জেলা প্রতিনিধি, সিলেট ॥ মঞ্চের সামনে হাজারো কোমলমতি শিক্ষার্থী। সঙ্গে তাদের অভিভাবক-শিক্ষক-শিক্ষিকারা। মঞ্চভর্তি অতিথি। তিনি নিজেই প্রধান অতিথি। অথচ ধূমপান করছেন ভাবলেশহীনভাবে! তিনি সাধারণ কেউ নন স্বয়ং সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী।
সোমবার বিকেলে সিলেট বর্ডার গার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কাণ্ড করেন তিনি। এ নিয়ে মঞ্চে ও মঞ্চের সামনে উপবিষ্টরা বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। কিন্তু মন্ত্রী এসব থোড়াই কেয়ার করেন!
রীতিমতো আয়েশ করে সিগারেট টেনে মস্তিষ্কভর্তি নিকোটিন নিয়ে তিনি যখন প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে উঠলেন তখন তার কণ্ঠে ঝরলো গাদা গাদা উপদেশ। এই কোমলমতি ছেলেমেয়েরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারাই দেশকে এগিয়ে নিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে- এসব কথা উগড়ে দিলেন মন্ত্রী। কিন্তু বুঝলেন না তিনি যে আসনে বসে থেকে যে কাণ্ড করলেন তা যদি আদর্শ হয়ে যায় তাহলে সেটা কতো ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন হয়ে দেশের ঘাড়ে চেপে বসবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরো যা বললেন তা হুবহু তুলে ধরলে যা হয় তা হলো- তোমাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। অন্যথায় কখনো ভালো মানুষ হওয়া যাবে না। তোমাদের সুশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী হতে হবে। মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
এসময় অবশ্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি মন্ত্রী। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথাও তুলে ধরেছেন অত্যন্ত গর্বের সাথে।
তিনি সমাজের কল্যাণ করার ব্রত নিয়ে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর আগে হয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু জানেন না জনসমাগমস্থলে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা বললে হয়ত তাকে ছোট করা হবে কারণ, তিনি সচেতন নাগরিক বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে কল্যাণের ব্রত দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছেন। আর যদি মাননীয় মন্ত্রী জেনেশুনে এটা করে থাকেন তাহলে! এটা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। মন্ত্রীই যদি প্রকাশ্যে দেশের আইনকে বুড়োআঙ্গুল দেখান তাহলে দেশের মানুষ মুখ দেখাবে কেমন করে!
মন্ত্রী যখন বুঁদ হয়ে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন তখন তার পাশে ও সামনে বসা শিশু শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, অতিথি, বিজিবি কর্মকর্তারা।
মঞ্চে ছিলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি বিজিবি সিলেট সেক্টরের পিএসসি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. জামাল মাহমুদ সিদ্দিক। আরো ছিলেন- সিলেট রেঞ্জ পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মো. সাখাওয়াত হোসেন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, সিলেট জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আশফাক আহমদ, সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফয়জুল হক, বিজিবি-৪১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও এডভাইজার সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলম চৌধুরী।
মন্ত্রীর এই খামখেয়ালীপনা ও কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে সবাই বিরক্ত বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হলেও এটি নিয়ে কথা বলার সাহস কেউ পাননি। এই বিশাল জমায়েতের মধ্যে নিশ্চয়ই এমন কেউ ছিলেন যিনি জানেন জনসমাগমস্থলে প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ৩০০ টাকা জরিমানা হয়। সেখানে সাহস করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে সেই জরিমানা আদায় যে হতো না সেটাও নিশ্চিত। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষ এখন তাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইবে কি না সেটাই বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিনেই সাংবাদিকদের ওপর ক্ষেপে যান সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। বিএনপিকে ছাড়া সরকার গঠন করা হলো, এ সরকার কতদিন স্থায়ী হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন এ মন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেন, ‘হু ইজ বিএনপি। নির্বাচনে আসলো না কেন। দে আর মিসড প্লেন, পাবলিক উইথ মি।’