শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মহাজোটে টানাপড়েন

মহাজোটে টানাপড়েন

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বদলীয় সরকার গঠন নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। নির্বাচনকালীন এই সরকারে জাতীয় পার্টির যোগদান এখনও নিশ্চিত হয়নি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ আগ্রহ দেখাননি। এ দুটি ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পবিত্র ওমরাহ হজ পালনের পর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তুতি রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।সর্বদলীয় সরকার নিয়ে মহাজোটে টানাপড়েন

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী মঙ্গলবার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ নভেম্বর পবিত্র ওমরাহ হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাবেন; ফিরবেন ২৪ নভেম্বর। এরপর তিনি সর্বদলীয় সরকার গঠন করবেন।তবে এর আগেও সর্বদলীয় সরকার গঠনের বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজন হলে পবিত্র ওমরাহ হজে যাওয়ার আগেও সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে ২০ নভেম্বর সর্বদলীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন।

এদিকে, আজ-কালের মধ্যেই সর্বদলীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। এই সরকারে সম্পৃক্ত হবেন এমন দু’জন নেতা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে দ্রুতই সর্বদলীয় সরকার গঠন করার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তাদের পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে যাদের সর্বদলীয় সরকারে রাখা হবে, তাদের শপথ নেওয়ার দরকার নেই।আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা বলেছেন, সর্বদলীয় সরকারে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রাধান্য থাকবে। এর মধ্যে যাদের সর্বদলীয় সরকারে রাখা হবে, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যাদের সর্বদলীয় সরকারে রাখা হবে, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।

সর্বদলীয় সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ভেতরে কিছুটা টানাপড়েন চলছে। জাতীয় পার্টি সর্বদলীয় সরকারে আসছে না বলেই নেতাদের ধারণা। সে সঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদও এ সরকারে সম্পৃক্ত হবেন না বলে জানিয়ে দেওয়ায় অনেকে হতাশ হয়েছেন।এ অবস্থায় সর্বদলীয় সরকারে কারা থাকছেনথ এ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের প্রধান দুই শরিক রাজনৈতিক

দল জাসদ (ইনু) ও ওয়ার্কার্স পার্টি এ সরকারে থাকার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছে।

সর্বদলীয় সরকারে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে চুপচাপ আছে জাতীয় পার্টি। এতে বিব্রত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের ভাষায়, জাতীয় পার্টি নির্বাচন এবং সর্বদলীয় সরকারে না এলে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ কিছুটা বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তবে শেষতক জাতীয় পার্টি তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরে আসবে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশ্বাস।জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সর্বদলীয় সরকারে সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এখন পর্যন্ত নির্বাচনে না যাওয়ার কথাই ভাবছেন বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। আর নির্বাচনে না গেলে সর্বদলীয় সরকারেও থাকবে না জাতীয় পার্টি।

বর্তমানে জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা। তারা এইচ এম এরশাদকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এরশাদ কিছুই বলছেন না। ৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসার পর থেকে তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না। গণমাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে তার বক্তব্য প্রচার হলেও তিনি শুধুই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে। তবে এইচ এম এরশাদ ইতিমধ্যে গণভবনে আরেক দফা বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি বলে জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন। এ নিয়ে পার্টির ভেতরে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। দলের একটি অংশ এরশাদের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হলেও বড় অংশটি এর বিরোধিতা করছে। পার্টির ভেতরের দু’পক্ষই এরশাদকে নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছে।জাতীয় পার্টির একটি অংশ মহাজোট ছেড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। এ অংশটি সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিতে আগ্রহী। আরেকটি অংশ বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে যেতে চাইছে না। এ অবস্থায় দু’পক্ষকেই সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন এইচ এম এরশাদ।

এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ছাড়াও সর্বদলীয় সরকার গঠনের বেলায় নতুন সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগ। সোমবার খাগড়াছড়ি সফরে যাওয়ার সময় সর্বদলীয় সরকারে থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ।খাগড়াছড়ি সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকারে থাকার জন্য তোফায়েল আহমেদকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তাতে সম্মত হননি তোফায়েল আহমেদ। তিনি হাত জোড় করে বিনয়ের সঙ্গে তাকে সর্বদলীয় সরকারে না রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, তিনি মন্ত্রী হতে চাননি। এবার তিনি সর্বদলীয় সরকারের সদস্য হতে চান না। তিনি সব সময় দল ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন এবং থাকবেন। দলীয় সভাপতির সব নির্দেশ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবেন। দুঃসময় কিংবা চরম সংকট যা-ই আসুক না কেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন।এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।জানা গেছে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু সর্বদলীয় সরকারে থাকছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তিনি সর্বদলীয় সরকারে থাকবেন। জাসদ (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনুও এ সরকারে সম্পৃক্ত হবেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।

বর্তমান মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যদের অনেকেই সর্বদলীয় সরকারে থাকবেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সরকারের পরিধি ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যেই সীমিত থাকবে বলে জানা গেছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদের প্রতিনিধিও থাকবে সর্বদলীয় সরকারে। ওই সময় সর্বদলীয় সরকারের কাঠামো বাড়বে।বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে যাদের সর্বদলীয় সরকারে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তারা হচ্ছেনথ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীরউত্তম, শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক।