শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বড়পুকুরিয়া খনিতে অবিক্রিত কয়লা

বড়পুকুরিয়া খনিতে অবিক্রিত কয়লা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে লাখ লাখ টন কয়লা।

চলতি মৌসুমে দাম বাড়িয়ে আবার নতুন করে দু’দফা দাম কমানোর পরও মিলছে না কয়লার ক্রেতা। এতে খনিতে জমেছে কয়লার পাহাড়।

গত ১৫ দিনে কয়লার দাম দু’দফা কমিয়েও কয়লার ক্রেতা না থাকায় খনির ইয়ার্ডে মজুত পড়ে আছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন কয়লা। সামনের দিনে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এই কয়লার স্তুপে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

খনি কর্তৃপক্ষ গত ২০১২ সালে ইট পোড়ানো মৌসুমে কয়লার দাম প্রতিটন ১১ হাজার ১১৮ টাকা দরে ডিও পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি ইটভাটা ও বয়লার চালিত শিল্প কারখানায় মাসে একশ’ টন কয়লা বরাদ্দের সাপেক্ষে আবেদন গ্রহণ শুরু করলে কয়লা বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। প্রতি কার্যদিবসে ২০টি ভাটা ও কারখানার বিপরীতে ২ হাজার মেট্রিকটন করে কয়লা সরবরাহ করা হয়।

গত ২০১২ ডিসেম্বর মাস থেকে আবেদনের ভিত্তিতে প্রায় এক হাজার ৫শ’টি কয়লা ক্রয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইটভাটার কাপজপত্রাদি হাল নাগাদ পরীক্ষা করে কয়লা সরবরাহ করা হয়। কয়লা উৎপাদন কম থাকায় একবারের বেশি কোনো ভাটা মালিক কয়লা পাননি। ফলে বাজারে কয়লার চাহিদা প্রচুর থাকায় প্রতিটি একশ’ টনের ডিও নির্ধারিত দরের চেয়ে এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাটার কাগজ সংগ্রহ করে কয়লা ব্যবসায়ী এবং খনির কিছু অসৎ কর্মকর্তা ডিও নিয়ে তা অতিরিক্ত টাকায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা মুনাফা করেছেন। ওই সময় কয়লা উত্তোলন কয়েক মাস বন্ধ থাকায় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়ে কয়লা বিক্রি বন্ধ করে দেন।

গত বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অনুমোদিত আবেদনকারীদের ডিওর কয়লা সরবরাহ করা হয়। ওই বছরের শেষের দিকে চলতি ইট পোড়ানো মৌসুমেও খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা বিক্রি বন্ধ রাখে। এই সুযোগ নিয়ে সরকারি দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আমলাদের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিকটন কয়লা আগের দরে বিক্রি করে খনি কর্তৃপক্ষ।

চাহিদামতো কয়লা সংগ্রহ করতে না পারায় এবং কয়লা সংকটে পড়ার আশঙ্কায় ইটভাটা মালিকরা বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কাছে প্রতি একশ’ টনের ডিও কয়লার নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বেশি দিয়ে কয়লা কেনে।

খনি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় ওই সময় ভারতীয় নিম্নমানের আমদানিকৃত কয়লা কিনতে বাধ্য হন ভাটা মালিকরা। অনেকে ইন্দোনেশিয়ার থেকে আমদানি করা কয়লা কিনে ভাটার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তারা আমদানিকৃত কয়লার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

বড়পুকুরিয়ায় কয়লা বিক্রি উন্মুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়লার দাম প্রতিটনে প্রায় দেড় হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়। কয়লার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৬৫৮ টাকা। অথচ ইট পোড়ানোর ভরা মৌসুমে প্রতিটন ভারতীয় কয়লা পরিবহন খরচসহ ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায় কেনেন ভাটা মালিকরা।

বড়পুকুরিয়ার কয়লা না পাওয়ায় তারা ভারতীয় নিম্নমানের কয়লা কিনে মজুদও করেন। ফলে কমে যায় ভাটা মালিকদের কয়লার চাহিদা। এর প্রভাব পড়ে কয়লা বিক্রির ওপর।

বর্তমানে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ’ টন কয়লা বিক্রির পরেও বর্তমানে মজুদ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন বলে খনির একটি সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রটি জানান, গত ২ সপ্তাহ আগে কয়লার বিক্রি কমে যাওয়ায় খনির বোর্ড মিটিং এর দাম কমিয়ে আগের অবস্থানে আনা হয়। এতেও ক্রেতাদের সাড়া না পাওয়ায় এবং খনিতে কয়লা মজুদ বাড়তে থাকায় গত ১৫ দিনের মধ্যে আরো এক দফা দাম কমিয়ে প্রতিটন কয়লার দাম ১০ হাজার ২শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

গত অর্থ বছরে কয়লার ম্যানেজমেন্ট ও উৎপাদন খরচ যেখানে ট্যাক্সসহ প্রায় ১২৩ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৯ হাজার ৮৪০ টাকা। সেখানে বর্তমান দামে কয়লা বিক্রি করলে কোম্পানি লাভ তো দূরের কথা মুখ দেখবে না।

এছাড়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বড়পুকুরিয়া খনি সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে ৮ ডলার লোকসানে কয়লা বিক্রি করছে বলেও খনি সূত্রে জানা গেছে।

ইটভাটা মালিক ও বয়লার চালিত শিল্প কারখানায় কয়লার ব্যাপক চাহিদা থাকার পরেও খনি কর্তৃপক্ষের হঠকারী সিদ্ধান্তে বড়পুকুরিয়ার কয়লা অবিক্রিত রয়েছে বলে কয়লা ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

কয়লার বিক্রি ও দাম কমা নিয়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি মিটিং এ আছেন বলে জানান। এ বিষয়ে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানিয়ে ফোন কেটে দেন। বাংলামেইল২৪ডটকম