মোঃ আতোয়ার রহমান, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতাঃ
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এক সাংবাদিককে ও তার পিতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন এর পিতা একজন প্রবীণ ব্যক্তি, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় কাল্পনিক ভাবে আসামি করে ফাঁসিয়ে দেয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। মাহফুজুর রহমান পুলিশ সুপার, কুড়িগ্রাম এবং ওসি মুনিরুল ইসলাম এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব পালনের প্রতি হস্তক্ষেপ করেছে এবং পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাংবাদিক ও তার পরিবারকে হয়রানি করছে।
জানা গেছে, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আরিফ, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শাখার সভাপতি ও দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ, ডেইলি বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রতিনিধি। সম্প্রতি ১৬ ডিসেম্বর ওসি মুনিরুল ইসলাম এর অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ও পতিত আওয়ামী সরকারের দোসররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের মামলায় গ্রেফতার না করায় এ বিষয়ে দীর্ঘ তথ্য অনুসন্ধান করায় ওসি মুনিরুল ইসলাম ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হোন এবং একপর্যায়ে সাংবাদিককে ব্যক্তিগত শত্রু হিসেবে দেখেন। এরই জের ধরে তাকে কাল্পনিক ভাবে ২ টি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় এবং ছেলেকে দেখতে থানায় গেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের দায়েরকৃত কুড়িগ্রামের আশিক হত্যা মামলায় ছেলেকে আসামি করে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করে ওসি এবং এক পর্যায়ে তার বাবাকে ঘুষের টাকার জন্য হুমকি ও বিভিন্ন চাপ দিতে থাকে, পরে তার বাবা আব্দুস ছালাম ওসি মুনিরুল ইসলামকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে। অভিযোগ উঠেছে, ওসির দাবীকৃত সম্পূর্ণ টাকা না দেওয়ায় এসপির যোগসাজশে ওসি মুনিরুল ইসলাম ষড়যন্ত্রমূলক তার পিতাকে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনতাইয়ের মামলায় আসামি করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ০৫ জানুয়ারি বিকেল আনুমানিক ৫ টার দিকে চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের বাবুর হাট এলাকার মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে হাফিজুর রহমানের নীজ বাড়িতে তার স্ত্রী সমেলা বেগমকেসহ মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৪০ হাজার টাকায় হাফিজুর রহমানের স্ত্রী সমেলা বেগমকে ছেড়ে দিতে চেয়ে চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য আসাদুল হকের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করে পুলিশ। পরে হাফিজুরের স্ত্রী সমেলা বেগমকে ছেড়ে না দিয়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাইতে থাকলে তারা ঘুষের টাকা ফেরত চায়। ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে ভ্যানে আসামি রেখে পুলিশ দৌড়ে পালিয়ে যায়। এবং ইউপি সদস্য আসাদুল হক বলেন, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন এর আগে ওসির নামে একটি নিউজ প্রকাশ করে হয়তো সেই কারনে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক আনোয়ারকে এই মামলায় আসামি করে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে সাংবাদিক আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন না। মিথ্যা মামলায় সাংবাদিক ও তার পিতাকে জেলে পাঠাইলে তার পরিবার, সহকর্মীরা ও স্হানীয়রা মানববন্ধনের আয়োজন করলে পুলিশ খবর পেয়ে তার পরিবার ও সহকর্মী সাংবাদিকদের সংবাদ প্রচার না করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে। পুলিশ আরো বলে মানববন্ধনের নিউজ প্রচার করলে সবাই কে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে।
সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আরিফ বলেন, আমি গত ১৬ ডিসেম্বর ওসি মুনিরুল ইসলাম এর অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করি এবং পতিত আওয়ামী সরকারের দোসররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার না করায় আমি সংবাদের তথ্য অনুসন্ধান করি তাই আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি আমাকে হুমকি দিয়ে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে থানায় যেতে বলে। আমি থানায় না গেলে ওই রাতেই আনুমানিক ১১ ঘটিকার দিকে ডিবি দিয়ে ভূরুঙ্গামারী বাসস্টান্ড এলাকার আল্পনা টেলিকম হতে আমাকে তুলে নিয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার সামন দিয়ে ঘুরিয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় নিয়ে গিয়ে তারা বলে তুই ওসির বিরুদ্ধে নিউজ প্রচার করিস! এই সাহস তুই কোথায় পাইলি? এবং তারা আমার কাছে আমার মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড চায় আমি পাসওয়ার্ড না বলায় তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে চর্চার করে। পরে আমি জামিনে বের হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ধারাবাহিক ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে নিউজ প্রচার করতে থাকি এরই প্রেক্ষিতে গত ০৫ জানুয়ারি সরকারি কাজে বাঁধা ও হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ওসি আমাকে কাল্পনিক ভাবে আসামি করে ফাঁসিয়ে দিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। পরের দিন সকালে আমার বাবা আমাকে দেখতে থানায় গেলে আমাকে আশিক হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করে এবং টাকা দিতে না চাইলে ওসি মুনিরুল ইসলাম টাকার জন্য আমার বাবাকে হুমকি দিতে থাকে, পরে আমার বাবা ওসি মুনিরুল ইসলামকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে। অভিযোগ উঠেছে, ওসির দাবীকৃত সম্পূর্ণ টাকা না দেওয়ায় এসপির যোগসাজশে ওসি মুনিরুল ইসলাম ষড়যন্ত্রমূলক আমার পিতাকে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনতাইয়ের ওই মামলায় কাল্পনিক ভাবে আসামি করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। “এটা সাংবাদিকদের স্বাধীনতার উপর আঘাত করা হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, “এ ধরনের কাজের জন্য শুধু আমাকে নয়, ভবিষ্যতে সকল সাংবাদিককে সতর্ক থাকতে হবে। যদি আমাদের স্বাধীনতার প্রতি আক্রমণ হয়, তাহলে গণমাধ্যম কিভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে?”
কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট আসাদুল হক এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অভিজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, “এটি শুধু একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একটি বড় আঘাত। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধরনের ঘটনা দেশের গণতন্ত্র এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ক্ষতিকর।”এছাড়া, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশ প্রশাসন যদি নিজেদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে এই ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তবে সেটি পুরো আইনি ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করবে এবং জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
পুলিশের দাবি, মামলা ২ টি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে সঠিক ঘটনা উঠে আসবে।
সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের পরিবার জানায়, “এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।” তারা কোন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত নয়। তারা এবিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে এর মধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মরত মোজাফফর হোসেন ওসি অপস্ রুম পুলিশ সুপারের কার্যালয়, একজন ওসি একজন এসপির এবং আরেক জন ওসির তদন্ত করলে তারা তাদের অভিযোগের ন্যায় বিচার পাবেন না বলে অভিযোগ তুলেছে।
এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এবং ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সুরুজ্জামান বলেন, “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা একটি ভয়ানক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ক্ষতিকর এবং সরকারকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।” এটি সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতার প্রতি আক্রমণ এবং জনগণের তথ্য অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। সরকারের উচিত, এই বিষয়টির যথাযথ তদন্ত করে দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে সাংবাদিকরা তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে এবং তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে না পড়ে।