আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
রবার্ট মুগাবে মঙ্গলবার তার ৩৭ বছর ক্ষমতার অবসান ঘটিয়েছেন। আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের এ প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ায় জিম্বাবুয়ের নাগরিকরা উল্লাসে মেতে উঠলেও বিশ্বের অন্যান্য অংশের মানুষ কিছুটা অবাক হয়েছেন।
মুগাবের পদত্যাগের ঘোষণার পর দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রাতিষ্ঠানিক উত্তরাধিকার নিয়ে প্রশ্নও উঠছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের বিশ্লেষক দেরেক ম্যাটিসজ্যাক মুগাবের পদত্যাগ পরবর্তী জিম্বাবুয়েতে কী ঘটতে যাচ্ছে তার একটি ধারণা দিয়েছেন বার্তাসংস্থা এএফপিকে।
কী ঘটবে এখন?
‘আমি মনে করি, আমরা দেখতে যাচ্ছি ক্ষমতাচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যানগ্যাগওয়া খুব শিগগিরই শপথ নেবেন…যতটুকু আমি বুঝেছি দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এমফোকো ফেলেকেজেলা বর্তমানে দেশে নেই। যদি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে শূন্যতা দেখা দেয় তাহলে মন্ত্রিসভার বৈঠক বসবে এবং তারা একজনকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেবেন।’
মুগাবে পরবর্তী তার উত্তরসূরী কে হবেন- সেই বিতর্কের জেরে দেশটিতে নজিরবিহীন সঙ্কট শুরু হয় গত ১৪ নভেম্বর। এর দু’দিন আগে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এমন্যানগ্যাগওয়াকে বরখাস্ত করে মুগাবে স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে তার উত্তরাধিকারী নির্বাচনের পথ পরিষ্কার করেন। সাবেক গোয়েন্দা প্রধান এমন্যানগ্যাগওয়ার সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
এমন্যানগ্যাগওয়াকে মুগাবে তার রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ থেকেও বহিষ্কার করেন। রাজনৈতিক এই সঙ্কটের জেরে সেনাবাহিনী প্রধান সংবাদ সম্মেলন করে মুগাবেকে হুঁশিয়ার করে দেন। একই সঙ্গে দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের হুমকি দেন সেনাপ্রধান কন্সট্যান্টিনো চিওয়েঙ্গা। এর দুদিন পর মুগাবেকে গৃহবন্দি করে দেশটির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী।
পরে মুগাবেকে তার রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ থেকে বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় জানু-পিএফ। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও মুগাবে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। তার এই সিদ্ধান্তের পর দলের পক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয় মঙ্গলবার।
অনেক নাটকীয়তার পর অভিশংসিত হওয়ার আগেই মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। বিশ্লেষক দেরেক ম্যাটিসজ্যাক বলেন, ‘এখন ক্ষমতায় যিনিই যান না কেন; তাকে অন্তঃবর্তীকালীন হিসেবে ক্ষমতায় যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মুগাবের দল জানু-পিএফ ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ইতোমধ্যে তাদের নেতা হিসেবে এমন্যানগ্যাগওয়াকে বেছে নিয়েছে।’
‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আপাতত অন্তঃবর্তীকালীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন; যতক্ষণ না জানু-পিএফ মুগাবের বিকল্প হিসেবে কাউকে মনোনয়ন না দেয়। কিন্তু ইতোমধ্যে জানু-পিএফ দেশটির পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে পর্যন্ত এমন্যানগ্যাগওয়াকে নেতা হিসাবে মনোনীত করেছে।’
অর্থনীতির কী হবে?
প্রিটোরিয়ার এই বিশ্লেষক বলছেন, ‘নতুন নেতাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পরিচিত এবং বন্ধুভাবাপন্ন হতে হবে। দেশটি অর্থনৈতিক মন্দার কড়াল গ্রাসে রয়েছে। যদি এই মন্দা অব্যাহত থাকে; তাহলে সেনাবাহিনী এর দায়-দায়িত্ব নেবে না এবং এর ফলে আরো একটি অভ্যুত্থানের শঙ্কা দেখা দেবে।’
‘অনেক কিছু করতে হবে এবং খুব শিগগিরই।’ মুগাবের পদত্যাগ কী প্রত্যাশিত ছিল? ‘মুগাবে সম্ভবত প্রত্যাশা করেছিলেন, অভিশংসন প্রক্রিয়া সফল হবে না। অভিশংসন প্রক্রিয়া সংসদে সাংসদদের সমর্থন পেতে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল।’
‘তবে আমি মনে করি, সম্ভবত তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সংসদ সদস্যরা তার প্রতি সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে ডিগবাজি দিতে পারেন; যে কারণে তিনি মনে করেছেন তাকে বিদায় দেয়ার আগে বিদায় নেয়াই বেশি ভালো হবে।’
সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।