স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রথম শ্রেণীর লীগ বিসিএলের প্রথম দিনটি অনেকটাই ব্যাটসম্যনদের দাপটে কেটেছে। তবে বোলাররাও লাগামছাড়া হতে দেননি ব্যাটসম্যানদের। বিকেএসপি-২ মাঠে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন খেলছে ইসলামী ব্যাংক ইস্ট জোনের বিপক্ষে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন সংগ্রহ ৩০১ রান ৯ উইকেটে হারিয়ে। সর্বোচ্চ ৭৯ রান করেন তরুণ লিটন কুমার দাস। দিনের অন্য ম্যাচে বিকেএসপি-৩ মাঠে বিসিবি নর্থ জোনের বিপক্ষে খেলছে প্রাইম ব্যাংক সাউথ জোন। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নাসির হোসেনের আফসোস ছড়ানো ৯৯ রানে ভর করে দিনশেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩১ রান সংগ্রহ করে। গতকাল ব্যাটিং করা দু’দলই আজ মাঠে নামবে আরও কিছু রান যোগ করার লক্ষ্য নিয়ে। অন্যদিকে ইনজুরি সমস্যা হওয়ায় প্রাইম ব্যাংকের হয়ে মাঠে নামেননি রুবেল হোসেন। আর ইনজুরি কাটিয়ে অনেক দিন পর প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলতে নামা মাশরাফি আউট হয়েছেন শূন্য রানে।
গতকাল বিকেএসপি-২ মাঠে টসে জিতে তামিম ইকবালের দলকে ব্যাট করতে পাঠায় ওয়ালটনের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অধিনায়কের সিদ্ধান্তে বোলাররা শুরুতেই চেপে ধরতে ব্যর্থ হন ইস্ট জোনের ব্যাটসম্যানদের। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও নাজিমুদ্দিন মরিয়া ছিলেন প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে। দু’জনের ব্যাট থেকে আসে ৬৭ রানের জুটি। তবে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যেন মরিয়া হয়ে ওঠেন নিজের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণে। নিজের হাতে বল তুলে নিয়ে প্রথম সফলতা এনে দেন দলের জন্য। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই ফিরিয়ে দেন ৩৭ রান করা প্রতিপক্ষ অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে শুরু করে ইসলামী ব্যাংকের। ছোট ভাইয়ের বিদায়ে দলের ভার নিতে মাঠে আসেন নাফিস ইকবাল। কিন্তু নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে ১৫ রানের জুটি গড়ে ২ রান তুলে হাঁটেন সাজঘরের পথে। তবে দলের হাল ধরে তরুণ মুমিনুল হক সৌরভ নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে গড়ে তোলেন ৪৪ রানের জুটি। তবে দলের জন্য ৩২ রানের অবদান রেখে মাহমুদুল্লাহর দ্বিতীয় শিকার হন মুমিনুল। তবে একাই ব্যাট হাতে লড়াই করে যেতে থাকেন নাজিমুদ্দিন। তুলে নেন লীগে তার প্রথম ফিফটি। তবে দলীয় ১৩৫ রানের সময় হাল ছাড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৩১ বলে ৫৭ রান। কিন্তু দলের এ বিপর্যয়ে তরুণ ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাসের সঙ্গে অলক কাপালী ৫৮ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় কিছুটা সামাল দেন। অলক ২৪ রানে আউট হন। এরপর লিটন জুবায়ের আহম্মেদকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ৭৭ রানের জুটি। ওয়ালটনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙতে বল হাতে এবারও সফল অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। জুবায়েরকে ৩৩ রানে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন। এরই মধ্যে লীগে প্রথম ফিফটি তুলে নেন লিটন কুমার দাস। দলীয় ২৭৬ রানের সময় ১১২ বলে ৭৯ রান করে আউট হন লিটন। লিটনের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১২টি চারের মারে। শেষ পর্যন্ত আলাউদ্দিন বাবু ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪টি, মার্শাল ২টি ও শাহদাত হোসেন ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
নাসির হোসেনের আফসোস
সাউথ জোনের অধিনায়ক আবদুর রাজ্জাক টসে জিতে ব্যাট করতে পাঠান মুশফিকুর রহীমের বিসিবি নর্থ জোনকে। অধিনায়কের এ সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রথম থেকেই প্রমাণ করতে শুরু করে তার বোলাররা। দলীয় ১ রানের সময় ওপেনার জুনায়েদকে শূন্য রানে আউট করে আঘাত করেন বিসিবির শিবিরে। তবে অরেক ওপেনার জহুরুল ইসলাম ফরহাদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই শুরু করেন। ৪১ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন এ দু’জন। কিন্তু জহুরুল ৩৩ রান করে আউট হলে এ জুটি ভাঙে। তবে ফরহাদকে সঙ্গে নিয়ে নাঈম ইসলাম হতাশ করেন সাউথের বোলারদের। তৃতীয় উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়ে আবারও দলকে এগিয়ে নিতে শুরু করেন ফরহাদ-নাঈম। এ জুটিতে নাঈম ২৪ রানের আবদান রেখে হাল ছড়েন। এরপর ব্যর্থ হন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও। তিনি সাজঘরে ফিরে যান শূন্য রানে। তবে এরই মধ্যে লীগের প্রথম ফিফটি তুলে নেন ফরহাদ। অধিনায়কের বিদায়ের পর নাসির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরারও চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭৬ রানে আউট হন ফরহাদ। তার ইনিংসটি সাজান ১৬৩ বল খেলে ১৩ চারের মারে। তবে দলকে হাতাশ করেননি নাসির হোসেন।
৭ম উইকেটে ফরহাদ রেজাকে সঙ্গে নিয়ে ১৪১ রানে জুটি গড়ে দলের স্কোর বোর্ডকে আলোকিত করে তোলেন নাসির। ১৪টি চার ও ২টি ছয়ের মারে মাত্র ৯৩ বলেই সংগ্রহ করেন ৯৯ রান। কিন্তু বিধিবাম। তখনই ঘটে বিপত্তি। দলীয় ৩০৯ রানের সময় রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন রংপুরের এ ক্রিকেটার। দিনশেষে ৭৬ রানে আপরাজিত থাকেন অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়ালটন-ইসলামী ব্যাংক (প্রথম দিন)
টস: সেন্ট্রাল জোন (ফিল্ডিং)
ইস্ট জোন: প্রথম ইনিংস ৯০.২ ওভারে ৩০১/৯ (লিটন কুমার ৭৯, নাজিমউদ্দিন ৫৭, তামিম ৩৭, মাহমুদুল্লাহ ৪/৬৭, মার্শাল আইযুব ২/৩২, শাহদাত ২/৫৪)
নর্থ জোন-সাউথ জোন: (প্রথম দিন)
টস: সাউথ জোন (ফিল্ডিং)
বিসিবি নর্থ: প্রথম ইনিংস ৯০ ওভারে ৩৩১/৮ (নাসির হোসেন ৯৯, ফরহাদ হোসেন ৭৬, ফরহাদ রেজা ৭৬* রবিউল ইসলাম শিবলু ৩/৩৫)