বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মাথা নিচু করে ‘পকেট ফটক’ দিয়ে ঢুকতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ১৭ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে নতুন নাটকের জন্ম দিলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে যাকে এরইমধ্যে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় সদস্যপদ হারাতে হয়েছে।
ধর্মীয় উসকানির অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরার এক দিন পর মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন টাঙ্গাইলের এই সংসদ সদস্য।
এরপর তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক আতিকুর রহমান লতিফকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর আইনজীবীদের জুতা হাতে মিছিলের মধ্যেই পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান সাবেক এই মন্ত্রীকে নিয়ে আদালতপাড়া থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে কারাগারের মূল ফটকের সামনে এসে বেঁকে বসেন লতিফ।
টাঙ্গাইলে প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের বড় ভাই লতিফ উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাফ জানিয়ে দেন, তাকে ভেতরে নিতে হলে কারাগারের মূল ফটক খুলতে হবে।
“আমি এখনো এমপি। গত ৩০ বছর আমি পকেট গেইট দিয়ে ইন বা আউট হইনি।”
কারা কর্মকর্তারা জানান, ইস্পাতের তৈরি মূল ফটকের গায়ে লাগোয়া ছোট আকারের ‘পকেট ফটক’ দিয়েই তারা আসামি ও কয়েদিদের আনা নেওয়া করেন। প্রিজন ভ্যান ও গাড়ি ঢোকানোর দরকার হলে অথবা বিশেষ প্রয়োজনে মূল ফটক খোলা হয়।
পুলিশ সদস্য ও কারা কর্মকর্তারা বিষয়টি লতিফ সিদ্দিকীকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এদিকে আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানের পিছু নিয়ে আসা সংবাদকর্মীরা এ সময় লতিফ সিদ্দিকীর নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সাবেক সদস্যের দিকে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন তারা।
‘স্যার, আদালতের আদেশে আপনি কি সন্তুষ্ট?’
‘স্যার, আপনি আইনজীবীর সহায়তা নিলেন না কেন? জামিন আবেদন করলেন না কেন?
‘স্যার শুধু একটি কথা বলেন, আপনি কি আদেশে সন্তুষ্ট?’
সাদা জুতা, কালো প্যান্ট ও সাদা চেক শার্ট পরিহিত লতিফ এ সময় কেবল মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দেন, তিনি কিছুই বলবেন না।
বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রায় সব হারিয়ে কারাগারে আসতে হলেও তেমন কোনো উদ্বেগ বা শঙ্কা এ সময় তার চেহারায় ছিল না।
মরিয়া সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে লতিফকে দূরে রাখতে এ সময় তাকে ঘিরে চক্র তৈরি করেন উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা।
তারা বোঝানোর চেষ্টা করেন, এতো সংবাদকর্মীর এই ভিড়ের সামনে মূল ফটক খুলতে গেলে সামলানো কঠিন হবে। বরং তিনি দয়া করে পকেট ফটক দিয়ে ভেতরে গেলে অনেক ঝামেলাই এড়ানো সম্ভব।
কিন্তু টাঙ্গাইলের সাংসদ লতিফ তার অবস্থানে অনড় থাকেন, কারা ফটকে উত্তেজনাও বাড়তে থাকে।
লালবাগ পুলিশের সহকারী কমিশনার ফয়েজ আহমেদ, কোতোয়ালির ওসি আবুল হাসান, চকবাজারের ওসি আজিজুল হকসহ উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা এ সময় লতিফকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। লতিফকেও তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
এরপর এক পর্যায়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ফরমান আলী বাইরে আসেন এবং ৩টা ৪২ মিনিটে প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হয়। ফরমান আলীর সঙ্গেই ভেতরে প্রবেশ করেন গত দুই মাস ধরে আলোচনায় থাকা লতিফ সিদ্দিকী।
পরে এক প্রশ্নের জবাবে ফরমান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোন ফটক দিয়ে কে কারাগারে ঢুকতে বা বের হতে পারবে, সে বিষয়ে তারা সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করেন। কারাধ্যক্ষ বা জেলার চাইলে মূল ফটক খুলে ঢুকতে বা বের হতে পারেন।
লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর কারণ জানতে চাইলে জেল সুপার বলেন, “আমি ঢুকেছি, উনি আমার সঙ্গেই ঢুকেছেন। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।”