শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ॥ নামিদামি খাদ্যেই বেশি ভেজাল ও অনিয়ম

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ॥ নামিদামি খাদ্যেই বেশি ভেজাল ও অনিয়ম

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: নোংরা, স্যাঁতস্যাতে গোসলখানার মেঝেতে চামড়া ছড়ানো মুরগিগুলো রাখা। এই মুরগির ওপর ওঠেই গোসল সারেন ম্যানেজারসহ অনেকেই। আর ফ্রিজে রাখা রান্না করা মাংসের সঙ্গে কাঁচা মাংস ও তরকারি মিশে আছে। রয়েছে কয়েকদিনের পোড়া তেল।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অন্যতম অভিজাত হোটেল ‘ফার্মগেটে‘র এই দৃশ্য ধরা পরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অধিদপ্তরের এক অভিযানে।

শুধু ওই অভিজাত হোটেল নয় নামিদামি মিষ্টি, বেকারি, ওষুধসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের বিপণীগুলোতে পাওয়া যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এছাড়া মোড়কে পণ্যের দাম ও মেয়াদ উল্লেখ না থাকা, ওজনের বাটখারায় কারচুপিসহ নানাভাবে প্রতারণা করে আসছেন খাদ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিন বাংলানিউজকে বলেন, হাতে গোনা দুই একটি অভিজাত মিষ্টির দোকানগুলোতে ভেজাল নেই। এবাদে প্রায় সব নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে কোনো না কোনো একটা ভেজাল পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিক্রিতেও ভেজাল পাওয়া গেছে। ওষুধের গায়ে মেয়াদ উর্ত্তীণের তারিখ, মূল্যসহ নানা অনিয়ম পাওয়া যায়।

অধিদপ্তরের অভিযান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকার মধ্য ধানমণ্ডি, কলাবাগান, তেজগাঁও, আসাদগেট, মতিঝিল, শেওড়াপাড়া, পল্লবী, কচুক্ষেত, ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, উত্তরা, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আর এসব অভিযোগ নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেই বেশি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো মুসলিম সুইটস, স্টার বেকারি, ক্যাফে কৃষ্ণচূড়া, বৈশাখি বাংলা রেস্তোরা, ভাগ্যকুল জেনারেল স্টোর, চিটাগাং কনফেকশনারি অ্যান্ড জেনারেল স্টোর, বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, এম এডি ফার্মা, শেফা ফার্মেসি, সামিয়া হোটেল, হাজি ফাস্ট ফুড, মিনা হোটেল, রাজভোগ সুইটস, সেবা বেকারি, চাঁদ-তারা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মুসলিম মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, তালুকদার বেকারি অ্যান্ড সুইটস, আরিফ কনফেকশনারি, মেসার্স এয়ারপোর্ট ফার্মেসি, বিক্রমপুর সুইটস অ্যান্ড বেকারি, আনন্দ কনফেকশনারি, নিউ রসনা বিলাস, ইয়ামমি ইয়ামমি কনফেকশনারি, আদি টাঙ্গাইল, বিসমিল্লাহ ভিআইপি সুইটস ও রাস হেলথ কেয়ার।

গত বছরের ১৯ আগস্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন উত্তরা সেক্টর-৭ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুসলিম সুইটস এর দোকান মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মোড়কে পণ্যের মূল্য ও মেয়াদ উল্লেখ না থাকায় তাদের এ জরিমানা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরির প্রমাণও পাওয়া গেছে।

তবে দোকানিদের এসব অপরাধ নিয়ে কোনো অনুতাপ নেই বললেই চলে। অভিযোগ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে জানান, হঠাৎ করে এরকম হয়। এটুকু বলেই আর কোনো কথা বলতে রাজি হয় না।

বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ দোকান থেকে মিষ্টি না কিনে নামি ব্র্যান্ডের দোকান থেকে মিষ্টি কিনলেও ভেজালের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এরচেয়ে আর দুর্ভাগ্যের কী আছে। সারাদিন পরিশ্রমের পর একটু খাঁটি খাবার খাব তারও কোনো উপায় নেই।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১০ সাল থেকে চলতি সময় পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৯০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নয় কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে।

সার্বিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব আবুল হোসেন মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন লিফলেটও বিতরণ করে থাকেন তারা। তবে এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন হতে হবে আগে।

তিনি জানান, ১৫ মার্চ ‘স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভোক্তার অধিকার’ স্লোগান নিয়ে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালন হতে যাচ্ছে। এদিনও এ বিষয়ে নানা সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম