অনলাইন ডেস্ক ॥
নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারির সময় সাংঘর্ষিক পরামর্শ দিয়ে বিতর্কিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। গত এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ডাব্লিউএইচও বলেছিল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারীদের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। পরে সেই অবস্থান থেকে সংস্থাটি সরে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে ডাব্লিউএইচওর কর্মকর্তা জানান, উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তির কাছ থেকে করোনা সংক্রমণের হার কম। এ বক্তব্য নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। কারণ উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তি করোনা পরীক্ষার আগ পর্যন্ত তার করোনা সংক্রমণ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না। এর ফলে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির মতো তাকে আইসোলেশনে থাকতে হয় না বলে তার অধিকসংখ্যক লোকের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে। আর এর ফলে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের চিহ্নিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলেই ধারণা করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজেস ও জুনোসিস ইউনিটের প্রধান ড. মারিয়া ভ্যান কারখোভ গত সোমবার রাতে জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে দেখা যাচ্ছে, উপসর্গহীন ব্যক্তির দ্বারা দ্বিতীয় একজন ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা বিরল।’
তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত কন্টাক্ট ট্রেসিং করছে, বিভিন্ন দেশের এমন বেশ কিছু প্রতিবেদন আমাদের হাতে আছে। তারা উপসর্গহীন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো দেখছে। তাদের দ্বারা কারা সংক্রমিত হচ্ছে তাও তারা দেখছে। তারা এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাচ্ছে না। এটি (উপসর্গহীন ব্যক্তির দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়া) বিরল।’
অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘রয়াল কলেজ অব জেনারেল প্র্যাকটিসনারসের (আরএসিজিপি)’ ওয়েবসাইটে এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা ড. মারিয়া ভ্যান কারখোভের ওই বক্তব্য গণমাধ্যমে নাটকীয় শিরোনাম হয়েছে। সেখানে সরাসরি ভ্যান কারখোভকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, উপসর্গহীন ব্যক্তির দ্বারা করোনা সংক্রমণের হার কম। তবে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এ বিষয়ে আরো সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কার্ল বার্গস্ট্রম বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা ড. মারিয়া ভ্যান কারখোভের বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জনগণের কাছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দেওয়ার ধরনের সমালোচনা করে অধ্যাপক কার্ল বার্গস্ট্রম বলেন, ড. মারিয়া ভ্যান কারখোভের বক্তব্যের পক্ষেও তথ্য-উপাত্ত খুব কম।
তিনি বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হয়তো ‘প্রকৃত অর্থে উপসর্গহীন ব্যক্তি’ বলতে এমন ব্যক্তিদের বোঝাতে চেয়েছে যাদের কখনো উপসর্গ দেখা দেয় না বা তারা সংক্রমিত নয়। তবে আমরা জানি, সংক্রমিত লোকজনের শরীরে উপসর্গ স্পষ্ট হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই অন্যদের সংক্রমিত করে থাকে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তার বক্তব্য অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। কারণ তথ্য-প্রমাণগুলো তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে মেলে না। জ্যামা নেটওয়ার্কে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চীনের উহান প্রদেশে ৭৮ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মধ্যে অর্ধেকেরই কোনো উপসর্গ ছিল না। বিএমজে জার্নালস থোরাক্সে প্রকাশিত আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিক প্রমোদতরির ১২৮ জন কভিড-১৯ পজিটিভ যাত্রীর ৮১ শতাংশের মধ্যে কোনো উপসর্গ ছিল না।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চের এপিডেমিওলোজিস্ট অধ্যাপক ইভো মুয়েলার বলেছেন, উপসর্গহীন ব্যক্তির দ্বারা করোনা সংক্রমণের কারণেই শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির চেয়ে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা পাঁচ গুণ পর্যন্ত ধরা হয়।