শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার দলে ছিল নরসিংদীতে গ্রেফতার আজিজুল

মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার দলে ছিল নরসিংদীতে গ্রেফতার আজিজুল

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে গত মাসে প্রিজন ভ্যানে হামলার ঘটনা তোলপাড় ফেলে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নরসিংদীর শেখেরচরের জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় বসে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হয় প্রায় ছয় মাস ধরে।

এ কাজে ওই মাদ্রাসার সাবেক ও বর্তমান দুই শিক্ষক জড়িত। এর মধ্যে আজিজুলকে মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিচ্ছে পলাতক ফোরকান। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে জঙ্গিদের ৭-৮ জনের একটি গ্রুপ অংশ নেয়। প্রিজন ভ্যানে হামলার পর শেখেরচরের জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় আবার আশ্রয় নিয়েছিল তারা। ইতিমধ্যে গ্রুপটির অন্যতম পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ সময় তারা অপারেশনের বিস্তারিত বিবরণ দেয়। জঙ্গিরা হামলার আগে যে ছক তৈরি করেছিল, তা-ও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা মোস্তফা কামাল (২২) নামে এক জঙ্গিকে আটক করে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই টঙ্গি থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এর নম্বর ১০।

প্রথমে মামলাটি টঙ্গি থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা তদন্ত করছেন।

গাজীপুর ডিবি পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার সময় মোস্তফা কামাল নামে এক জঙ্গিকে আটক করা হয়। সে প্রথমে বলেছিল, সাত হাজার টাকার বিনিময়ে এই হামলা চালিয়েছে, আর কিছু জানতো না। তবে তার এই তথ্য ছিল মূলত সময়ক্ষেপণের জন্য। পরবর্তীতে তাকে রিমা-ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সবকিছু স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ৭ মার্চ নরসিংদী থেকে মিনহাজুল ইসলাম (২০) নামে আরেক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা উভয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘নরসিংদীর শেখেরচর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় বসে জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। তার আদালতে হাজিরা যে ৬ মার্চ তা আগেই জানা ছিল তাদের। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী টঙ্গির চেরাগ আলীর কলেজ গেট এলাকায় প্রিজন ভ্যানে ও পুলিশের গাড়িতে হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শেখেরচরের মাদ্রাসাটির কেতাব বিভাগের শিক্ষক ছিল ফোরকান। কিন্তু তার কার্যক্রম সন্দেহজনক হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে কয়েক বছর আগে চাকরিচ্যুত করে। তারা তিন ভাই উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত। অন্য দু’জন হলো গোফরান ও ওসমান। তাদের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। তাদের এক ভাগ্নে ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁওস্থ বেগুনবাড়িতে ব্লগার আশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় হিজড়াদের হাতে ধরা পড়ে। তার নাম জিকুরুল্লাহ। সে একসময় ওই মাদ্রাসার ছাত্র ছিল।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, ‘মুফতি হান্নানকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানে হামলার আগে জঙ্গিরা গাজীপুরে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের সমন্বয়ক ছিল মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজুল। তারা অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করতো। তবে ফোরকান নির্দিষ্ট কোনও স্থানে বসে জঙ্গিদের এই অপারেশন পর্যবেক্ষণ করছিল। সে মাঝে মধ্যে ঢাকায়ও অবস্থান নিতো। হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকগুলো ফোরকান দিয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে মোস্তফা ও মিনহাজ। হামলার পর জঙ্গিরা শেখেরচরের ওই মাদ্রাসায় ফিরে যায়। হামলাকারীদের বেশিরভাগই মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থী। ওই মাদ্রাসা চলে মানুষের সহযোগিতায়।’

পুলিশের ভাষ্য, ‘জঙ্গিরা হামলার সময় ওয়ান-টু-ওয়ান যোগাযোগ রাখতো। একটি অ্যাপের মাধ্যমে তারা কথা বলতো। হামলার সময় তারা এই অ্যাপ ব্যবহার করে ওয়ান-টু-ওয়ান কথা বলেছে।’

ফোরকানই প্রিজন ভ্যানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে আপাতত তথ্য রয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে। জঙ্গিরা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য হামলা চালানোর পাশাপাশি সাভারের হেমায়েতপুর, বিরুলিয়া ব্রিজ ও গাজীপুর সদর থানার হোগরা বাইপাসে আরও তিনটি অপারেশনের পরিকল্পনা করেছিল। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সেইসব অভিযানের দায়িত্বে ছিল পৃথক তিনটি গ্রুপ।

হামলায় জড়িত অন্য জঙ্গিদের গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশ জানায়, প্রথম যাকে গ্রেফতার করা হয় তার সাংগঠনিক নাম মাইনউদ্দিন। পরে জানা যায় তার প্রকৃত নাম মোস্তফা কামাল। অন্যদেরও হয়তো সাংগঠনিক নাম পাওয়া গেছে বলে ধারণা তাদের। তবে মিলেছে বেশকিছু ক্লু। এগুলো জঙ্গিদের গ্রেফতারে সহায়ক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। গাজীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল হোসেন বলেন, ‘আমরা জড়িতদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। তারা দোষ স্বীকার করেছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

গ্রেফতারকৃত মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজের বাড়ি কালিগঞ্জে। রিমা-ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তবে অন্য দুই জঙ্গি গত ১৯ মার্চ বিকালে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের মধ্যে মোস্তফা কামাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস রহমানের আদালতে এবং মিনহাজুল জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হাইয়ের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি রেকর্ড করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

দুই জঙ্গির মধ্যে মোস্তফা কামাল (২২) হলো ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পূর্ব পাগলী এলাকার মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে আর মিনহাজুল ইসলাম (২০) হচ্ছে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কাটিকাটা উত্তর এলাকার রতন মিয়ার ছেলে। বাংলা ট্রিবিউন