স্টাফ রিপোর্টার ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের ১২৭ জন সংসদ সদস্যের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা দলীয় তহবিলে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত সাংসদদের এই অনুরোধ করেছেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২০ জন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তবে তাঁরা কেউই সংবাদপত্রে উদ্ধৃত হয়ে কিছু বলতে সম্মত হননি।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক বৈঠকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ এবং এর নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১২৭ জন।
এই ১২৭ জনের কাছথেকে ১০ লাখ টাকা দলীয় তহবিলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কোনো জোরজবরদস্তি নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তহবিল ছিল। এবারও একই রকম তহবিল গঠন করা হচ্ছে।
আশিকুর রহমান বলেন, ‘এমনিতেও আমরা দলে অনুদান দিই। বিশেষ করে দলের নির্বাচনী খরচ, আর্থিকভাবে দুর্বল প্রার্থীদের সহায়তা, দলীয় কার্যালয়ের খরচ, নির্বাচনী ইশতেহার ছাপানো, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রভৃতি কাজে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এসব খরচ মেটানোর জন্য দলীয় সাংসদ ও নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে অনুদান নিতে হয়।’
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ছয়-সাতজন ইতিমধ্যে দলীয় তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। তবে সবাই ১০ লাখ টাকা করে দেননি।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা বলা হলেও এটা বাধ্যতামূলক নয়। আবার সবার পক্ষে তা সম্ভবও নয়। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ীই হয়তো অনুদান দেবেন। তবে সবাইকে দিতে বলা হয়েছে দল পরিচালনার স্বার্থে।
উত্তরবঙ্গ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত একজন সাংসদ বলেন, ‘আমাকে ১০ লাখ টাকা দলীয় তহবিলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার নিজ নির্বাচনী এলাকায় জামায়াত-শিবিরের হামলায় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী নিহত, আহত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের সহায়তার জন্যই আমাকে অনেকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।’
ঢাকার একজন সাংসদ জানান, তাঁকেও ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছিল। তিনি এর বিরোধিতা করেন। এরপর এখন পর্যন্ত তাঁকে আর কিছু বলা হয়নি।
আরও কয়েকজন জানান, তাঁরা বলেছেন, ১০ লাখ টাকা করে দিতে পারবেন না, তাঁরা সামর্থ্য অনুযায়ী দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এবার তো এক অর্থে নির্বাচনই হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে দলের জন্য এত অর্থের প্রয়োজন কেন? আসলে এটা একধরনের মাশুল। মনোনয়ন-বাণিজ্যও বলা যায়।’