বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈঠকে কে কে অংশ নিয়েছেন তা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে শনাক্ত করার পর এবার কয়েকটি টেলিভিশনের কাছে ভিডিও ফুটেজ চেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম ইসমত আরা সাদেক বাংলামেইলকে বলেন, ‘সরকার কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে তা আপনারা টিভি এবং বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছেন। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা আগামীকাল ( রোববার) অফিসে না গিয়ে বলতে পারবো না।’
জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে।
বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- যুগ্ম সচিব (ওএসডি) একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সিনিয়র সহকারী সচিব (ওএসডি) এহসানুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বাদিউল কবির, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহীম মিয়াজী, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের নুরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আবদুল মান্নান, একেএম হুমায়ুন কবীর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী শহীদুল হক, এজি অফিসের কর্মচারী আবদুল মান্নান প্রমুখ।
তবে কেন তারা বৈঠকে গেলেন, সেখানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ‘বৃহস্পতিবার গুলশান কার্যালয়ে ওই ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠক সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বাংলামেইলকে বলেন, ‘বৈঠকে যোগ দেয়ার অভিযোগে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শাস্তি দেয়া সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। যারা সরকারি চাকরিজীবী তারা ওই বৈঠকে যেতে পারেন না। যারা গিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। তারপর অন্যান্য প্রক্রিয়া।’
ড. খান বলেন, ‘যারা ওএসডি আছেন তারাও বৈঠকে যেতে পারেন না। কারণ, তারা সরকারি কর্মকর্তা। তবে যারা অবসরপ্রাপ্ত তারা যেতে পারেন।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান এই বৈঠক সম্পর্কে বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীরা অন্য কোনো উদ্দেশ্য বৈঠকে যেতে পারবেন না। এটা শৃঙ্খলা পরিপন্থি। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলে যেতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় মাইনর (সামান্য) শাস্তি হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকার এদের বিরুদ্ধে কী ধরনের চার্জশিট দেয় তার ওপর। অর্থাৎ সরকারের ইচ্ছার ওপর। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, এসব ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকেই কার্যত শুরু।’
এদিকে সচিবালয়ে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়ন প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতি করে। কিন্ত চাকরিবিধি অনুয়ায়ী এটা করা যায় না। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের কাছে বড় বড় কর্মকর্তারাও চুপ। মান সম্মানের ভয়ে অনেক কিছুই চেপে যান কর্মকর্তারা। আবার বিএনপি সমর্থিতরা কিছুটা চুপ থাকলেও অনুকূল আবহাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ওই ভয়ে তাদেরও কর্মকর্তারা কিছু বলেন না।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৫-৯৬ সালে। জনতার মঞ্চে তৎকালীন সচিব মহিউদ্দিন খান আলমগীর চলে আসেন। তখন সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর সরকার পরিবর্তন হলে তার ভাগ্য খুলে যায় এবং মহিউদ্দিন খান আলমগীর পান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এরপর আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী। আসলে কর্মকর্তারা দলবাজ হতে উৎসাহিত হন ওখান থেকেই।
এরপর ২০০৮ সালে মাহমুদুর রহমানের উত্তরার বাসভবনে রাতে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচারও করে। সর্বশেষ গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করলেন আমলারা। বাংলামেইল২৪ডটকম