শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু কাল

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু কাল

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে কাল থেকে শুরু হচ্ছে দাওয়াতে তাবলিগের ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমা ময়দান। এখনও দলে দলে আসছেন মেহনতকারীরা। শুক্রবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সম্মেলন। ১০ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তা। ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, তাশকিল কামরা, হালকা নম্বর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো মাঠে প্রতিধ্বনি রোধক ৫ শতাধিক ছাতা মাইক স্থাপন করা হয়েছে। ময়দানে প্রবেশ সুবিধা বাড়াতে সেনাবাহিনী তুরাগ নদে ৯টি ভাসমান পন্টুন নির্মাণ করেছে।
মুসল্লিদের অবস্থান : প্রথম পর্বে ১৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। এগুলো হল- ঢাকা জেলা (খিত্তা নম্বর ১-৬), শেরপুর (৭), নারায়ণগঞ্জ (৮ ও ১১) নীলফামারী (৯), সিরাজগঞ্জ (১০), নাটোর (১২), গাইবান্ধা (১৩), লক্ষ্মীপুর (১৪ ও ১৫), সিলেট (১৬ ও ১৭), চট্টগ্রাম (১৮ ও ১৯), নড়াইল (২০), মাদারীপুর (২১), ভোলা (২২ ও ২৩), মাগুড়া (২৪), পটুয়াখালী (২৫), ঝালকাঠি (২৬) এবং পঞ্চগড় (২৭ নং খিত্তা)। নিরাপত্তা : ইজতেমা উপলক্ষে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। ময়দান ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ থেকে পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৫ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হবে। র‌্যাব ১৮ প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছে। সংস্থাটি ৮টি ও পুলিশ ৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসিয়েছে। ১৬টি গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিসের ১২০ সদস্য সতর্ক রয়েছেন।
বিশেষ ট্রেন ও বাস : বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য ২৮টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত ২০টি কোচ সংযোজন করা হবে। সব মিলিয়ে বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে দেড় লাখ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হবে। শুক্রবার ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা দুটি ‘জুমা স্পেশাল’, আখেরি মোনাজাতের আগের দু’দিন জামালপুর ও আখাউড়া থেকে দুটি করে চারটি অতিরিক্ত ট্রেন চলবে। শনিবার লাকসাম-টঙ্গী একটি, রোববার দিন ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা ৭টি, টঙ্গী-ঢাকা ৭টি, টঙ্গী-লাকসাম একটি, টঙ্গী-আখাউড়া দুটি, টঙ্গী-ময়মনসিংহ ৪টি মিলে মোট ২১টি ‘আখেরি মোনাজাত স্পেশাল’ ট্রেন চলবে। ৩৮টি মেইল এক্সপ্রেস কমিউটার ও লোকাল ট্রেনের টঙ্গী স্টেশনে বিরতি রয়েছে। আখেরি মোনাজাতের আগের ৫ দিন ঢাকা অভিমুখী সব আন্তঃনগর ট্রেন (২৯টি) টঙ্গী স্টেশনে ২ মিনিট করে থামবে। আখেরি মোনাজাতের দিন ৫৮টি আন্তঃনগর ট্রেন ও আখেরি মোনাজাতের পরের দিন ১৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের টঙ্গী স্টেশনে ২ মিনিটের বিরতি থাকবে। বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১০ ও ১৭ জানুয়ারি ৭২১/৭২২ মহানগর প্রভাতী/গোধূলি, ১১ ও ১৮ জানুয়ারি ৭০৭/৭০৮ তিস্তা এক্সপ্রেস এবং ৮ ও ১৫ জানুয়ারি ৭০১/৭০২ সুবর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে। বিশেষ ট্রেন পরিচালনার সুবিধার্থে সুবর্ণা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, মহুয়া এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ কমিউটার, ঢাকা-টঙ্গী কমিউটার, ঢাকা-জয়দেবপুর কমিউটার, ঢাকা-কুমিল্লা কমিউটার আখেরি মোনাজাতের দিন বন্ধ থাকবে। বিশ্ব ইজতেমায় আগত যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা স্টেশনে ৭০টি ও টঙ্গী স্টেশনে ৫০টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রয় করা হবে। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা সার্ভিসে বিআরটিসির বিভিন্ন ডিপোর ২২৮টি বাস নিয়োজিত থাকবে। সুষ্ঠুভাবে বাস সার্ভিস চলাচল নিশ্চিত করার জন্য কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। বাসগুলো আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থলে ২৯টি, শিববাড়ি-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থলে ১৩টি, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থলে ১৭টি, গাজীপুর চৌরাস্তা-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থলে ৬টি, গাবতলী-গাজীপুর ভায়া ইজতেমাস্থলে ৫টি, গাবতলী-মহাখালী ভায়া ইজতেমাস্থলে ৩৫টি, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থলে ২৫টি, মতিঝিল-বাইপাইল ভায়া ইজতেমাস্থলে আরও ২০টি বাস চলাচল করছে। এছাড়াও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ২০টি, চিটাগাং রোড-সাভার রুটে ২০টি, ঢাকা-নরসিংদী রুটে ২০টি এবং ঢাকা-কুমিল্লা রুটে আরও ১৫টি বাস চলাচল করবে।
গাড়ি পার্কিং : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশে রাস্তার উভয় পাশ, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে টিআইসি মাঠ, গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ, চান্দনা চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠ, তেলিপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কে-টু ও নেভী সিগারেট কারখানাসংলগ্ন, আশুলিয়া হয়ে আসা গাড়ি প্রত্যাশ মাঠ ও আশাপাশের খোলা স্থান ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা সেবা : ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়াও টঙ্গী থানা প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেবে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস : টঙ্গী ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল হক জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ওয়াসা দৈনিক ৩ কোটি লিটার সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছে। বিপুলসংখ্যক টয়লেট, গোসল ও ওজুখানা তৈরি করা হয়েছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বিদেশী মেহমানখানায় রান্নায় গ্যাস সংযোগ দিয়েছে।
মিডিয়া সেন্টার : বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তর পার্শ্বে নিউ মুন্নু ফাইন কটন মিলস মাঠে টঙ্গী থানা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। টঙ্গী থানা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া বলেন, মিডিয়া সেন্টারে বিদ্যুৎ ও কম্পিউটারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইজতেমা কমিটি ও প্রশাসনের বক্তব্য : আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে প্রস্তুতি ৯৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছরই মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে ৩২ জেলার মুসল্লিরা এ বছর দুই দফায় ইজতেমায় অংশ নেবেন। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা ২০১৭ সালের ইজতেমায় অংশ নেবেন। টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, চুরি, ছিনতাই রোধসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জাল টাকা রোধেও বিশেষ নজর রাখছি। যানজট নিরসন ও হকার উচ্ছেদে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় আইনশৃংলা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ময়দানের আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ৭৫ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে। মশা-মাছি তাড়াতে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। ধুলাবালি রোধ করার জন্য প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশন পানি ছিটাবে।