বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মিতুকে চিনত না খুনিরা

মিতুকে চিনত না খুনিরা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার দায় স্বীকার করে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা দাবি করেছে, অর্থের বিনিময়ে তারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। তারা নিহতের প্রকৃত পরিচয় আগে জানত না। গতকাল রবিবার বিকেলে মহানগর হাকিম হারুন-অর-রশিদ দুজন আসামির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। আসামিদের মধ্যে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম গুলি করেছে মিতুকে, আর আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল ‘রেকি’ করে খুনিদের সহযোগিতা দিয়েছে। খুনের আগে তারা জানত টার্গেট একজন ‘জঙ্গি নেত্রী’, পরে জেনেছে নিহত নারী ছিলেন এসপির স্ত্রী।

সূত্র জানায়, আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার আগে আসামিরা পুলিশের কাছে মিতু হত্যার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছে। আসামিদের বক্তব্য অনুসারে, মিতুকে প্রথম ছুরিকাঘাত করে সোর্স মুছা। এরপর ছুরিকাঘাত করে নবী। মুছা একটি গুলি করলেও তাতে মৃত্যু নিশ্চিত হবে কি না সন্দেহ ছিল। তখন মিতুর মাথায় গুলি করেছে ওয়াসিম। এরপর মুছা, নবী ও ওয়াসিম মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। মুছা মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল, মাঝে বসা ছিল নবী আর সবার পেছনে ছিল ওয়াসিম। মোটরসাইকেলটি তারা বড়গ্যারেজ এলাকায় রেখে পালিয়ে যায়।

ওয়াসিম বাসায় গিয়ে টেলিভিশনের খবর দেখে এবং বুঝতে পারে যাঁকে হত্যা করা হয়েছে তিনি একজন পুলিশ সুপারের স্ত্রী। ঘটনার দিন ওয়াসিমকে তিন হাজার টাকা দিয়েছিল মুছা, বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল। এসপির স্ত্রীকে খুন করার বিষয় বুঝতে পেরে সে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। যে শার্ট পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, সেটি ফেলে দেয়। পাহাড়ে পালিয়ে থাকে এবং বন্ধ করে দেয় মোবাইল ফোন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে।

আসামিদের বর্ণনা অনুসারে, ঘটনাস্থল প্রহরা ও রেকির দায়িত্ব ছিল আনোয়ার হোসেনের। গোলপাহাড়ের দিক থেকে পুলিশের গাড়ি আসছে কি না, সেটা দেখে মোবাইল ফোনে মিস কল দেওয়ার কথা ছিল। ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে আনোয়ার হত্যাকাণ্ড দেখেছে এবং তার সামনে দিয়েই তিনজন মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামি মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আবদুল নবী। আসামি আনোয়ার হোসেনের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙামাটিয়া এলাকায়। তার বাবার নাম শামসুল আলম। তাদের দুজনের বয়স ২৮/২৯ বছর।

গতকাল রবিবার বিকেলে নগর পুলিশের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার ও জবানবন্দি প্রদানের কথা জানান। তিনি বলেন, “মামলার তদন্ত পর্যায়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। আসামির মধ্যে ওয়াসিম ‘শ্যুটার’ এবং আনোয়ার ‘রেকি’ করেছিল। হত্যাকাণ্ডে ছয় থেকে সাতজন অংশ নিয়েছে। খুনের ‘মোটিভ’ আমরা মোটামুটি অবগত। তবে তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হলে পুরোপুরি বলতে পারব। নিশ্চিত না হয়ে অনুমাননির্ভর কথা বলব না।”

সিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে অনেক কিছু পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বলব না। এটা বলা ঠিক হবে না। ঘটনার বিষয়ে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেটাকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার বলব না।’ মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে ঢাকার শ্বশুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদ নয়, আমি বলব মামলার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তদন্তে যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। সে েেত্র নজরদারির প্রয়োজন নেই।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, শনিবার বিকেলে ওয়াসিমকে নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকা এবং রাতে ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় আসামিদের চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। এতে আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাঙ্গুনিয়া থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিল ওয়াসিম। সে মূলত ভাড়াটে খুনি। একটি খুনের বিনিময়ে বাকলিয়ার আবু মুছা তাকে পাঁচ-সাত লাখ টাকা দেওয়ার লোভ দেখায়। মিতুকে একজন ‘জঙ্গিনেত্রী ও জঙ্গিদের অর্থদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করে মুছা টার্গেট চিনিয়ে দেয়।

রাজাখালী এলাকায় তারা গুলি করা প্র্যাকটিস করে। ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকেই মিতুকে খুনের চেষ্টা হয়। কয়েক দফা ব্যর্থ হয় তারা নানা কারণে। প্রতিবার এলাকা ঘুরে যাওয়ার পর খুনের নির্দেশদাতা আবু মুছা ৫০০ টাকা করে দিত। ঘটনার দিন মুছা মিতুদের বাসার কাছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সীমানাপ্রাচীরের কাছে অবস্থান নেয়। গলি থেকে ছেলে মাহিরকে নিয়ে মিতু বেরিয়ে জিইসির মোড়ের দিকে যাচ্ছে দেখেই সড়ক পার হয়ে মিতুর পিছু নেয় ওয়াসিম।

ওয়েল ফুডের দিকে আগে থেকেই মোটরসাইকেলে অপোয় ছিল মুছা। গত ৫ জুন রবিবার ভোরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দেওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার পর জিইসির মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলি ও ছুরিকাঘাতে মারা যান মাহমুদা খানম মিতু। আটটি ছুরিকাঘাত এবং গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর খুনিদের তিনজন একটি মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।

ঘটনার পর পুলিশ আবু নছর গুন্নু ও রবিন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। হাজতি বন্দি জেএমবি সদস্য বুলবুল আহমেদ ফুয়াদকে অন্য একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আরো কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সর্বশেষ দুজন আসামির জবানবন্দিতে তদন্তের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছে বলে দাবি করেন সিএমপির কর্মকর্তারা। -কালের কণ্ঠ।