স্পোর্টস ডেস্ক ॥
ঢাকা: দিনের শুরুটা যেখানে স্বস্তির, সেখানে শেষটা হতাশার। বোলাররা প্রত্যাশামত খেলে গেলেও ব্যর্থতার খোলস ছেড়ে বের হতে পারছেন না ব্যটসম্যানরা। বার বার ব্যর্থতার গল্পই রচনা করে যাচ্ছেন তারা। যেভাবে টেস্ট ক্রিকেট ব্যাটিং করতে হয়, সেশন বাই সেশন ব্যাট হাতে বোলারদের শাসন করতে হবে ৮৫ টেস্ট খেলেও শেখেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্কোর ১,৯,৩,৪,৬,১,১২। যা মোবাইল নাম্বারের ডিজিট বললেও ভুল হবে না।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ফলোঅনের শংকায় বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়াতে এখন প্রয়োজন ৭৭ রান। হাতে ৩ উইকেট। দিনশেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১০৪ রান। স্বাগতিকদের চেয়ে পিছিয়ে ২৭৬ রানে। মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ (১৩) ও শফিউল ইসলাম (৬) রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন।
কেমার রোচ একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংস। দ্বিতীয় সেশনে যেন ভয়ংকর হয়ে উঠেছেন তিনি। ১২ ওভার বল করে ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। একে একে শামসুর রহমান-তামিম ইকবাল-এনামুল হক-নাসির হোসেন-তাইজুল ইসলামকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন। প্রথম টেস্টের মত দ্বিতীয় টেস্টেও উজ্জ্বল পারফর্মম্যান্স কেমার রোচের। সেন্ট ভিনসেন্টে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এবার সেটাকেও ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ দলকে লজ্জা দিলেন এই ক্যারিবিয়ান এই ক্রিকেটার।
ব্যাটসম্যানরা উইকেট বিলানের মিছিলে নেমেছিলেন। তামিম যেখানে অফসাইডের বল দেখে শুনে ছেড়ে দিয়ে খেলছিলেন, সেখানে কেমার রোচের করা অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল কিভাবে ব্যাট চালালেন সেটা প্রশ্ববিদ্ধ করেছেন ক্রিকেট ভক্তদের। ২০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারের কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীন ব্যাটিং আশাহত করেছে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের।
শামসুর রহমান যখন সাজঘরে ফিরেছেন তখন দলীয় স্কোর ১৪। লেগস্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে দিনেশ রামদিনের তালুবন্দী হয়েছেন এই ওপেনার। রান করেছেন একটি। এরপর তামিম-এনামুল মিলে দেখে শুনে ব্যাটিং করছিলেন। বল ছাড়তে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে ড্যারেন ব্রাভোর হাতে বন্দী হয়ে সাজঘেরে ফিরেছেন এনামুল ব্যাক্তিগত ৯ রান করে।
তামিমকে দেখে মনে হচ্ছিল টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করছেন। বাইরের বলগুলো ছেড়ে ছেড়ে খেলছেন। কিন্তু হঠাৎ স্ট্যাম্পের বাইরেরর বল খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ব্যক্তিগত ৪৮ রানে।
তামিম আউট হওয়ার পর পরই একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে বাংলাদেশের। মুমিনুল হক টেলরের বলে নিজেকে সেভ করতে গিয়ে ব্রার্থহোয়াটের তালুবন্দী হয়েছেন। অবিশাস্য এক ক্যাচে ব্যক্তিগত ৩ রানে আউট হয়েছেন মুমিনুল। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা অধিনায়ক মুশফিককে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট-প্যাচে পেয়ে বসেছিল। টেলরের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিলেছেন দলের অধিনায়ক। এর পর নাসিরের আশা-যাওয়া। দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে খেলতে গিয়ে রামদিনের গ্লাভসবন্দী হলেন মাত্র এক রান করে। তাইজুল অবশ্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার! ১২ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। এরপর রিয়াদ-শফিউল দুজন মিলে দিনের শেষভাগ পার করেছেন।
এর আগে আল-আমিনের বোলিং তোপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বিধ্বস্ত হয়। অবশ্য শুরুটা করেছেন রবিউল ইসলাম সঙ্গে শেষটাও। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ড্যারেন ব্রাভোকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করে সাজঘরে ফেরান। শেষটাও তার ভূমিকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ উইকেটে ক্রিজে নামেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। তাকে ক্লিন বোল্ড করে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তিনি।
সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয় দিনে খুব দ্রুতই স্বাগতিকদের আরও ৭টি উইকেট দখল করেছেন তারা। রবিউল-আল আমিন-শফিউল-তাইজুল ঝলকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে হঠাৎ করেই কাঁপন ধরিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন মাত্র ২৩ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরেছে স্বাগতিকদের ৪ ব্যাটসম্যান। দুর্দান্তভাবেই ম্যাচে ফিরেছে মুশফিকবাহিনী। মাঝখানে চন্দরপল-টেইলর জুটি প্রতিরোধ গড়েছে। তবে তাইজুল ইসলাম ফের আঘাত হেনেছেন। সাজঘরে ফিরিয়েছেন জারেমি টেইলরকে।
তবে অবিচল ছিলেন চন্দরপল। তিনি ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। মাঝে অবশ্য সোলেমান বেনের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু আল-আমিনের বলে তুলে মারতে গিয়ে শফিউলের তালুবন্দী হয়েছেন বেন। অবশ্য ক্যাচটা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন শফিউল।
রবিউলের পথ ধরে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য উপহার দিয়েছেন আরেক পেসার আল-আমিন হোসেন। এক কাঠি বেড়েছেন তিনি। ম্যাচের ১০১তম ওভারের শেষ দু’টি বলে তুলে নিয়েছেন জারমেইন ব্লাকউড ও দিনেশ রামদিনের উইকেট। দলীয় ২৬৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই স্বাগতিকদের আরেকটি আঘাত উপহার দিয়েছেন পেসার শফিউল ইসলাম। সবেমাত্র ব্যাটিং করতে ক্রিজে আসা কেমার রোচকে মুশফিকের তালুবন্দী করেছেন শফিউল। সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা তাই বাংলাদেশের জন্য শুভই হয়েছে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে আল-আমিন সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া রবিউল ইসলাম শিবলু, তাইজুল ইসরাম ও শফিউল ইসলাম ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট নেন মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ।
রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মাঠে গড়িয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা। আগের দিনের ৩ উইকেটে ২৪৬ রানের সংগ্রহ নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু বাংলাদেশী বোলারদের নৈপুণ্যে স্বাগতিকদের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের এটি ৮৫তম টেস্ট ম্যাচ। অন্যদিকে, স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ম্যাচটি বিশেষ মাইলফলক স্পর্শের উপলক্ষ। সেন্ট লুসিয়ার মাটিতে টেস্ট ম্যাচটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ৫০০তম টেস্ট খেলার মাইলফলকে পৌঁছেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে কে কতগুলো ম্যাচ খেলেছে তা আমলে না নিয়ে একে অন্যকে হারানোর লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে ১-০’তে এগিয়ে রয়েছে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচটি তাই সিরিজ হার ঠেকানোর শেষ সুযোগ। কিন্তু ম্যাচের যা অবস্থা তাতে করে আর একটি বড় হার অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্টট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৮০, ১২৪ ওভার (লিওন জনসন ৬৬, ব্রার্থহোয়াইট ৬৩, ব্রাভো ৪৪, চন্দরপাল ৮৪; আল-আমিন ৩/৮০, শফিউল ইসলাম ২/৮০, রবিউল ইসলাম ২/৬৩ মাহমুদ উল্লাহ ১/৪৯, তাইজুল ইসলাম ২/৮৯)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৪/৭, ৪২ ওভার (তামিম ৪৮, রিয়াদ ১৩*, তাইজুল ১২; রোচ ৫/৩৩, টেলর ২/৩৩)