শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উচ্চশিখরে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন নেই কেন?

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উচ্চশিখরে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন নেই কেন?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার দাবি করলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত আমাদেরকে সমর্থন করছে না কেন? ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে সোমবার আজকের বাংলাদেশ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আসিফ নজরুল একথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে সব কথা বলেছেন খুবই মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে কথা বলেছেন। কিন্তু একটা ভাষণ কিছুক্ষণের ভাষণ বা কয়েক দিনের ভাষণ দিয়ে একটা দেশের পররাষ্ট্র সফলতা অর্জন হয় না। একজন প্রধানমন্ত্রী কি বলেন, সেটা দিয়ে পররাষ্ট্র সফলতা অর্জন হয় না, যদি হত তাহলে , বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র ভারতকে সমস্ত কিছু দিয়ে দেয়ার পরেও ভারত আজকে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে, চীন দাঁড়িয়েছে এবং রাশিয়া দাঁড়িয়েছে।

অনুষ্ঠানে এ পর্যায়ে আরেক অতিথি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী পাল্টা প্রশ্ন তুলে জানতে চান আসলে বাংলাদেশ ভারতকে কি দিয়েছে ?

জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ভারতকে বাংলাদেশ অনেক কিছু দিয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের জন্যে নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। ভারতে যতগুলো ডিপ্লোমেসি ইন্টারন্যাশনালি বিষয় রয়েছে সেখানে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের সাথে অভিন্ন নদীর যে সমস্যা ছিলো সেটাতে তারা যেভাবে চেয়েছে তারা ভাবেই সমাধান দিয়েছে। ট্রানজিট চেয়েছে, ট্রানজিট দিয়েছে। ভারতকে অনেক কিছু দিয়েছেন বললে রেগে যান কেন? এটা সত্যি কথা।

এ প্রসঙ্গে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, না ভারকে আমরা দেইনি।

আসিফ নজরুল ফের প্রশ্ন তুলে বলেন, আপনার ভারতকে কিছুই দেননি ঠিক আছে। আপনারতো সব সময় বলেন যে ভারত- বাংলাদেশ সম্পর্ক অনন্য শিখরে পৌঁছেছে। তাহলে অনন্য শিখরে পৌঁছানো বন্ধু মিয়ামারের সাথে আছে, আমাদের সাথে নাই কেন?

অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কাজটি করেছেন মানবিক দৃষ্টিকোণ অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত তোলার প্রশ্নই আসে না। তবে একটা জিনিস মূল্যায়ন করতে হবে, জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেল যখন মিডিলইস্ট থেকে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ঐ সিদ্ধান্তের সাথে ওনার রাজনৈতিক আত্মহত্যার ঝুঁকি ছিল, নির্বাচনে পরাজয়ের শঙ্কা ছিল। পরবর্তী নির্বাচনে এ্যাঙ্গেলা মার্কেল সবচেয়ে কম আসনে নির্বাচিত হয়েছেন।

অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বাদ দেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াটা যদি দেখি। আমরা যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, এটাতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন বা অন্য কোনো নেতার কোনো রাজনৈতিক ঝুঁকি নাই। রাজনৈতিক ঝুঁকি, আগামীতে নির্বাচন হবে রোহিঙ্গারা কেন দেশে আসলো বাংলাদেশের মানুষ প্রচন্ড খেঁপে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে, এই ধরণের কোনো ঝুঁকি নাই। দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, আমরা খুব সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিয়েছিম রোহিঙ্গা তোমরা আসো, তোমাদের আশ্রয় দিব। আমরা এই রাজনীতি নিয়ে করি নাই, এটা বুঝতে হবে। আমরা প্রতিক্রিয়া করেছি, রোহিঙ্গাদের ঠেলে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর আমরা আশ্রয় দিয়েছি।

অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি যেটা করেছেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসার যোগ্য। এটাকে আপনি যদি বলেন, ফেরেস্তাতুল্য কাজ, এটার সাথে পৃথিবীর কোনো কিছুর তুলনা হয় না। আপনিতো বাধ্য হয়েছেন, আপনি কি করতে পারতেন, সেটা হচ্ছে এক নাম্বার। তারপর আমি মনে করি উনি যে ব্যক্তিগতভাবে গিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের সাথে যেভাবে কথা বলেছেন অবশ্যই তা আমাদের মন ছুঁয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটা কোমল হৃদয় আছে এটা আবার প্রমাণিত হয়েছে।

অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন এখানেও প্রশ্ন তোলা যায়, প্রশ্ন তুললে মানুষের কাছে খারাপ লাগে। আপনাকে রাষ্ট্রীয় ধারণাগুলি বুঝতে হবে। যখন আপনি আপনার এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যারা বলে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ লোক অবৈধভাবে আমার দেশে এসেছে। ভারতও বলে, মিয়ানমারও বলে। ঐ রকম প্রসঙ্গে যদি আমি বলি, আমার ১৬ কোটি লোককে আমি খাওয়াতে পারি, ১০ লাখ লোককে খাওয়াতে পারবো না কেন। ‘দিস ইজ এ রং মেসেজ’। এটাতো আমাদের বলতে হবে। এটা বলা মানে কি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা। আমাদেরতো সমাধান রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে রেখে দিনের পর দিন পালা না। এটা আমরা অনন্তকাল পারবো না।

তিনি বলেন, আমাদের সমাধান হচ্ছে, রাষ্ট্রের দিক দিয়ে যদি চিন্তা করেন, এটাতো এক জনের রাষ্ট্র না, এটা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের। আমাদের যদি ভবিষ্যৎ চিন্তা করেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য যে দক্ষ কূটনীতি দরকার ছিল, সেই কূটনীতি বাংলাদেশ করতে পারে নাই। এটা শেখ হাসিনা বা খালেদার আমলের ব্যাপার না। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের বিদেশ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে মারাত্মক বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছে। এটা বিভিন্ন আমলেই দেখা গেছে। এখন আমি যদি ১০ লাখ রোহিঙ্গা নেই, ভবিষ্যতে আরো ১০ লাখ আসবে, তখন আপনি কি করবেন। আপনি মনে রাখবেন, রোহিঙ্গাকে শুধু খাবার দিলে হবে না। ওরাতো একটা সময় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা তৈরি করতে পারে। যখন একটা বড় জনগোষ্ঠীকে এভাবে রাখা হয়, তাদের মধ্যে থেকে সন্ত্রাসীর জন্ম নেয়। আমাদের সময়.কম