বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ব্রেক্সিট বিলে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষর করেন তিনি। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র জন্য এখন ইউনিয়ন ত্যাগ করার ব্যাপারে আলোচনা শুরুর পথ সুগম হলো।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের স্পিকার রানির সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (নোটিফিকেশন অব উইথড্রয়াল) বিল রাজকীয় অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ব্রেক্সিট বিল পাস করে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে এটি পাসের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়তে রানির আনুষ্ঠানিক সম্মতিই শুধু বাকি ছিল।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ক্ষণের কাছাকাছি রয়েছে যুক্তরাজ্য। এ বিষয়ে রয়্যাল এসেন্ট বা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আনুষ্ঠানিক সম্মতির প্রাক্কালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে এ বিষয়ে কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা এখনও ব্রেক্সিট সূচির মধ্যে রয়েছি। ইউরোপের সঙ্গে নতুন আঙ্গিকে সম্পর্ক শুরুর জন্য এটা হবে আমাদের পুরো দেশের জন্য একটা চূড়ান্ত মুহূর্ত। দুনিয়াজুড়ে আমাদের একটা নতুন ভূমিকা থাকবে। আমরা হবো একটা শক্তিশালী, স্বশাসিত ব্রিটেন।
থেরেসা মে বলেন, আমরা এটা দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পরও ব্রিটেন কিভাবে ইউরোপে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে থাকবে। এ সময় তিনি গত সপ্তাহে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন সামিটে নিজের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
দ্য ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (নোটিফিকেশন অব উইথড্রয়াল) নামের এই বিলটি রানির অনুমোদনের পর শিগগিরই আইনে পরিণত হবে। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে আলোচনা শুরু করতে পারবেন থেরেসা মে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষদিকে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্য গণভোট আয়োজনে তিনি স্কটিশ পার্লামেন্টের অনুমতি চাইবেন। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেক্ষিতে এই গণভোট প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি। আগামী সপ্তাহে এ অনুমোদন চাইবেন নিকোলা স্টার্জন।
রাজধানী এডিনবার্গে সরকারি বাসভবন বুটে হাউসে স্টার্জন বলেন, ‘এ প্রক্রিয়া শেষে (ব্রেক্সিট) যাতে করে স্কটল্যান্ডের সামনে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমি নেব। এতে সিদ্ধান্ত হবে, স্কটল্যান্ড ব্রেক্সিটের পক্ষে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকবে নাকি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
ফার্স্ট মিনিস্টার চান ২০১৮ সালের শেষ ও ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে এ গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। যদি স্কটল্যান্ডের সংসদ অনুমতি দেয় তাহলে স্কটিশদের স্বাধীনতার জন্য এটা হবে দ্বিতীয় গণভোট। এর আগে ২০১৪ সালে প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই গণভোটে স্কটিশরা স্বাধীনতার বিপক্ষে অব¯’ান নিয়েছিলেন।
স্টার্জন যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে সেকশন ৩০-এর আদেশের অনুমতি চাইবেন স্কটিশ পার্লামেন্টের কাছে। এটা ছাড়া গণভোট আয়োজন করা সম্ভব না। আগামী সপ্তাহে এই অনুমোদন চাইবেন বলে জানিয়েছেন স্টার্জন।
যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে সোমবার যখন আর্টিকেল ৫০ অনুসরণবিষয়ক ব্রেক্সিট বিল নিয়ে এমপিরা বিতর্কে অংশগ্রহণ করবেন তখনই স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য দ্বিতীয় গণভোটের দাবি তুলেছেন স্টার্জন।
স্টার্জন মনে করেন, এবারের গণভোটে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষেই জনগণ রায় দেবেন। তার এ আস্থার কারণ ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন এবং জোর করে স্কটল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার ত্যাগে বাধ্য করার প্রভাব।
স্টার্জন বলেন, ‘আমি সত্যিকার অর্থে ও নিষ্ঠার সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছি। আমরা এমন কোনও সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করিনি যারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। তারা কথায় সমঝোতা থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়াতে বিষয়টি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে।’
এদিকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের প্রাক্কালে ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যজুড়ে সফরের পরিকল্পনা করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন স্বাধীনতার দাবিতে আগামী বছর গণভোটের দাবি জানানোর প্রেক্ষিতে এ সফরে যাচ্ছেন তিনি।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন