বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
পুলিশ অপরাধ বৃত্তেই বন্দি থেকে যাচ্ছে। এমনকি সহকর্মী মহিলা পুলিশ সদস্যরাও কিছু পুরুষ পুলিশ সদস্যের লালসা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। পদস্থ কর্মকর্তারা নিপীড়ন চালাচ্ছেন অধস্থন নারী পুলিশদের।সম্প্রতি ঢাকা জেলার পুলিশের রিজার্ভ অফিসার (আরও) আবুল কাশেমের ক্ষেত্রেও এমনই একটি ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলার পুলিশ সদস্যদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তার। অথচ এই সুযোগের অপব্যবহার করেই আবুল কাশেম সহকর্মী তিন নারী পুলিশের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। এ নিয়ে নারী পুলিশের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, ঢাকা জেলার রিজার্ভ পুলিশ অফিসার আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক নারী পুলিশ অফিসিয়াল কাজে তার কাছে গেলে সে কাজ করে দেওয়ার কথা বলে কুপ্রস্তাব দেয়। এতে ওই নারী পুলিশ তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিন্তার ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি গড়ায় ঢাকা জেলার উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে।
এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরো দুই নারী পুলিশ অনৈতিক কাজের অভিযোগ আনে। এ ঘটনার পর পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে মিজানুর রহমান বলেন, তিন নারী পুলিশের অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার রিজার্ভ অফিসার আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে ডিআইজি ঢাকা বরাবর পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আবুল কাশেমকে প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন নারী পুলিশের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আবুল কাশেমের মত এমন অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই রয়েছেন যারা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ন। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। আর নারী পুলিশ সদস্যরা স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
শুধু আবুল কাশেমই নন, প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পুলিশ নানা ধরণের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখানে দেখা যায়, প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার পুলিশ সদস্য বিভিন্ন অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হচ্ছেন। যাদের মধ্যে পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে সাধারণ কনস্টেবল পর্যন্ত রয়েছেন। তবে শাস্তির ক্ষেত্রে কেবল কনস্টেবলদের ‘বলির পাঠা’ করে পার পেয়ে যান অপরাধে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা। পদস্থ দোষী পুলিশ সদস্যরা রাজনৈতিক ও আর্থিক শক্তি প্রয়োগ করে পার পেয়ে যান।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতরে লক্ষাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পদস্থ কর্মকর্তাদের ভয়ঙ্কর অপরাধের ঘটনা ধামাচাপা থেকে যায়। অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ, তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী পুলিশ এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাও পুলিশ। ফলে অধিকাংশ ঘটনা আড়াল থেকে যায়। আবার বাদীপক্ষকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা উঠিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।
পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেল সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে পুলিশের অপরাধ প্রবণতা অন্তত কয়েক গুন বেড়েছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি হয়েছে ১৩ হাজার ৭৪৫ জন পুলিশ সদস্যর। এর আগের বছর ২০১০ সালে সারা দেশে মাঠপর্যায়ে প্রায় ১১ হাজার পুলিশের শাস্তি হয়েছে। এসব শাস্তি ভোগকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কনেস্টবল থেকে এসপিরাও রয়েছেন। শাস্তির মধ্যে রয়েছে চাকরিচ্যুতি, বরখাস্ত, পদাবনতি, ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ব্যবস্থা।
সিকিউরিটি সেলের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭শ ৪৫ জন পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন দন্ডে দন্ডিত করা হয়। এর মধ্যে কনেস্টবল থেকে এসআই ১৩ হাজার ৭১১ জন, ইন্সেপেক্টর ২৩ জন, এসপি ৭ জন, অতিরিক্ত এসপি ১ জন এবং এসপি ৩ জন। এর মধ্যে মাত্র ৩ জন ইন্সেপেক্টরকে গুরুদ- ও একজনকে বাধ্যতামূলক অবসারে পাঠানো হয়েছে।
এসপি, অতিরিক্ত এসপি ও এএসপিদের দেয়া হয়ে লঘুদণ্ড। অবশ্য কসেন্টবল থেকে এসআইদের লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে ১২ হাজার ৯৭২ জন, গুরুদ- ৬১২ জন, চাকুরিচ্যুতি ৯০ জন, বাধ্যতামূলক অবসর ৩৭ জন।
পুলিশী অপরাধ প্রবণতা সর্ম্পকে পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, দেশের বিভিন্ন সেক্টরের মত পুলিশেও সাধারণ মানুষকেই নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন পরিবার থেকে তারা নিয়োগ পান। তাদের অপরাধের জন্য তারাই দায়ী। এর পাশাপাশি তাদের আর্থিক লোভ-লালসা দায়ী। অনেক যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সূত্র: শীর্ষ নিউজ ডটকম।
শুধু পুলিশ নয়, যারা দুর্নীতি করছে, তারা প্রতিটা ক্ষেত্রেই দুর্নীতি করবে। তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিকও দুর্নীতি করছে। অনেকে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন তৈরি করে টাকা আদায় করছে। সব ক্ষেত্রেই যারা অপরাধ করছে, তাদের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা খারাপ পরিবেশে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।