শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > মাদক অস্ত্র জালনোটে মাথাব্যথা বাড়ছে ভারত-বাংলাদেশের

মাদক অস্ত্র জালনোটে মাথাব্যথা বাড়ছে ভারত-বাংলাদেশের

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকছে ভারতীয় জাল রুপি। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে বানের জলের মত ঢুকছে মাদক ও ক্ষুদ্র অস্ত্র। আবার জাল নোট দিয়েই মেটানো হচ্ছে চোরাচালানকৃত অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। এ সব কছিুই যেন এক সুতোয় গাঁথা। তাই বাংলাদেশ ও ভারতীয় পুলিশ যৌথভাবে এসব সমস্যা মোকাবেলার জন্য একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

সম্প্রতি শেষ হওয়া বাংলাদেশ পুলিশ ও ভারতীয় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী টাস্কফোর্সের বৈঠকে দুই পক্ষই এ নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিনিময় করেছে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত।

দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ আটককৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছে, ভারত থেকে তারা এসব অস্ত্র নিয়ে আসে। বিভিন্ন কৌশলে এসব অস্ত্র তারা রাজধানীতে আনছে। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি তাদেরকে ক্ষুদ্র অস্ত্রের অর্ডার দেয়। তাদের মত এরকম আরো অনেকেই ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে এসে চড়া দামে সেগুলো বিক্রি করছে বলে জানায় তারা। মাদক ব্যবসায়ী ও এলাকাকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোও এসব ক্ষুদ্র অস্ত্রের অন্যতম ক্রেতা। এছাড়া কিছু অস্ত্র তারা ভাড়াও খাটায় বলে স্বীকার করে। সাধারণত ছিনতাইকারীরাই বেশী অস্ত্র ভাড়া নেয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বাড্ডায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়। এতে ৩ জন নিহত হয়।

গোয়েন্দা একটি সূত্র জানায়, সহজলভ্য হওয়ায় অপরাধীরা সহজেই এসব অস্ত্র হাতে পাচ্ছে। এমনকি ভাড়া ভিত্তিতেও তারা অস্ত্র সংগ্রহ করছে। মাত্র ৫/৬ হাজার টাকায় তারা দৈনিক ভিত্তিতে এসব অস্ত্র ভাড়া নিচ্ছে। এসব অস্ত্রের মাসিক ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। প্রতিটি গুলি বিক্রি হচ্ছে ৮’শ থেকে এক হাজার টাকায়। গ্রেপ্তারকৃত অস্ত্রধারীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা গোয়েন্দাদের এসব তথ্য জানায়।

ভারতে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত ভারতীয় ক্ষুদ্র অস্ত্রের অন্যতম কারবারি বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা।

জানা যায়, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের গ্রেপ্তার করা হলেও এসব অস্ত্রের মূল হোতাদের কখনোই সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। বেশ কয়েকটি হাত ঘুরে এসব অস্ত্র পৌঁছে যায় সন্ত্রাসীদের হাতে। গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে এক পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়। কারণ এরপর আর কোনো ক্লু পাওয়া যায় না বলে জানান তারা। তাই সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অবৈধ অস্ত্রের মূল হোতারা।

বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্রগুলোর অধিকাংশই ইটালি, ব্রাজিল ও ইউএসএ-র তৈরি রিভলবার ও পিস্তল বলে জানা যায়।

অস্ত্র ছাড়াও ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশের অভিযোগটিও বহু পুরনো। প্রতি মাসেই বিজিবি কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় মাদক দ্রব্য আটক করছে। গত জুলাই মাসে প্রায় ৬০ কোটি টাকার মাদক ও চোরাচালান পণ্য উদ্ধার করে বিজিবি। উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে ছিল প্রায় দুই লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট প্রায় ৫০ হাজার বোতল ফেনসিডিল সিরাপ, সাড়ে ৬শ কেজি গাঁজা, ২৪ হাজার বোতল মদ এবং প্রায় ৮ হাজার নেশাজাতীয় ইনজেকশন।

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদশের সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতীয় জালনোট পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ৮০ লাখ ভারতীয় রুপিসহ মো. এমরান, ২ ফেব্রুয়ারি ৭০ লাখ ভারতীয় জাল রুপিসহ মো. আকরাম, ৩ ফেব্রুয়ারি ১ কোটি ভারতীয় জাল রুপিসহ মো. আলী এবং ৯ এপ্রিল ২ কোটি টাকার ভারতীয় জাল রুপিসহ সাজ্জাদ হোসেন (৪৯) নামে একজনকে আটক করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। তারা সবাই পাকিস্তানি নাগরিক। তবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পরও তারা কেউই কেন জাল ভারতীয় রুপি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল সে বিষয়ে মুখ খুলেনি।

গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ পুলিশ এবং ভারতীয় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) মধ্যে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী টাস্কফোর্সের বৈঠকে জাল রুপি পাচার নিয়ে ভারত তাদের উৎকন্ঠার কথা জানায় বাংলাদেশকে। জাল টাকার বিস্তার রোধে উভয় পক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে একটি মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (সমঝোতা স্মারক) তেরি করে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা মাদক ও অস্ত্রের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ভারতকে তাদের উদ্বেগের কথা জানায়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় সীমান্তবর্তী বিভিন্ন স্থানে ফেনসিডিল সিরাপের কারখাখান তালিকা অনেক আগেই ভারতকে আমরা হস্তান্তর করেছি। আশার কথা হচ্ছে ভারত সরকার সেইসব কারখানাগুলোর অধিকাংশ ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই দেশে এখন ফেনসিডিলের ব্যবহার কমে এসেছে। তারপরও বিভিন্ন ধরনের মাদক প্রতিদিনই ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। শুধু মাদকই নয় অস্ত্রও আসছে ভারত সীমান্ত দিয়ে। এসব বিষয়গুলো আমরা এনআইকে জানিয়েছি।’

তিনি জানান, জাল নোটের ব্যবহার হয় অবৈধ কাজে। বিশেষ করে অস্ত্র, মাদক ও চোরাচালানকৃত বিভিন্ন পণ্যের দাম মেটাতে জাল নোটের ব্যবহার হচ্ছে। তাই উপমহাদেশ থেকে জাল নোটের বিস্তার রোধে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে কাজ করারর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।