শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বুড়িগঙ্গা হত্যাযজ্ঞে সরকারি প্রতিষ্ঠান!

বুড়িগঙ্গা হত্যাযজ্ঞে সরকারি প্রতিষ্ঠান!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ঢাকা মহানগরের প্রাণ বুড়িগঙ্গা। গত দুই দশক ধরে দূষণ আর দখলে এ নদীর এখন মৃতপ্রায়। অব্যাহত এই দখল-দূষণের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানও সরাসরি জড়িত। তাছাড়া এ নদীতে অসংখ্য বেআইনি ঘর-বাড়ি, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কাঁচা পায়খানা নির্মাণ এবং রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, হাসপাতালের বর্জ্য, মানুষ ও পশুপাখির মল-মূত্র ফেলা হচ্ছে প্রতিদিন। ফলে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়েছে। এর এক নম্বরে রয়েছে হাজারীবাগের চামড়া (ট্যানারি) শিল্প ও নদী পাড়ের কল-কারখানা। এর পরে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি করপোরেশন।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য ৬০ ভাগ হাজারীবাগের চামড়া শিল্প ও নদীপাড়ের কলকারখানাগুলো। ৩০ ভাগ ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠিানগুলো বাদে বাকি ১০ ভাগ দূষণের জন্য দায়ী অন্যান্য বিষয়।

বাপার অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প থেকে দৈনিক ২১ হাজার কিউবিক মিটারসহ নদীপাড়ে অবস্থিত কলকারখানার বর্জ্যগুলো অপরিশোধিতভাবেই নদীতে পড়ছে। অথচ প্রতিটি কারখানায় পরিশোধন যন্ত্র (ইটিপি) থাকা বাধ্যতামূলক হলেও কেউ সে আইন মানছে না। এসব বর্জ্যে ক্রোমিয়াম, সীসা, সালফিউরিক এসিডের ক্ষতিকর রাসায়নিক এবং পশুর রক্ত-মাংস রয়েছে। ট্যানারি থেকে নির্গত এসব বিষাক্ত তরল ও কঠিন বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানির পাশাপাশি এর তলদেশ ও পাড়ের মাটি ও বাতাসকে ভয়াবহ দূষিত করছে।

বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী দ্বিতীয় শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কলকারখানা থেকে ৯০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্যসহ দেড় কোটি ঢাকাবাসীর দৈনিক ১৩ লাখ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য উৎপাদিত হয়। এগুলো পরিশোধনের জন্য ঢাকা ওয়াসার ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অত্যাধুনিক পরিশোধনাগার রয়েছে। বর্তমানে যেটিতে মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন করা যায়। এটি ঠিক মতো কাজ না করায় বাকি ১২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য অপরিশোধিতভাবে সরাসরি বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ে। ফলে দূষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ।

পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব ট্যানারি অতিদ্রুত সাভার ও কেরানীগঞ্জের চামড়াশিল্প নগরীতে না সরানো হলে নদীর সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ মাত্রা প্রতিদিনই বাড়বে।

এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গা রক্ষায় কিছু পরামর্শও দিয়েছে বাপা। এগুলো হলো-
নদী কমিশনকে শক্তিশালী করা, সীমানা নির্ধারণ, সব দখল স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ, নদীর তলা পরিষ্কার, পানি দূষণ বন্ধ, নদীতে চলাচলকারী নৌযানের বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ, ঢাকা ওয়াসা সংগৃহিত বাসাবাড়ির বর্জ্যযুক্ত পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া বন্ধ, প্রয়োজনীয় মান ও ক্ষমতা সম্পন্ন সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা, দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য নিষ্কাশন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও বুড়িগঙ্গা টাস্কফোর্সকে কার্যকর রাখা।

এ বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘রাজধানীবাসীর নির্গত বর্জ্যসহ নানা কারণে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অতি দ্রুত নদী বিধ্বংসী সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করা যাবে না। এর ফলে রাজধানীতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

নদী দূষণের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার পানি নষ্টের জন্য বড় দায়ী হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প। তার সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার ভূমিকাও অনেক বেশি। এছাড়া নদী পাড়ের সব কলকারখানাও মানছে না কোনো নিয়ম-রীতি। এ জন্য সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।’ বাংলামেইল২৪ডটকম