খারাপ লাগে না – কারণ এখানে কাজকর্মের সত্যিই সুবিধা আছে।

কিন্তু মুম্বাইয়ের বাসিন্দারা এই বাংলাদেশীদের নিয়ে কী ভাবেন? বান্দ্রা-চার্চগেট রেলপথটা মুম্বইয়ের একটা লাইফলাইন, সেখানে নিত্যযাত্রীদের অভিমত দেখা গেল বিভক্ত। এরা কেউ বলছেন, গরিব মানুষ রুটিরুজির জন্য তো আসবেই। কারও মত, প্রথমে কলকাতায় এসে তারপর সেখানে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে মুম্বইতে পাড়ি দেয় এরা – সেটা কিছুতেই মানা যায় না। মুম্বাইয়ের প্রবীণ এক নাগরিক আবার বলছেন, পঞ্চাশ বছর এ শহরে আছেন, বাংলাদেশীরা কিন্তু কখনও কোনও সমস্যা তৈরি করেনি, কিন্তু তাদের নিয়ে রাজনীতি হয়ে এসেছে চিরকালই।

পশ্চিমবঙ্গ থেকেও অনেক বাঙালি মুম্বাইয়ে এসে থিতু হয়েছেন । তারাও সীমান্তের অন্য পারের বাঙালিদের নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না।

শহরের বিখ্যাত বাঙালিদের একজন শিবেসেনার প্রাক্তন সাংসদ প্রীতীশ নন্দী মনে করেন, বাংলাদেশীরা যে সব কাজের সন্ধানে মুম্বইতে আসেন, স্থানীয়রা সেগুলো করতে চান না বলেই এ শহরে বিদেশিদের কাজ জোটে। সাবেক এমপি নন্দী মনে করেন সব ধরনের ছোটখাটো কাজের জন্য স্থানীয় মারাঠিদেরই শুধু নিয়োগ করতে হবে তার কোনও অর্থ হয় না, আর সেটা সম্ভবও নয়।

বাস্তবতা যাই হোক, বাংলাদেশিদের নিয়ে রাজনীতি কিন্তু থেমে নেই। তবে বহিরাগতদের সম্পর্কে মুম্বইয়ের যে বরাবরের ক্ষোভ বা আক্রোশ ছিল তা ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে বলেই ধারণা প্রীতিশ নন্দীর। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে মুম্বই অনেক উদার, সহিষ্ণু হয়েছে। বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের সম্পর্কে মনোভাবও পাল্টাচ্ছে। মুম্বই আসলে মেনে নিয়েছে যে অভিবাসীরা আসবেনই। আর শহরের ভবিষ্যৎও নির্ভর করে তাদের ওপর!’