শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ব্যক্তিগত দুর্নীতির তদন্ত করবে না দুদক

ব্যক্তিগত দুর্নীতির তদন্ত করবে না দুদক

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: রাষ্ট্রের স্বার্থ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করবে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে বেসরকারি পর্যায়ের অভিযোগের সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা সরকারি স্বার্থ জড়িত থাকলে কেবল সেই অংশটুকুর তদন্ত করবে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটি।

বর্তমানে প্রতিদিনই ব্যক্তিগত পর্যায়ের অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে দুদকে। যেগুলোতে শুধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বের বিষয় জড়িত রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে দুদককে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বেসরকারি খাতের শত শত অভিযোগ দুদকের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। যেসব দুর্নীতি প্রাইভেট পার্সন টু প্রাইভেট পার্সন হয় সেগুলো আমরা করতে চাচ্ছি না। তবে সরকারি অর্থ বা সম্পত্তি যদি জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আত্মসাৎ করে সেগুলো আমরা তদন্ত করবো।

মো. বদিউজ্জামান জানান, ২০১৩ সালে সংশোধনীতে দুদক আইনে ৪২০ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ধারায় সরকারি-বেসরকারি খাতের সব ধরনের প্রতারণামূলক অভিযোগ দুদককে দেখতে বলা হয়েছে। এটা সম্ভব নয়। তাছাড়া দুদকের সেরকম জনবল কাঠামোও নেই।

দুদকের প্রধান এ নির্বাহী বাংলানিউজকে আরও বলেন, ৪২০ ধারার পাশাপাশি ঢালাওভাবে ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯ ও ৪৭১ সব ধারা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। আমরা এখন সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছি, সরকারি সম্পত্তি নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করবে দুদক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশোধিত আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এতে দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬২ এ ও বি, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১, ৪৭৭-এ ধারাগুলো দুদক আইনের তফসিলভুক্ত করা হয়েছে।

৪২০ ধারায় প্রতারণার মামলা হয়। অন্য ধারাগুলো অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতি-সংক্রান্ত অপরাধের। আইন সংশোধনের ফলে এসব মামলার তদন্তের দায়িত্ব পড়ে দুদকের।

এ ধারাগুলো ২০১৩ সালের সংশোধিত দুদক আইনের আগে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচার্য ও পুলিশের তদন্তযোগ্য ছিল। কিন্তু দুদক আইনে অন্তর্ভুক্ত করায় এখন এসব ধারার অপরাধ ম্যাজিস্ট্রেট যেমন আমলে নিতে পারছেন না, তেমনি পুলিশও তদন্ত করতে পারছে না।

অপরদিকে তদন্তের জন্য দুদকের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এবং এসব ধারার অপরাধ বিচারে পর্যাপ্ত বিশেষ জজ আদালত না থাকায় অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় বিচারাধীন থাকা এ ধরনের লক্ষাধিক মামলার বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব ধারার মামলা বিচার করতে না পারায় বিচারপ্রার্থী জনগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

দুদক সূত্র জানায়, উল্লিখিত ছয়টি ধারার মামলাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাদী-বিবাদীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে দায়ের হয় এবং পরবর্তীতে আপসের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। ফলে বাদী ও বিবাদী উভয়ের সম্মতিতে অনেক সময় অভিযুক্তদের জামিন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব ধারা দুদক আইনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটরা জামিনের প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন না।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গ বা জাল দলিল সৃজন করা বিষয়ে দণ্ডবিধির ৪০৮ ও ৪০৯ এবং ১৬৭ ধারা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এ তফসিলভুক্ত রয়েছে। ফলে এই আইন সংশোধন করে নতুন করে ৪২০, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯ এবং ৪৭১ ধারা অন্তর্ভুক্তির আবশ্যকতা পরিলক্ষিত হয় না।

এ অবস্থায় দুদক আইন থেকে উল্লিখিত ছয়টি ধারা প্রত্যাহার করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব ধারার হাজার হাজার মামলার নথি এখন দুদকের ঘাড়ে এসে চেপেছে। থানা ছাড়াও আদালত থেকেও এ ধরনের মামলা তদন্তের জন্য দুদকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মামলা তদন্ত করার মতো দুদকের হাতে পর্যাপ্ত লোকবল নেই। তাই এ ধারাগুলো প্রত্যাহারে যত বিলম্ব হবে ততই জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আইনের ধারা সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশটি কেবিনেট হয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটি সংশোধন হলে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলার তদন্ত আর ঝুলে থাকবে না।

প্রসঙ্গত, ৪২০ ধারা প্রতারণা ও সম্পত্তি সমর্পণ করার জন্য অসাধুভাবে প্রবৃত্ত করা, ৪৬৬ ধারা আদালতের নথিপত্র বা সরকারি রেজিস্ট্রার জাল করা, ৪৬৭ ধারা মূল্যবান জামানত, উইল ইত্যাদি জাল করা, ৪৬৯ ধারা মানহানির উদ্দেশ্যে জালিয়াতি ও ৪৭১ ধারা কোনো জাল দলিলকে জেনেশুনে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা।

এছাড়া ১৬৭ ধারা ক্ষতিসাধনকল্পে সরকারি কর্মচারীর কোনো জাল দলিল প্রণয়ন করা, ৪০৮ ধারা কেরানি বা চাকরের অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও ৪০৯ ধারা সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকার বণিক বা প্রতিভূর অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করার অপরাধকে বোঝাবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম