সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মানবেতর জীবন বনকর্মীদের, দশ বছরে নিহত ২০

মানবেতর জীবন বনকর্মীদের, দশ বছরে নিহত ২০

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে মোট ৪ হাজার বনকর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্য নিম্নপদস্থ বনকর্মীরা মানবেতর জীবনযাপন করে থাকেন। তাদের নেই কোনো ঝুঁকি ভাতা, রেশনের সুযোগ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত দশ বছরে ২০ জন বনকর্মী নিহত হয়েছেন।

বন বিভাগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এতে দেখা গেছে, গত দশ বছরে ২০ জন বনকর্মী মারা গেছেন দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়। তাদের মধ্যে ১২ জনই ডাকাত ও বনদস্যুদের হাতে মারা গেছেন। এছাড়া বাঘের থাবায় মারা গেছেন ৪ জন, সিডরে মারা গেছেন ২ জন এবং ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন ২ জন।

বন বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, দুবলার চর, শেলার চর, কুকিলমনি, কটকা, কচিখালী, চান্দেশ্বর, সুপতি, শাপলা, চরখালী, ডুমুরিয়া ইত্যাদি দুর্গম অঞ্চলে মানবেতর জীবনযাপন করেন মাঠ পর্যায়ের বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নৌকা নেই, ট্রলার নেই, এমনকি থাকার কোনো ঘরবাড়ি নেই। ট্রলার থাকলেও জ্বালানির অভাব, পানি কিনে খেতে হয়। মাচাং ঘরে বা নৌকায় থাকতে হয়।

বাংলাদেশ বনকর্ম নির্বাহী সমিতির মহাসচিব মনিরুজ্জামান জানান, নানা কারণে গত ১০ বছরে আমরা ২০ জন বনকর্মীকে অকালে হারিয়েছি। বন রক্ষার বনকর্মীরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করলেও আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

তিনি জানান, ১৬ লাখ হেক্টর বা ৪০ লাখ একর বনভূমির বিপরীতে মাত্র ৪ হাজারের কম জনবল রয়েছে। অনেক পদ শূন্য রয়েছে। কিন্তু সরকার নিয়োগ দিতে গড়িমসি করছে।

বাংলাদেশে মোট বনভূমির পরিমাণ দেশের মোট ভূমির ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। বন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত মোট সংরক্ষিত, রক্ষিত এবং মোটিফাইড বনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সে হিসেবে মোট বনভূমির পরিমাণ ৪০ লাখ একর। এর বিপরীতে মাত্র ৪ হাজারের কম জনবল রয়েছে।

সমগ্র বাংলাদেশে ফরেস্ট রেঞ্জার পদের সংখ্যা ৪০৩টি, এর মধ্যে ৮১টি পদ শূন্য রয়েছে। ডেপুটি রেঞ্জারের পদের সংখ্যা ৪৫৫টি, যা বিলুপ্তির প্রস্তাব করা রয়েছে।

অপরদিকে ১ হাজার ৩৪৫টি ফরেস্টার পদের বিপরীতে ২১০ জন ফরেস্টারের পদ শূন্য রয়েছে। ৬০৯টি ফরেস্ট গার্ডের পদ শূন্য রয়েছে।

জনবল সমস্যার পাশাপাশি আরো নানা ধরনের সমস্যার সঙ্গে মোকাবেলা করে বন রক্ষা করতে হয় বন কর্মকর্তাদের।

সিলেট , চট্টগ্রাম, ও উপকূলীয় বন বিভাগগুলোর দূরবর্তী বিট ও রেঞ্জগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যা আরো প্রকট। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবন থেকে টেকনাফ পযর্ন্ত উপকূল বরাবর, বিভিন্ন দ্বীপে যেসব ফরেস্ট অফিস ও বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে তা এখনও নির্মাণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

কোনো রেঞ্জ কর্মকর্তা বা বিট কর্মকর্তার বাসা ভাড়া বাবদ ভাড়া কাটা হয়। এমনকি ঝুঁকি ভাতা, দূর্গম ভাতা, কর্তব্যরত অবস্থায় আহত নিহত মাঠ পর্যায়ের বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না।

বন কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা প্রসঙ্গে প্রধান বন রক্ষক ইউনুছ আলী জানান, বিগত চার বছর ধরে বন কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা ঝুলে আছে। আমরা চিঠি দিয়ে থাকি অর্থ বিভাগকে। অর্থ বিভাগ চিঠি চালাচালি করে দায়িত্ব শেষ করে। সরকারি চাকরিতে অন্য সবার ঝুঁকি ভাতা রয়েছে, কিন্তু বনকর্মীরা জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে বন রক্ষা করে চলেছেন। কিন্তু তাদের ঝুঁকি ভাতা হয়নি।