স্টাফ রিপোর্টার ॥
১৯৪২ সাল থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলে আসছে। ১৯৭৮, ১৯৯১ ও ১৯৯৮ সালে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।
এ ছাড়া বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ অধিকারবঞ্চিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্টে ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার অজুহাত তুলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা ভয়াবহ অত্যাচার শুরু করে। ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়ার পাশাপাশি চলে হত্যা ও ধর্ষণ। এ কারণে বাধ্য হয়েই দলে-দলে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করতে থাকে বাংলাদেশে । গত এক মাসেই প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।
নাগরিকত্ব ছাড়া মিয়ানমারে ফিরতে চান না অধিকাংশ রোহিঙ্গা। তারা জানান, মিয়ানমার সেনা ও উগ্র বৌদ্ধদের এমন ভয়াবহ নির্মমতার পর আর সেখানে ফিরে যাওয়াটা কোনোভাবেই নিরাপদ হবে না।
যদি মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান করে ফিরিয়ে নেয়, শিক্ষা, চিকিৎসা বাসস্থানসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয় তবেই তারা সে দেশে ফিরে যাবে। নয়তো বাংলাদেশেই তারা মরবে, তারপরও ফিরে যাবে না।
তারা বলছেন, ‘নাগরিকত্ব না থাকায় আমরা শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদের ‘অশিক্ষিত’ ও ‘অন্ধ’ করে রাখা হয়েছে যুগের পর যুগ। আমাদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিছু মাদ্রাসা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালের পর থেকে তাও বন্ধ রয়েছে। আমাদের যেতে দেয়া হয় না শহরে কিংবা নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে। চাষবাস আর পশু পালনই আমাদের একমাত্র জীবিকা।
অবস্থা এমন যে, আমাদের অনেকে যন্ত্রচালিত যানবাহন বা গাড়ি দেখেনি। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অনেককে যন্ত্রচালিত গাড়ি দেখে ভয় পেতে দেখা গেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ কী জিনিস রোহিঙ্গারা জানে না। বিয়ের বয়স নিয়েও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ১০-১২ বছরের মেয়েরও বিয়ে হয়ে যায়। কিশোরীরা মা হচ্ছে প্রতিবছরই।’
কতিপয় রোহিঙ্গা মুসলিম ‘বিদ্রোহীর’ সন্ত্রাসের অজুহাতে রাখাইন রাজ্যের সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সেনারা নিদারুণ জুলুম চালালেও বাস্তবতা হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা এসবের কিছুই জানেন না।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউ এন এইচ সি আরের) হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি দু দিন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করেছেন।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর ) ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার জন্য মিয়ানমার দায়ী। তাদেরই এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে। শুধু ফিরিয়ে নিলেই হবে না রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
নির্যাতনের মুখে ১৯৭৮ এবং ১৯৯১ সালেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু পরিবেশ ঠিক হওয়ায় পর আবারও ফিরে গিয়েছিলেন তারা। এবারও ফিরতে চান তারা। তবে রাখাইনে বৌদ্ধ বা মগরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় সেসব সুযোগ-সুবিধা পেলেই ফিরে যাবেন রোহিঙ্গারা।