শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির প্রমাণ দুদকে

মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির প্রমাণ দুদকে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বিদেশি বন্ধুদের জন্য এ সম্মাননা ক্রেস্ট স্বর্ণের পরিবর্তে রুপা, তামা ও দস্তার মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। অনুসন্ধানের তিনমাস পর এমন জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম।

অনুসন্ধান শুরুর পরই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রিকুইজিশন লেটার পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র তলব করে দুদক। সংস্থাটির চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রেকর্ডপত্র পাঠায়। দুদক তার নিজস্ব মাধ্যমেও বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করে।

গত সপ্তাহ ও চলতি সপ্তাহে দুদক টেন্ডার শিডিউল, টেন্ডার কমিটির সুপারিশ, কার্যাদেশ, বিল-ভাউচার এবং যাদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাদের তালিকা হাতে পায়। দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনার পর দুদক মামলার উপাদানযোগ্য তথ্য পেয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। এ টিম কোন পর্যায়ে কীভাবে ক্রেস্টে স্বর্ণের বদলে নিম্নমানের ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে তা চিহ্নিত করতে পেরেছে।

অনুসন্ধানে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মো: বদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, অনুসন্ধান কার্যক্রম সামনে এগুচ্ছে। যে অভিযোগটি (ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতি) উঠেছে তা গুরুতর। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে দোষী বা নির্দোষ বলার সুযোগ নেই।

দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, নথিপত্র সংগ্রহ প্রায় শেষ। এখন কেবল জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে অগ্রগতিমূলত তথ্য পাওয়া গেছে।

শিগগিরই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ক্রেস্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তিনি জানান।

১৩জনকে তলব করবে দুদক:
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, ক্রেস্ট জালিয়াতির ঘটনায় দুদক প্রথম পর্যায়ে ১৩জনকে তলব করবে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে তারা হলেন: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মিজানুর রহমান, বর্তমান সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, ক্রেস্ট দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাসেম, উপ-সচিব এনামুল কাদের খান, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. বাবুল মিঞা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরীক্ষক আনিসুর রহমান, সুপারিনটেনডেন্ট আমিনুর রশিদ, নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বেগম জেসমিন আক্তার, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বেগম জাহানারা পারভীন, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান ও সাঁট মুদ্রাক্ষরিক আবুল কাসেম৷

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য গত বছরের অক্টোবরে ৫৯ বিদেশি বন্ধুকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননার এই আয়োজন ছিল সপ্তম। ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু। এরপর থেকে বিভিন্ন পর্বে বিদেশি রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবীসহ এ পর্যন্ত মোট ৩৩৮ বিদেশি বন্ধু ও সংস্থাকে সম্মাননা জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম) স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রুপার সমন্বয়ে ক্রেস্ট তৈরির কথা থাকলেও মাত্র তিন আনা (২ দশমিক ৩৬৩ গ্রাম) সোনা, রুপার বদলে ৩০ ভরি পিতলসহ তামা, দস্তার মিশ্রণে ক্রেস্টগুলো তৈরি করা হয়। ক্রেস্ট রাখার বক্স তৈরির জন্য ওক গাছের কাঠ ব্যবহারের কথা বলা হলেও তা হয়নি। বিএসটিআইর পরীক্ষায় এ জালিয়াতি ধরা পড়ে।

ক্রেস্ট সরবরাহকারী এমিকন নামের প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি ক্রেস্টে এক ভরির স্থলে ২ ভরির বেশি স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রুপার দাম দেওয়া হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়া ক্রেস্ট তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। মোট ৩৩৮টি ক্রেস্টের মধ্যে ইতিমধ্যে ২৭৮টি সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৬০টি সরবরাহ করা হয়নি।

চলতি বছরের ২জুন ক্রেস্ট জালিয়াতির এ অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম