আশিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার: ঘাতক মায়ের হাতেই নির্মমভাবে খুন হয় শিশু আব্দুল্লাহ ও মালিহা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় টঙ্গীর আরিচপুর জামাইবাজার এলাকার সেতু ভিলা নামের আটতলা ভবনের তৃতীয় তলায় জনৈক সানোয়ার মিয়ার বাড়িতে শিশু দুটির রহস্যজনক খুন হয়। পরে, ওই ফ্লাট থেকে পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। একইসঙ্গে উদ্ধার করা হয় রক্তমাখা একটি বঁটি। কে বা কারা শিশু দুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর নিহত শিশুদের বাবা—মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মধ্যরাতে সালেহা বেগম তার দুই সন্তানকে নিজ হাতে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।
উপপুলিশ কমিশনার এন এম নাসির উদ্দিন বলেন, শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার পূর্ব আরিচপুরের রূপবানের টেক এলাকার একটি আটতলা ভবনের তৃতীয় তলায় শিশু আব্দুল্লাহ বিন (৪) ও তার বোন মালিহা আক্তারের (৬) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ফ্লাটে বসানো সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় ওই বাসায় সালেহা বেগম ছাড়া আর কেউ যাতায়াত করেননি। ঘটনার পর তিনি নিজেই পাশের বাড়ি থেকে দুই দেবরকে ডেকে আনেন। তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় সন্দেহ তৈরি হয় এবং সন্ধ্যায় শিশু দুটির বাবা মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়।
এক পর্যায়ে মধ্যরাতে সালেহা বেগম তার দুই সন্তানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। তবে এ খুনের পেছনে কী কারণ হতে পারে, তা এখনও তদন্তাধীন।
নিহত দুই শিশুর পিতা আব্দুল বাতেন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বলেও জানান, উপ—পুলিশ কমিশনার।
নিহত শিশুদের বাবা আবদুল বাতেন মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিবার নিয়ে টঙ্গীর সেতু ভিলায় ভাড়া থাকতেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সালেহা বেগম মাইগ্রেনজনিত সমস্যায় ভুগতেন। তবে মানসিক কোনো জটিলতা ছিল কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শের পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুল বাতেন মিয়া তাঁর পরিবার নিয়ে ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। তাঁদের তিন সন্তান ছিল। তবে বড় মেয়ে ওই দিন নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে সালেহা বেগম মাথাব্যথার ওষুধ খেয়ে দুই সন্তানকে ঘরে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় আব্দুল বাতেন কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। পরে বিকেলে ওই দুই সন্তানের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুরে শিশুদের বাবা, মা ও দাদি একসঙ্গে খাওয়া—দাওয়া করেন। এরপর মা ঘুমিয়ে পড়েন, দাদি উপর তলায় বেড়াতে যান, আর বাবা বাইরে চলে যান। কিছু সময় পর সালেহার চিৎকারে দাদি নিচে এসে রক্তাক্ত দুই শিশুর মর দেহ দেখতে পান। পরে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ এসে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
এদিকে মায়ের হাতে শিশু দুটি হত্যার খবর এলাকায় জানাজানি হলে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান এলাকাবাসী।