বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ষোলআনা সাফল্য’র লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার জায়গায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসকে বসানোর চার মাস পার হলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যের চার আনাও অর্জন করতে পারেনি নতুন কমিটি। এ নিয়ে মহাটেনশনে আছে বিএনপির হাইকমান্ড।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংগঠন গোছানো ও ঢাকা মহানগরে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে ১৮ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবীব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে নতুন কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা মহানগরের কর্মকাণ্ডকে আরো গতিশীল করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালামকে নতুন কমিটির উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে। সিনিয়র সদস্য বানানো হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান ও বরকতউল্লাহ বুলুর মতো হাইপ্রোফাইল নেতাদের।
সূত্র জানায়, এতসব রথী মহারথীদের দিয়ে মহানগর কমিটি করার পরও কাঙ্খিত লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেনি বিএনপি। আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও বিচারপতিদের অভিশংসনের প্রতিবাদে ডাকা হরতালে মহানগরের পারফরমেন্সে হতাশ হন বিএনপির হাইকমান্ড।
সর্বশেষ ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৮ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও করতে পারেনি ঢাকা মহানগর বিএনপি। বিগত কয়েক দশকের মধ্যেই এবারই প্রথম বিপ্লব ও সংহতি দিবসের অনুষ্ঠান করতে ব্যর্থ হলো তারা।
সূত্রমতে, এ বিষয়গুলো নিয়ে যারপরনাই হতাশ খালেদা জিয়া ১৩ নভেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গেলেও মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকে সে সুযোগ দেননি তিনি।
জানা গেছে, কর্মসূচি পালনে ব্যর্থতার পাশাপাশি সংগঠন গোছানোর কাজেও এখন পর্যন্ত চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে আব্বাস-সোহেল কমিটি। কমিটি ঘোষণার এক মাসের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশ থাকলেও চার মাসেও কিছু করতে পারেননি তারা। বরং কমিটি করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, মহানগরের উত্তারাংশ অর্থাৎ ঢাকা ১৮ নং আসনের কমিটি গঠনের ভার পড়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়ের ওপর। নিজের পছন্দ মতো কয়েকটি কমিটিও চূড়ান্ত করেন দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। সর্বশেষ তুরাগ থানার কমিটি গঠন নিয়ে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
তুরাগ থানার কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজের পছন্দ মতো লোক দিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কমিটি গঠন করায় তা স্থগিত করে দেন মির্জা আব্বাস। এ নিয়ে আব্বাসের সঙ্গে তিক্ততার সৃষ্টি হয় তার।
তবে বুধবার বাংলানিউজকে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, মির্জা আব্বাসের সঙ্গে আমার কোনো ঝামেলা নেই। তুরাগ থানায় যে কমিটি করেছিলাম তা নিয়ে কয়েকজন আপত্তি তোলায় ওটা ওভাবেই আছে। আব্বাসের সঙ্গে বসে কয়েক দিনের মধ্যেই ওটি ঠিক করে ফেলবো।
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ৭টি থানা ও ৫৭ টি ওয়ার্ড আমার দায়িত্বে ছিলো। এর মধ্যে ২৭টির কাজ আমি সেরে ফেলেছি। বাকিগুলোর কাজ চলছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির একটি সূত্রমতে, কমিটি গঠন নিয়ে কোনো অভাব-অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে এসে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না থানা ও ওয়ার্ডের নেতারা। সাবেক কাউন্সিলর ইউনুস মৃধা, যুবদল নেতা রফিকুল আলম মজনু এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রশিদ হাবীবকে ডিঙ্গিয়ে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ খুব কম নেতা-কর্মীই পান। এই তিন জনই মূলত মির্জা আব্বাসকে সব সময় কর্ডন করে রাখেন।
তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। অন্যদিকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তা রিসিভ করেননি সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম