শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > ভয়ঙ্কর ফ্যাট প্রতারণা

ভয়ঙ্কর ফ্যাট প্রতারণা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নগরবাসী প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকে নিজের কেনা ফ্যাটে ওঠার। তিলে তিলে অর্জিত ও সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে নিজের জন্য এক খণ্ড নির্ভেজাল আশ্রয় খোঁজেন। মাসের পর মাস কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকা থেকে কিস্তি দিয়ে যান। অবশেষে নিজের ফ্যাট কিংবা বাড়ি বুঝে নেয়ার মাহেন্দ্রণে এসে বুঝতে পারেন তিনি ভয়ঙ্কর প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। এমনই এক প্রতারকের নাম এমএ সবুর। আর এস এস নামে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্ততপে অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। গতকাল দুপুরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তার আটকের খবর চাউর হয়। সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা কার্যালয়ের গেটে ভিড় জমতে থাকে প্রতারিত গ্রাহকদের। প্রতারিত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বরিশালের জাতীয় পার্টির এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জিটিসিএল প্রজেক্টের পরিচালক সত্য নারায়ণ সাহা, ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ রইছ, মাসুদ রানা, মঞ্জুরুল হক, এবিএম আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আনসার আলী, কাজী ফখরুল আলম, আবদুল খালেক, শফিকুল ইসলাম, আবুল বাসার, কামরুন্নাহার, জহির আহমেদ ও দিলরুবা খানমসহ দেড় শতাধিক গ্রাহক। এদের প্রত্যেকেই আরএসএ নামের রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। প্রতারিত ব্যক্তিরা ফ্যাট বরাদ্দ পেতে ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি এমএ সবুরের কাছে ১০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন। কিন্তু ফ্যাট বুঝিয়ে দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসার পর থেকেই সবুর পলাতক। তার ব্যবহৃত সকল মোবাইল ফোন বন্ধ। শুধু তাই নয়, ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জলি ও মাহবুব হোসেনও পলাতক। গতকাল দুপুরে মিন্টো রোডস্থ গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রতারিত গ্রাহক এবিএম আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, তিনি ২০১১ সালের মার্চ মাসে ১২শ’ বর্গফুটের একটি ফ্যাট বুকিং দিয়েছিলেন ১০ লাখ টাকায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাকি টাকা পরিশোধ করে ফ্যাট বুঝে নেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানের মালিককে খুঁজে পাচ্ছেন না। একই অভিযোগ করলেন ব্যবসায়ী মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ২০১১ সালে আমি ২১ লাখ টাকা দিয়েছি। এখনও ফ্যাট বুঝে পাইনি। আজ মালিকের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে ছুটে এসেছি। ভুক্তভোগী জেবুন্নাহার বলেন, শাহ আলী বাগের প্রজেক্টে আমি দু’টি ফ্যাটের জন্য ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন ওই ফ্যাট বুঝে নেয়ার সময় পার হলেও মালিককে খুঁজে পাচ্ছি না। মঞ্জুরুল হক বলেন, এমএ সবুরের মধ্য মাদারটেক এলাকার ৩২ নম্বর প্রজেক্টে একটি ফ্যাট বুকিং বাবদ ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। প্রতারিত ব্যক্তিরা জানান, ২০১০ সাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই কোম্পানি। প্রথম দিকে কয়েকজনকে ফ্যাট বুঝিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকেই সে প্রতারণা শুরু করে। ভুক্তভোগীরা জানান, ফ্যাট বরাদ্দের নামে প্রায় অর্ধ শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক গোষ্ঠী। এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অর্ধ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০১০ সালে মিরপুরের শেওড়াপাড়ার ৫৬৮ শামীম সরণিতে অফিস নেন আরএসএ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ সবুর। এছাড়া, পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তার আপন ভাই মাহবুব এবং বোন মাহমুদা আক্তার জলিকে। বর্তমানে তারাও পলাতক। ভুক্তভোগীরা জানান, মাত্র ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্যাটের চটকদার বিজ্ঞাপন দেয় এই প্রতিষ্ঠানটি। আর বিজ্ঞাপনের মোহে শ’ শ’ গ্রাহক ২৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে তারা ফ্যাট বুকিং দেন। এরই মধ্যে অনেকের ফ্যাট বুঝিয়ে দেয়ার সময় পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে। প্রতারিত গ্রাহক টিঅ্যান্ডটির ওয়্যারলেস বিভাগের প্রধান সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা টাকা দেয়ার পর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকদের নির্মাণাধীন বিল্ডিং দেখানো হয়। আমরা নির্মাণাধীন বিল্ডিংগুলো দেখে সরল মনে বিশ্বাস করে তার নিকট টাকা দেই। তিনি আরও বলেন, আমার মতোই অন্তত কয়েক শ’ গ্রাহক তাকে টাকা দেয়। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ফ্যাট বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও নানা ধরনের ছলচাতুরি করছিল। এক পর্যায়ে আমরা তার কোন হদিস পাচ্ছি না। সকালে আমরা জানতে পাই গোয়েন্দা পুলিশ এমএ সবুরকে আটক করেছে। এই আটকের খবর শুনে আমরা এখানে এসেছি। প্রতারিত আরেক গ্রাহক নাসির উদ্দীন বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা তাকে খুঁজছি। আমরা উপায়হীন হয়ে সকল প্রতারিত গ্রাহক মিলে একটি সংগঠন করেছি। এর নাম আরএসএ ফ্যাট বাইয়ার্স এসোসিয়েশন। বর্তমানে প্রতারিত গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ২০০। তিনি আরও বলেন, আমাদের সারাজীবনের সঞ্চয় ২৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে নিজেদের ফ্যাটের আশায় আমরা টাকাগুলো দিয়েছি। আর সেই টাকা দিয়েই আমরা আজ প্রতারণার শিকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারক এই সবুরের বাড়ি মেহেরপুর জেলায়। বিভিন্ন সময় নাম পাল্টিয়ে সে ফ্যাট বরাদ্দের নামে লোকজনের নিকট টাকা হাতিয়ে নেয়াই তার কাজ। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, আরএসএ রিয়াল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড নামের কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ সবুরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় জিডি হয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা করছে থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তাকে এখনও আটক করা যায় নি। তাকে আটকের জন্য আমরা কাজ করছি।