শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > বিলবোর্ড- ঢাকায় নামছে, জেলা উপজেলায় উঠছে

বিলবোর্ড- ঢাকায় নামছে, জেলা উপজেলায় উঠছে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী সাত দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে টাঙানো সব বিলবোর্ড থেকে সরকারি উন্নয়ন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলতে হবে। নতুন করে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন লাগাতে গেলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলো নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করবে। এরপরই বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন সাঁটাতে পারবেন, অন্যথায় নয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সহসাই সরকারের  উন্নয়নের চিত্র টাঙাতে হবে। এতদিন টাঙানো বিলবোর্ডের ভাড়া বাবদ অর্থ বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনির্ধারিত আলোচনায় এসব নির্দেশনা দেন। বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মান্নান খান মহানগরীর বিলবোর্ডগুলো নির্বাচন পর্যন্ত রাখার প্রস্তাব করলেও তাতে সায় দেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিলবোর্ড নিয়ে মিডিয়াতে অনেক নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে। নেগেটিভ প্রচারণার কারণে বিলবোর্ডগুলোতে থাকা বিভিন্ন তথ্য মানুষ মনোযোগ সহকারে জেনেছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গাড়িতে করে ঢাকা শহরের বিলবোর্ড দেখেছেন। সরকারের উন্নয়নের চিত্র জেনেছেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। এখন থেকে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নিজ উদ্যোগে বিলবোর্ড ভাড়া নিয়ে সরকারের উন্নয়ন প্রচার করবে। ওইসব বিলবোর্ডের মাসিক খরচও তারা দেবেন। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিলবোর্ড স্থাপন করা প্রয়োজন। এজন্য আপনারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন। আমি মনে করি বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রচারণা খারাপ কিছু নয়। বিলবোর্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর পরই গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়নের চিত্র একসঙ্গে দেখে বিরোধী দলের আঁতে ঘা লেগে গেছে। এজন্য তারা আবোল-তাবোল বকছে। আমি মনে করি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিলবোর্ডগুলো মহানগরীর রাস্তায় থাকা প্রয়োজন। তাহলে সরকার সম্পর্কে মানুষের ধারণা আরও ইতিবাচক হবে। এর প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান তার কথায় সায় দিয়ে বলেন, বিলবোর্ডে সরকারের উন্নয়নের প্রচারণা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এটা হবেই। একথা অস্বীকার করার যো নেই বর্তমান মিডিয়া অনেক শক্তিশালী। মিডিয়াকে ব্যবহার করে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে। জাতির অর্জন তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। না হলে জাতি কিভাবে উজ্জীবিত হবে? তাই আমার ব্যক্তিগত মত, আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিলবোর্ডগুলো থাকুক। অন্য কয়েক মন্ত্রী তার কথায় সায় দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কথা আমলে না নিয়েই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। এর আগে গত ৪ঠা আগস্টের মন্ত্রিসভার বৈঠকে কুড়িল ফ্লাইওভার প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় সরকারের এক সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভার সরকারের একটি অর্জন। এ অর্জনকে অনেক মিডিয়া ম্লান করে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী এ কথায় সায় দেন।
ওদিকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড-সংবলিত ‘বেনামি’ বিলবোর্ডগুলো ‘মুক্ত করা’ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিজয় সরণি, পান্থকুঞ্জসহ পাঁচটি জায়গায় বিলবোর্ড ‘মুক্ত’ হয়। ঈদের আগে রাজধানীজুড়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তুলে ধরা প্রচার-বিজ্ঞাপন দিয়ে শ’ শ’ বিলবোর্ড আবৃত করা হয়। তবে ওইসব অবশ্য কারা লাগিয়েছে তা উল্লেখ ছিল না। অবশ্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় সরকারের পক্ষ থেকেই এ বিজ্ঞাপন লাগানো হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হওয়ায় গত রোববার রাত থেকে তা সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে শেরাটন মোড়, আগারগাঁও ও মিরপুর এলাকার কিছু বিলবোর্ড ‘মুক্ত’ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি গুলোও সরিয়ে ফেলা হবে। গতকাল সরজমিন আগারগাঁও এলাকায় দেখা যায়, সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি সংক্রান্ত কিছু বিলবোর্ডের নিচ থেকে আসল বিজ্ঞাপন বেরিয়ে আসছে। এর মধ্যে ইউনিলিভার ও গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া দু’-একটি মিডিয়া হাউজের বিলবোর্ডও রয়েছে। বাংলাদেশ বিলবোর্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, আমরা খবর পেয়েছি, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিলবোর্ড থেকে সরকারি বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আমরা জানতাম, তারা সরাবে। পান্থকুঞ্জে বিলবোর্ডের ব্যানার সরানোর দায়িত্বে থাকা কয়েক জন কর্মী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমাগো মালিকরা কইছে সরাইতে। আমরা কাজ করতাছি।’ এদিনও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের বিলবোর্ড থেকে ব্যানার সরিয়ে ফেলা হয়। বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ জানান, কার নির্দেশে বিলবোর্ড সাঁটানো আর কার নির্দেশে সেগুলো সরানো হচ্ছে,  সেটা আমি জানি না। এগুলো সরানো হচ্ছে কেন, ভালই তো লাগছিল।