রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মন্ত্রী-এমপিদেরর তদবির ॥ দেশব্যাপী কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব!

মন্ত্রী-এমপিদেরর তদবির ॥ দেশব্যাপী কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের তদবিরের ফলে সমতলে ৪৬১ উপজেলায় কালভার্ট নির্মানের জন্য প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপজেলায় কালভার্ট নির্মাণের জন্য মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের চাপের কারণেই মূলত প্রকল্পের কাজের আওতা বাড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন এ-তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

‘কন্সট্রাকশন অব ব্রিজ-কালভার্ট অন দ্যা রুরাল রোডস’ শীর্ষক মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৬৯৫ কোটি টাকা। এর পরে প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত বা তৃতীয় বার প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির জন্য আবারও পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনসূত্রে জানা গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়ম অনুযায়ী তিনবারের অধিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করার কোনো সুযোগ নেই।

দ্বিতীয় সংশোধিত বা তৃতীয় বারে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে তা ১ হাজার ৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে মূল অনুমোদিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৫ দশমিক ১২ ভাগ বা ৩৯৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীরা চাপ দেওয়ার কারণে নতুন নতুন কালভার্ট ও সেতুনির্মাণ কাজ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ-কারণে প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে বলতে পারছে না অধিদফতর। এ-কারণে বার বার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে সময়ও।

‘কন্সট্রাকশন অব ব্রিজ-কালভার্ট অন দ্যা রুলাল রোডস’ প্রকল্পের উপ- প্রকল্প পরিচালক(ডিপিডি) আব্দুল মাজেদ বাংলানিউজকে জানান, মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের চাহিদার কারণে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেক সংসদ সদস্য হয়তো তার নির্বাচনী এলাকায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে একটি কালভার্ট তৈরি করে দেবেন। সেই কারণে নতুন নতুন প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানো হচ্ছে।’

তিনি আরো জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা নতুন নতুন রাস্তা তৈরি করেছেন। এর ফলে যে নতুন নতুন গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেই গ্যাপে কালভার্ট তৈরির প্রস্তাব আমাদের হাতে এসেছে।’

কোন কোন এলাকার ব্যাপারে বেশি প্রস্তাব এসেছে জানতে চাওয়া হলে জবাবে আব্দুল মাজেদ জানান, বরিশাল ও হাওর এলাকা থেকে অতিরিক্ত প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া খুলনা ও গোপালগঞ্জ এলাকা থেকেও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।’

‘প্রকল্পের আওতায় ব্যয় বৃদ্ধির আর সুযোগ নেই। তার পরও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা তদবির করলে কি করবেন?’-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় এবার আমরা তৃতীয় বারের মতো ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি। এর পরেও যদি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা আমাদের কাছে নতুন করে কালভার্ট তৈরি করার প্রস্তাব করেন তবে গ্রহণ করা হবে না। কারণ এই প্রকল্পের আওতায় সেই সুযোগ আর থাকছে না। দরকার হলে আমরা নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেবো, কালভার্ট নির্মাণের বাড়তি প্রস্তাব আর গ্রহণ করবো না।।’

প্রকল্পটি জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০১৫ মেয়াদে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর পরে ডিসেম্বর ২০১৬ সাল নাগাদ সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প এলাকা বাংলাদেশের সমতল এলাকার ৪৬১টি উপজেলা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। পরিকল্পনা কমিশনসূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই বরাদ্দকৃত অর্থ অপ্রতুল মনে করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। এর ফলে অধিদফতর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রকল্পের বরাদ্দ ৩০৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে সমতলের ৪৬১টি উপজেলায় ৪৬ হাজার ২৯৫ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর বলছে, নানা কারণে প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কালভার্ট নির্মার্ণের ক্ষেত্রে ৩২ হাজার ৬১৯ মিটারের সঙ্গে নতুন ১৩ হাজার ৬৭৬ মিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে।

স্থানীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের তদবিরের ফলে প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ১৩ হাজার ৬৭৬ মিটার কালভার্ট/সেতু নির্মাণের কাজ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।এর ফলে কালভার্ট-সেতু নির্মাণের মোট দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ২৯৫ মিটার। তাই আবারও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রতি উপজেলায় ১০ মিটার সেতু কালভার্ট নির্মাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় সংসদ ও মন্ত্রীরা মনে করেন এটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অতিরিক্ত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের টাকা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এই জন্য ১২ মিটার্ দৈর্ঘ্য ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দূরোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর মনে করে, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি’ ইমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রেগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট(ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় নির্মিত মাটির তৈরি রাস্তার গ্যাপ তৈরি হচ্ছে। যে কারণে প্রতিবছর কালভার্ট তৈরির প্রস্তাব অধিক হারে আসছে। এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্যও অতিরিক্ত সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১৯৯৩ সালে থেকে জিওবি অর্থায়নে ২০০৯ পযর্ন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ৩টি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৪ হাজার ৯৪৮টি সেতু কালভার্ট নির্মাণ করেছে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম