শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মুজাহিদের ৪০, সাকার ১৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ বুধবার

মুজাহিদের ৪০, সাকার ১৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ বুধবার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বুধবার (১৪ অক্টোবর) মধ্যে আপিল বিভাগে আবেদন করবেন মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী। তবে অবকাশের মধ্যে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে কি-না সেটি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াত-বিএনপির এ দুই নেতার আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, চূড়ান্ত রায়ের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরে মুজাহিদ ৪০ পৃষ্ঠা এবং সাকা চৌধুরী ১৩৮ পৃষ্ঠার মূল রিভিউ আবেদন করবেন। উভয় রিভিউয়ের পেপারবুক হবে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, অবকাশকালীন ছুটির মধ্যে এসব (রিভিউ) আবেদনের শুনানি হবে কি-না তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির। তিনি চাইলে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতিই নেবেন।

রাষ্ট্রের এই প্রধান কর্মকর্তা আপিল মামলাগুলোর মতোই রিভিউ আবেদনের শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।

অন্যদিকে দু’জনেরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা। তবে বুধবার রিভিউ আবেদন করার পর দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি রিভিউয়ের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মুজাহিদের আইনজীবী শিশির মনির।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর এ ছুটি শেষ হবে।

সাধারণত মুল রায়ের বড় কোনো বিষয় বাদ পড়ে গেলে কিংবা অসঙ্গতি থাকলে রিভিউয়ে সুবিধা পান আবেদনকারীরা। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মতে, ‘রিভিউ করা মানে চাঁদে হাত দেওয়া’। এমনিতে রিভিউতে রেহাই পাওয়ার নজির তেমন একটা নেই।

রায় পুর্নবিবেচনার আবেদনে কি আছে এমন প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ২২ মাস ধরে তদন্ত করে আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির কোনো তালিকায় তার (মুজাহিদ) নাম খুঁজে পাননি। কিন্তু এ বিষয়ে আপিল বিভাগ কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদকে আলবদর কমান্ডার বলছেন। এটা স্পষ্ট নয়।

এছাড়া আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, একাত্তরের ২৩ বছরের একজন ছাত্র ও বেসামরিক ব্যক্তি কিভাবে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান হন?

তিনি বলেন, এ রকম আরো কিছু বিষয় আছে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আশা করি, তিনি অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন।

অপরদিকে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আলফেসানি বলেন, বুধবার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হবে।

কোন কোন বিষয় উল্লেখ করে আবেদন করা হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আবেদন করার পর বুধবার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ এবং ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাদের দু’জনকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।

নিয়ম অনুসারে সে থেকে তারা দু’জন নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করছেন।

যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।

২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম