শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মন্ত্রী-এমপিদের বিধিলঙ্ঘন ঠেকাতে না পেরে ক্ষুদ্ধ ইসি

মন্ত্রী-এমপিদের বিধিলঙ্ঘন ঠেকাতে না পেরে ক্ষুদ্ধ ইসি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: পৌরসভা নির্বাচনে মন্ত্রী-সাংসদদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন। যদিও এ বিষয়ে ইসি থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশ না দিয়ে ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে দায় সেরেছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুগ্ম-সচিব জানান, মন্ত্রী-সাংসদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সরাসরি ইসি থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় রিটার্নং কর্মকর্তারাও চুপচাপ থেকে গা বাঁচাচ্ছেন। কারণ তারা মনে করছে কমিশন নিরব। তাই গত ৫ দিনে আচরণবিধি কেমন পালন হচ্ছে তার কোনো প্রতিবেদন পাঠায়নি তারা। মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট আছে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে পার পেয়ে যাচ্ছে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীরা।

আচরণবিধি মনিটরিং কমিটির প্রধান রকীব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘অন্তত আট থেকে ১০ এলাকায় মন্ত্রী এমপিদের উপস্থিতির কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা সিইসির কাছে এ সংক্রান্ত ফাইল তুলেছি। এছাড়া গণমাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সংবাদ দেখে সিইসি ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তবে এই মুর্হুর্তে প্রতিবেদন চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’

ইসি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত নির্বাচনের প্রায় অর্ধশতকের মতো বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ইসিকে জানানোর জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছি, কিন্তু তারা এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি।

এ বিষয়ে একজন কমিশনার বলেন, ‘ব্যাপক হারে বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অনেকেই আমাদের কথা যথাযথভাবে আমলে নিচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় আছি। সেখানে তাদেরকে কঠোর নির্দেশনা দেবো এবং তাদের সমালোচনাও করবো।’

এ ইসি কর্মকর্তা বলেন, ‘আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সিইসিসহ সবাই ক্ষুদ্ধ। প্রচারণা শুরুর পর থেকে ক্ষমতাসীনদের প্রভাবের কারণে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ নির্বিকার। মাঠ কর্মকর্তারা ইসি উপর বিষয়টি ঠেলে দিচ্ছেন। ইসি মাঠ কর্মকর্তাদের উপর চাপ দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইসি ও মাঠ কর্মকর্তারা সরাসরি মুখোমুখি হবে শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে। সেখানেই কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভ ঝাড়বে কমিশন।’

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘কোনো অভিযোগই হালকাভাবে নিচ্ছে না ইসি। সব কিছু খতিয়ে দেখতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সব ক্ষমতাই প্রদান করা হয়েছে। তারা বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে পারে না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবো। সেই সঙ্গে আবার কঠোর নির্দেশনাও দেবো।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ইসির ভূমিকার সমালোচনা করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা জানান, নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানেই অগাধ ক্ষমতা দেয়া আছে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে ভোট করতে হলে ইসির কঠোর হওয়ার ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু কমিশন তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। আর সব অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে ছেড়ে দেয়া অনেকটা দায় এড়ানোর মতো। এটা ঠিক না। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে ভোটের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

এদিকে বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনেও নির্বাচন কমিশনার বা সচিব কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

এছাড়া, বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে বিএনপির সঙ্গে স্বয়ং ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য তার নিজ এলাকার পৌরসভা ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দল এনপিপি ও কয়েকটি পৌরসভার প্রার্থী ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান। যদিও কমিশন এ বিষয়টি এখনো পর্যন্ত উপেক্ষা করছেন।

অন্যদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। গতকাল বুধবার এ নোটিশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী। নোটিশপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ।