শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে যমুনা পাড়ের ঘাসি পরিবার

মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে যমুনা পাড়ের ঘাসি পরিবার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
যমুনা (বগুড়া): যমুনায় পানি বৃদ্ধি আর দফায় দফায় নদী ভাঙ্গনে বগুড়ার ধুনট উপজেলার মানুষ জীবন জীবিকা নিয়ে প্রায় দিশেহারা। শুধুমাত্র তোলা সহযোগিতায় দৈনন্দিক স্বাভাবিক জীবিকা নির্বাহ করা যায় না। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও নতুন করে ভাবতেই হয় আগামী দিনের বেঁচে থাকা নিয়ে। ঘাস বিক্রি করেই যাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। সম্প্রতি বন্যায় আবারও দিশেহারা হয়ে পড়েছে যমুনা পাড়ের হতদরিদ্র এক হাজার ঘাসি পরিবার। চরম দুর্দিন চলছে তাদের সংসারে।

উপজেলার পূর্ব সীমান্ত দিয়ে বহমান রাক্ষুসি যমুনা নদী। সেই যে কবে থেকে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, চলছে বছরের পর বছর ধরে। দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় যমুনার বিশাল চরের পতিত জমি তলিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গজানো ঘাস পঁচে গেছে। ফলে ঘাস সংগ্রহ করতে না পেরে তারা এখন বেকার হয়ে দিন গুণছে। সংসারের উপার্জনের একমাত্র পথ বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এর সঙ্গে জড়িতরা।

সরেজমিন বগুড়ার ধুনট উপজেলার বানিয়াজান, কৈয়াগাড়ী ও কালিবাড়ী ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

যমুনার ভাঙ্গনে দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলো ঘাস কেটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের সংসারের উপার্জনের একমাত্র পথ এই ঘাস। স্থানীয়ভাবে এরাই ঘাসি নামে পরিচিত।

ভুক্তভোগী ঘাসি পরিবারের কৃষকরা জানান, অব্যাহত ভাঙ্গণে রাক্ষুসী যমুনা প্রতিদিনই গ্রাস করছে নতুন নতুন এলাকা, বিলীন হয়েছে জনপদ, কমে গেছে আবাদী জমি, নিঃস্ব হয়েছে বহু গৃর্হস্থ্য পরিবার। একসময় যারা দুই চারজন মানুষ রেখে কাজ করাতো নিজের বাড়িতে, নিয়তির নির্মম পরিহাসে তারাই এখন কাজের জন্য মানুষের সহযোগিতা চাইছে। যে কারণে বদলে গেছে এসব এলাকার জীবন জীবিকার ধরণ।

বার বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এই জনপদের মানুষগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধসহ বিভিন্ন যায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। এক সময় যাদের ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, বিস্তৃত জমি। সব হারিয়ে তারাই আজ নিঃস্ব। দুই দশক আগেও বিলীন হওয়া জমিগুলো যমুনার পূর্ব পাশে জেগে ওঠছে। প্রতিবছর বন্যায় এই বিশাল চর জেগে উঠলেও এখনও কোন ফসল চাষ করার উপযোগী হয়নি সেগুলোতে। তবে চরের সেসব পতিত জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো সেই ঘাস দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে আসছে এ অঞ্চলের প্রায় এক হাজার পরিবার।

সংশ্লিষ্ট ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হযরত আলী বাংলানিউজকে জানান, জীবানুমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা চরের ঘাস গরু মহিষের জন্য উৎকৃষ্ট মানের খাবার। পরিবারের পুরুষেরা সকালে চরে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত ঘাস কেটে বাড়ি ফিরে আসেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে প্রতিদিন ঘাস বিক্রির হাটে বসে। এলাকার গরু মহিষ পালনকারীরা ঘাসিদের কাছ থেকে ঘাস কিনে নেন।

যমুনা পাড়ের ঘাসি মোবারক আলী জানান, দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকার ঘাস বিক্রি করা যায়। তার পরিবারে ৪ জন সদস্য রয়েছে। ঘাস বিক্রির টাকায় চলে তার সংসার। বিগত সাতবছর ধরে তিনি ঘাস বিক্রির টাকা দিয়ে চলছে তার সংসার। এখন চরে পানি থৈ থৈ করছে। ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সংসারের উপার্জনের পথে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল জানান, বন্যায় দীর্ঘ সময় ধরে চর এলাকা তলিয়ে থাকায় নতুন করে এখনও ঘাস জন্মায়নি। এ কারনে ঘাসি পরিবারগুলো বেকার হয়ে পড়েছে। পুঁজির অভাবে হুট করে তারা পেশা পরিবর্তনও করতে পারছেনা। তাছাড়া বন্যার কারণে এলাকায় এখন কৃষিকাজও নেই। তাই ঘাসিদেরকে দিয়ে দিনমজুরের কাজও করানো সম্ভব হচ্ছেনা। এক কথায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম