শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > খেলা > বিশ্বকাপ তুমি কার ?

বিশ্বকাপ তুমি কার ?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ এই কথাটির অর্থ জানতে হলে ১৩ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শত ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে, প্রায় এক মাসের ফুটবল যুদ্ধ শেষে ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও জার্মানি। আাশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছিল আর্জেন্টাইনদের মন। একদিকে দুর্বার গতিতে ছুটে চলা কমলা-বন্যা খরকুটোর মতো ভাসিয়ে নিচ্ছে দুর্লঙ্ঘ্য সব বাধার প্রাচীর। বিপরীতে ঢাল-বর্মহীন আর্জেন্টিনা। এ রকম নড়বড়ে রক্ষণভাগ নিয়ে রোবেন-পার্সি-স্নাইডারদের আটকানো, স্বপ্ন দেখারই নামান্তর!। কিন্তু লড়াই শুরুর পর ধীরে ধীরে সব শঙ্কা উড়ে গেল সাও পাওলোর নীলাকাশে। আটলান্টিকের গহিনে ঠাঁই হলো সংশয়ের। ম্যাচ শেষে মেসিদের মুখে ফুটে উঠল আকর্ণ হাসি। বুক চিরে বেরিয়ে এল গগনবিদারী চিৎকার। টাইব্রেকারে ম্যাক্স রদ্রিগেজের শটটা জালে জড়াতেই চার কোটি আর্জেন্টাইনের বুনো উল্লাসের সঙ্গী পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগুণিত ভক্ত। ফুটবল দুনিয়ার এ উচ্ছ্বাসে ভেসেছে বাংলাদেশের অনেকেও। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসিরা। স্বপ্ন পূরণের শেষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর গোনা। তবে শেষ বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে হিমালয়সম উচ্চতার জার্মানি। রবিবার রাতে ‘ফাইনাল’ লড়াইয়েই ঠিক হবে বিশ্বকাপ কার। ২০ নম্বর বিশ্বকাপের মুকুট পরবে কোন দল?

‘জোনাল মার্কিং’ পদ্ধতিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন ডাচ কোচ লুই ফন গাল। কাউকে অতিরিক্ত ভয়ের মনে হলেই তাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য এ জ্যামিতিক কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। গতকাল ব্রাজিল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মেসিকে জোনাল মার্কিংয়েই নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন। কিন্তু ডাচ কোচ কল্পনাও করেননি ঠিক একই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে আর্জেন্টিনাও। ডাচ ফরোয়ার্ড লাইন আর্জেন্টিনার জোনাল মার্কিংয়ের কাছে এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছিল ১২০ মিনিটের ম্যাচ শেষে ডাচদের ‘অন টার্গেট’ শটের সংখ্যা ছিল মাত্র তিনটা! কে বলবে, এই ফরোয়ার্ড লাইনই বিশ্বকাপের সেরা বলে বিবেচিত! আর আর্জেন্টাইন ডিফেন্স লাইন! যে দল নাইজেরিয়ার কাছে ২টা গোল হজম করে। সুইসদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে যায়। বেলজিয়ামকে রুখতে ডিফেন্সে নামতে হয় পুরো মিডফিল্ডকে। তাদেরকে নিয়ে বহু প্রশ্নই ছিল। কোচ স্যাবেলা কি একটা ম্যাচ খেলেই সব প্রশ্নের, সমালোচনার উচিত জবাব দিয়ে দিলেন! রক্ষণভাগের সব দুর্বলতা ঝেড়ে ফেললেন!
যে ম্যাচ নিয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তা শেষ হয়ে গেছে। ডাচদের বিপক্ষে গোল শূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে আর্জেন্টাইনরা এখন জার্মানদের মুখোমুখি। দুই দলের হ্যাটট্রিক ফাইনাল (১৯৮৬, ১৯৯০ ও ২০১৪)! এরপর কী? ১৯৮৬ (আর্জেন্টিনা ৩-২ জার্মানি) নাকি ১৯৯০ (জার্মানি ১-০ আর্জেন্টিনা) এর পুনরাবৃত্তি? আর্জেন্টিনার ত্রিমুকুট জয় হবে! নাকি ইতালির সমান্তরালে (চতুর্থ শিরোপা) পৌঁছবে জার্মানি! লাতিন মাটিতে প্রথমবারের মতো ইউরোপের বিজয় কেতন উড়াবে জার্মানরা? নাকি আরও একবার ‘হতাশ্বাসের ধুলো’ নিয়েই বাড়ি ফিরবে? ১৯৩০ (উরুগুয়ে), ১৯৫০ (উরুগুয়ে), ১৯৬২ (ব্রাজিল), ১৯৭০ (ব্রাজিল), ১৯৭৮ (আর্জেন্টিনা) এবং ১৯৯৪ (ব্রাজিল); আমেরিকা মহাদেশের মাটিতে ইউরোপীয়ানরা কখনোই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায়নি। এবার পারবে কি? রিও ডি জেনিরোর মারাকানায় রবিবারের ফাইনালই কেবল এর চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারে। লিওনেল মেসি দাঁড়িয়ে আছেন একটা মাইলফলকের সামনে। ফুটবলের পঞ্চম রাজার আসনে অভিষিক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন এ আর্জেন্টাইন জাদুকর।
তিনি কি পারবেন পেলে-ম্যারাডোনার সারিতে নাম লেখাতে! বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার যতগুলো গেরো ছিল লিওনেল মেসি একে একে সবগুলো খুলেছেন। ফাইনালে জার্মান গেরো থেকেও কি আর্জেন্টিনাকে মুক্তি দিবেন তিনি! সর্বকালের সেরা ফুটবলার হতে হলে এই কাজটাও তাকে করতে হবে। আর মাত্র নব্বই মিনিটের অপেক্ষা! থমাস মুলারও তো একটা মাইলফলকের স্থপতি হতে পারেন। টানা দুইবারের গোল্ডেন বুট জয়ী! ফাইনালে একটা গোল করলেই প্রথম ফুটবলার হিসেবে এই গৌরব অর্জন করবেন মুলার। ৬ গোল করে রদ্রিগেজ এখনো সবার উপরে। তবে পাঁচ গোল করে দ্বিতীয় স্থানে আছেন মুলার।
গোলসংখ্যা সমান হলে এসিস্টের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকায় মুলারই জিতবেন গোল্ডেন বুট। ২০১০ বিশ্বকাপে ৫ গোল করে তিনি এই ট্রফি জয় করেছিলেন। একদিকে জার্মান গতি অপরদিকে আর্জেন্টাইন শিল্প। ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়া মুলার-ক্লোসা-স্কার্লরা কতটা দুর্বার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর আর্জেন্টিনা কি করছে! বিশ্বকাপের প্রতিটা পর্বে নিজেদেরকে মেলে ধরেছে তারা। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তার কথা মনে রেখেই নিজেদের রূপটা প্রকাশ করছে। গ্র“প পর্বের মেসি নির্ভরতাও কাটিয়ে উঠেছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যে ম্যাচটা খেলল স্যাবেলার শিষ্যরা তাতে তো ‘টিম আর্জেন্টিনা’রই আৎদপ্রকাশ ঘটেছে। দুইটা দলই নিজেদের শ্রেষ্ঠ রূপ প্রকাশ করেছে বিশ্বকাপে।
অতীত পরিসংখ্যানে কিন্তু এগিয়ে আর্জেন্টিনাই। দুই দলের ২০ বারের সাক্ষাতে আর্জেন্টাইনদের জয় ৯ টি। ৬ বার জিতেছে জার্মানি। দুইটা সেরা দল যখন বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয় তখন ফুটবল কতটা সুন্দর হতে পারে মারাকানা স্টেডিয়ামে তারই একটা প্রদর্শনী হয়তো অপেক্ষা করছে ভক্তদের জন্য।