শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > ভাস্কর্যের সাথে ধর্মের কোন বৈরিতা নেই: গোলাম কুদ্দুস

ভাস্কর্যের সাথে ধর্মের কোন বৈরিতা নেই: গোলাম কুদ্দুস

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
সম্মিলিত সাংস্কৃিতক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেছেন, বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও দেশের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হলে সেটা আমরা মেনে নেব না। অসম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে আমরা সব ধরনের অপশক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকব।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আজ দেশব্যাপী এক প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃিতক জোট। এরই অংশ হিসাবে বিকেল সাড়ে চারটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকা হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে দেশের অন্যান্য জেলা শহরে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।

কর্মসূচির বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন সম্মিলিত সাংস্কৃিতক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বাংলাদেশ বিরোধী কোন কিছু মানি না। এর মানে হল আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কিছু শক্তি যারা বাংলা নববর্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছিল। একই সময়া প্রত্যক্ষ করেছি একটি বিশেষ গোষ্ঠী তারা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। তারা হুমকি দিয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা করা যাবে না।

বর্তমানের যে বাস্তবতা, সেখানে সুপ্রীম কোর্টের সামনে ভাস্কর্য সরানোর বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আবার ধর্ম ভিত্তিক জোট হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের সমঝোতার আভাসও দেখা যাচ্ছে সরকারের এ অবস্থানকে কিভাবে দেখছেন?

এর উত্তরে গোলাম কুদ্দুস বলেন, একই সাথে হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলাম মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এবং তারা বলেছেন বাংলাদেশের সকল ভাস্কর্য সরিয়ে নিতে হবে। আমরা এগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মনে করি। আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীরা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। এখনও পর্যন্ত বর্তমান সরকার ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কিছু বলেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি কথা বলেছেন সেটা হল সুপ্রীম কোর্টের সামনে যে ভাস্কর্যটি রয়েছে সেটা নিয়ে তার মতামত দিয়েছেন।

সুপ্রীম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যটি সরানোর দাবির বিষয়ে সরকার বেশ নমনীয় হয়েছে বলেই দেখা যাচ্ছে এভাবে যদি অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও ঘটতে থাকে তাহলে পদক্ষেপ কী হবে এর উত্তরে গোলাম কুদ্দুস বলেন, একটি ঘটনা দিয়ে সরকারের সামগ্রিক চরিত্র বিশ্লেষণ করা ঠিক নয় বলে আমি রাজি নই। রাজি নই এই কারণে, আমরা দেখছি এই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে, প্রথম বারের মত বাঙ্গালি সংস্কৃতির বিকাশের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

যদি অন্যান্য ক্ষেত্রে এরকম হয় তাহলে আপনাদের পদক্ষেপ কেমন হবে এর উত্তরে গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমি সবসময় বলছি আমরা ভাস্কর্যের পক্ষে। পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে সুতরাং বাংলাদেশে ভাস্কর্য থাকবে। এর সাথে ধর্মের কোন বৈরিতা নেই। ধর্মের বৈরিতা যদি থাকত সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরানসহ পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশে ভাস্কর্য থাকত না।

একটা অভিযোগ শোনা যায় অন্য সরকার যখন থাকে তখন আপনারা যতটা জোরালোভাবে প্রতিবাদ করেন কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কিছুটা ছাড় দিতে দেখা যায় এর কতটা সত্যতা রয়েছে সে বিষয়ে গোলাম কুদ্দুস বলেন, এই অভিযোগ যারা করে তারা মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করি। অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছি এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের বক্তব্য সোচ্চার রেখেছি। যারা যুদ্ধাপরাধীদের লালন করে, পৃষ্ঠপোষকতা করে, মৃক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে  তারা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বক্তব্যেকে সমালোচনা করবেন। আমাদেরকে একটি বিশেষ দলের দিকে ঠেলে দেবেন এটিই তাদের রাজনীতি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা