শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ কোন খেলা?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ কোন খেলা?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর আরোপ করা সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে এটি আগেই নিশ্চিত করা হয়েছিলো।

কিন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের ওপরেই বসিয়ে দেয় সেই ভ্যাট। অর্থাৎ ভ্যাটের টাকা আদায় করা হলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। শিক্ষার্থীদের বোঝানো হলো সরকার তাদের শিক্ষার ওপরেই ভ্যাট বসিয়েছে। আর এ ভ্যাটের অর্থ টিউশন ফির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিশোধ করতে হবে। এতে অসন্তোষ দানা বাঁধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে সেই অসন্তোষ।

বুধবার (০৯ সেপ্টেম্বর) তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে রামপুরার আফতাব নগরে অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সেই ক্ষোভ আগুনের ফুলকির মতো ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র রাজধানী জুড়ে। বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। কিছু অঞ্চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রাস্তায় নামা পরিবহনগুলোকে। এমনকি রাজধানীর বাহিরে বিভাগীয় শহরেও ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন।

শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। যান চলাচল থমকে যাওয়ায় রাজধানীর অধিকাংশ রুটে দিনভর হেঁটে চলাচল করতে হয় রাস্তায় বের হওয়া মানুষগুলোকে।

অবশ্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দুপুরের পর ভ্যাটের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাতে বলা হয় কোনো শিক্ষার্থীর নয়,ভ্যাটের অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

এনবিআর’র পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়ের উদ্দেশ্যে ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, কোনো ক্রমেই শিক্ষার্থীর নয়। আর বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকায় টিউশন ফি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।

গণমাধ্যমের মাধ্যমে এনবিআর এর এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এনবিআর’র ঘোষণা হাতে পেয়েই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভ্যাট বাবদ নেওয়া অর্থ শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং ভ্যাটের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হবে তা নিশ্চিত করতে আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আলটিমেটামের মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় ভ্যাট বাবদ নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে আর কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টিউশন ফির সঙ্গে ভ্যাট না নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ঘোষণার পর অবরোধ তুলে নিয়ে গুলশান-মহাখালীর রাস্তা পরিবহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় শিক্ষার্থীরা। অবশ্য তখনো রাজধানীর কিছু রাস্তা বন্ধ করে রাখে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা প্রত্যেকেই বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বলা হয়েছে সরকার তাদের টিউশন ফির ওপর ভ্যাট বসিয়েছে। এ ভ্যাটের টাকা তাদেরকে টিউশন ফির সঙ্গেই পরিশোধ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্যাটের অর্থ পরিশোধ করা হবে এমন কথা কখনো বলা হয়নি জানিয়ে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভ্যাটের অর্থ পরিশোধ করলে আমরা কেন আন্দোলন করবো? বিষয়টি আমাদের আগেই জানালে আমরা কখনোই আন্দোলন করতাম না।

বিষয়টি নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদল্যায় কর্তৃপক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ভ্যাট বাবদ নেওয়া অর্থ শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া শিক্ষকের সঙ্গে ঘটনাস্থলে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন কথা না বলেই দ্রুত চলে যান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিউশন ফির ভ্যাটের টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে এটি আগেই জানতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু এই ভ্যাটের হাত থেকে রেহাই পেতে তারা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছেন। শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে তাদের কাছ থেকেই ভ্যাটের টাকা আদায়ের অপচেষ্টা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করে বসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন ‘শিক্ষকরা জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছেন’। এতে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় শিক্ষকদের মধ্যে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে বাড়তি উস্কানি হিসেবে কাজ করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের আলাপচারিতায় তেমনই আভাস পাওয়া যায়।
অবশ্য অর্থমন্ত্রী তার ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এর আগেও কয়েকবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী এ ধরণের মন্তব্য করেছেন। অর্থমন্ত্রীর ‘ফটকা বাজার’, ‘জুয়ার দান’ এ ধরণের খামখেয়ালিপনা বক্তব্যের কারণেই ২০১০ সালের ধসের পর শেয়ারবাজার এখনো স্থিতিশীল হতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার অর্থমন্ত্রীকে সতর্কভাবে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য এক পর্যায়ে শেয়ারবাজার নিয়ে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন অর্থমন্ত্রী।

এনবিআর’র ঢিলেমি ও পুলিশের বাড়াবাড়িও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রসদ জুগিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দ্বিতীয় দিনে গড়ালে ভ্যাটের বিষয়ে এনবিআর এর তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রথমদিন (৯ সেপ্টেম্বর) এনবিআর থেকে কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। উল্টো বুধবার পুলিশ রামপুরায় বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। ফলে রামপুরা থেকে সমগ্র রাজধানীতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশ যদি গুলি না ছুড়তো এবং এনবিআর থেকে আগেই ভ্যাটের ব্যাখ্যা দেওয়া হতো তাহলে হয়তো ওই দিনের বিক্ষোভের মধ্য দিয়েই আন্দোলন শেষ হয়ে যেতো। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম