স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: গ্রাহকদের এফডিআর হিসাবের বিপরীতে প্রদেয় মুনাফার সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা তোলা, এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে তথ্য চুরি ও এফডিআরের পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এভাবে টাকা তুলে আত্মসাৎ করায় দিন দিন ব্যাংকখাতের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দিন দিন ব্যাংক কর্মকর্তাদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। ব্যাংকের বড় বড় কর্মকর্তা ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করায় তাদের বিচার হচ্ছে না। নিচের লেভেলের কর্মকর্তারা ভাবেন, আমরা এতো কষ্ট করি। কোনো মূল্যায়ন নেই। অনেক ভালো কর্মকর্তার প্রমোশন হচ্ছে না।
সালেহ উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এমডি তার পছন্দের লোক নিয়োগ দিচ্ছেন। এসব কারণেই ব্যাংকখাতের এ অবস্থা। এখনো সময় আছে, এসব সমস্যার সমাধান করার। না করলে সামনে বিপদের আশঙ্কা। এ ধরনের ঘটনা গ্রাহকদের মাঝে নিঃসন্দেহে বিরুপ প্রভাব ফেলবে।
জনতা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাজীব হাসান গ্রাহকের এফডিআরের মুনাফার সঙ্গে বাড়তি টাকা তুলে আত্মসাত করেছেন। বিভিন্ন হিসাব থেকে সরিয়েছিলেন ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ টাকা। এসব টাকা কিছু রাজীবের বাসা, অফিসের ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ কাজ করে এলেও বিষয়টি ধরা পড়েছে গত ১৯ মার্চ রোববার।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা ব্যাংকের জন্য খুবই দুঃখজনক। এতে গ্রাহকের কষ্ট করে জমানো টাকা উধাও হওয়ার আশঙ্কা থাকতেই পারে। এ ধরনের আশঙ্কা দূর করতেই ঘটনাটি জানার পরে ওই কর্মকর্তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে টাকা উদ্ধার করেছি। তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করে একটি চক্র। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এ অর্থ আত্মসাৎ করে চক্রটি। এ ঘটনায় এক বিদেশি ও সিটি ব্যাংকের তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে সিটি ব্যাংকের সিলেটের জিন্দাবাজার শাখার গ্রাহক আখলাক মিয়ার দেড় কোটি টাকা এফডিআর আত্মসাৎ করেছেন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক। টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে আখলাক মিয়া বিভিন্ন দফতরে ঘুরলেও কোনো লাভ হয়নি।
সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ মামুন রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের টাকা পয়সা জমা রাখার শেষ ভরসা হচ্ছে ব্যাংক। সেই ব্যাংকের কর্মকর্তারা যদি এভাবে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে টাকা তুলে নেন, তাহলে আর ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা কমে যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।