স্টাফ রিপোর্টার ॥ যার যার অবস্থান থেকে গ্রামীণ ব্যাংক রায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকার যা করছে, তা অত্যন্ত জঘন্য। এটি প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া। অথচ এটি দেশের গর্ব করার মতো স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। তাই গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংসের প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমি সবার প্রতি আহবান জানাই। এ দেশের নারীরা এখন অনেক বেশি স্বাবলম্বী। আমার বিশ্বাস, তারা নিশ্চয়ই জেগে উঠবে। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সমপ্রতি বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ খেতাব ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’ পাওয়ায় তার সম্মানে হোটেল রূপসী বাংলায় অ্যামচেম এ ভোজসভার আয়োজন করে। এদিকে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে ড. ইউনূসের সঙ্গে সংহতি জানাতে এলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি বেঁচে থাকতে গ্রামীণ ব্যাংকের গায়ে একটি আঁচড়ও লাগতে দেবো না। দেশের মানুষ আমার সঙ্গে আছে। এরপরও সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। এমচেমের বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গত আড়াই বছর ধরে সরকার ব্যাংকটি নিয়ে এমন সব সুপারিশ দিচ্ছে যা সম্পূর্ণ মন্দ। ব্যাংকটি নিজস্ব টাকায় গঠিত এবং অত্যন্ত দভাবে পরিচালিত হলেও সরকার ব্যাংকটিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো করে চালাতে চাইছে। কতটা ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা! ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, দ একটি ব্যাংককে সরকার ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটি কেমন ধরনের সরকার! ‘গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৪ লাখ গ্রাহক রয়েছেন’, উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, গ্রাহকদের সবাই প্রাপ্তবয়স্ক এবং ভোটার। তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না হোক অন্তত দেশের প্রয়োজনেই এ ব্যাংকটি ধ্বংস করা কোনভাবেই ঠিক হবে না।
অ্যামচেমের প্রেসিডেন্ট আফতাব-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাঈদুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জন ডব্লিউ লুইস, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদাসহ আরও অনেকে। সামাজিক ব্যবসা প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মুনাফা করে টাকা উপার্জনের জন্য সামাজিক ব্যবসার ধারণা নয়, মানুষের সমস্যা সমাধান করাই এর মূল উদ্দেশ্য। দরিদ্র মানুষকে খাদ্য দেয়া বা বেকার জনগণকে টাকা দেয়া স্থায়ী কোন সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান হলো তাদেরকে কর্মম ও কাজের সুযোগ করে দেয়া। এেেত্র সামাজিক ব্যবসা অত্যন্ত কার্যকরী। অন্যথায় দরিদ্ররা কর্মবিমুখ হয়ে পড়বে এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে না। তবে রাজনীতিবিদরা স্থায়ী সমাধানের চেয়ে তাৎণিক সমাধান করতেই উদগ্রীব। তারা টাকা নিয়ে সহজে এসব সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারছে না। বাংলাদেশের পোশাক খাত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সামপ্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দেয়া কোন সমাধান নয়। বরং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোই পারে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি প্রদান ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে। কারখানার কর্মপরিবেশ সুন্দর করার েেত্র সামাজিক ব্যবসা অবদান রাখতে পারে। তবে সর্বোপরি পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে- যেন তারা পোশাক কেনা বন্ধ না করেন।