শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের বিধান ও ভোটার তালিকা থেকে বাদ

বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের বিধান ও ভোটার তালিকা থেকে বাদ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্যপ্রযুক্তি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০১৩’-কে আইনে রূপ দেয়ার ল্েয সংসদে উত্থাপিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩’ রোববার সংসদে পাস হয়েছে।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অপরাধে পুলিশ চারটি সুনির্দিষ্ট অপরাধের েেত্র বিনা ওয়ারেন্ট অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারবে এবং এসব অপরাধের েেত্র অপরাধ জামিন- অযোগ্য করা হয়ছে। আগের আইনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য ছিল।

এছাড়া যুদ্ধাপরাধের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের ভোটাধিকার না থাকা এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের যারা ভোটার তালিকাভুক্ত আছে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিধান করে ‘ভোটার তালিকা (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০১৩’ এবং ভোটার হিসেবে তালিকাভূক্ত নন এরূপ নাগরিকগণকে জাতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিধান করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩’ নামে অপর দুটি বিলও রোববার সংসদে পাস হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি সংশোধন বিল

তথ্য প্রযুক্তি সংশোধন আইনে শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ন্যূনতম সাত বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজার বিধান ছিল। আগের আইনে মামলা করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হতো। কিন্তু আইন সংশোধনের ফলে পুলিশ অপরাধ আমলে নিয়ে মামলা করতে পারবে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর সংসদের চলতি ১৯ অধিবেশনের প্রথমদিন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ নিয়ম অনুয়ায়ী ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধনী), ২০১৩’ অধ্যাদেশটি সংসদে উপস্থাপন করার পর সেটিকে বিলে রুপ দিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর এই বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধ্যাদেশ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বিভিন্ন মহল থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়।

অধ্যাদেশ থেকে বাকস্বাধীনতা হরণের ৫৭ ধারা বাতিল করে জাতীয় সংসদে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের দাবি জানানো হয়। এছাড়া ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশের গ্রেফতারের মতা প্রদানেরও সমালোচনা করা হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য বিলটির ওপর জনমত যাছাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণসহ সংশোধনীর প্রস্তাব দিলেও তারা সংসদে না থাকায় সেগুলো উত্থাপিত হয়নি।

মূল আইনের ৫৪ ধারায় বর্ণিত অপরাধ- কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ইত্যাদির অনিষ্ট সাধন, ৫৬ ধারায় বর্ণিত- কম্পিউটার সিস্টেমের হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ, ৫৭ ধারায় বর্ণিত- ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও ৬১ ধারায় বর্ণিত- সংরতি সিস্টেমে প্রবেশ সংক্রান্ত অপরাধ এর দন্ড পরিবর্তন করে ‘অনধিক দশ বছর কারাদন্ডের’ স্থলে ‘অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যুন সাত বছর কারাদণ্ডে’ শব্দাবলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

মূল আইনের ৭৬ ধারায় সংশোধনী এনে উপরোক্ত ৫৪, ৫৬, ৫৭ ও ৬১ ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলো আমলযোগ্য (কগনিজেবল) অথ্যাৎ এসব অপরাধের েেত্র পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে এবং এসব অপরাধকে অ-জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এই ধারার অনুচ্ছে (২) প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে- ‘(ক) ৫৪, ৫৬, ৫৭ ও ৬১ এ উল্লেখিত অপরাধ সমুহ আমলযোগ্য (কগনিজেবল) ও অ-জামিনযোগ্য হইবে এবং (খ) ৫৫, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ৬৫ এ উল্লেখিত অপরাধসমুহ অ-আমলযোগ্য (নন-কগনিজেবল) ও জামিনযোগ্য হইবে।’

বিলের উদ্দেশ্য কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের জন্য আইনটি যুগোপযোগী করে বাস্তবতার আলোকে কতিপয় ধারা/উপধারার পরিমার্জন ও সংশোধনের প্রয়োজন অনুভূত হওয়ায় এই বিলটি প্রণয়ণ করা হলো।

ভোটার তালিকা সংশোধন আইন

যুদ্ধাপরাধের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তরা ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবে না এবং যারা ভোটার তালিকাভুক্ত আছে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিধান করে ‘ভোটার তালিকা (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০১৩’ রোববার সংসদে পাস হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে রায়ের পরিপ্রেেিত ২০০৯ সালে পাশ হওয়া মূল আইনটিতে এই সংশোধনী আনা হলো। আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টারর শফিক আহমেদ বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

মূল আইনের ১৩ ধারা প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে- “ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন: নিম্নবর্ণিত যেকোনো কারণে ভোটার তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা হইতে কর্তন করিতে হইবে।”

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ভোটার তালিকাভূক্ত হওয়া এবং জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় পর্যায়ের যেকোনো নির্বাচনে ভোট প্রদান একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার। এ ধরণের অধিকার প্রাপ্তি ও প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য। যে সকল নাগরিক বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধীতা করেছেন ও যুদ্ধাপরাধসহ গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ সকল অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে তাদের ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়া ও থাকা সমীচীন নয়। সে উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ সংশোধন করা প্রয়োজন। উক্ত উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিলটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩

ভোটার হিসেবে তালিকাভূক্ত নন এরূপ নাগরিকগণকে জাতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিধান এবং পরিচয়পত্রের তথ্যকে গোপনীয় ও তা বেআইনিভাবে প্রকাশকে অপরাধ গণ্য করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩ পাস করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

মূল আইনের ৫ ধারা প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, “(১) ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ অনুসারে ভোটার হিসেবে তালিকাভূক্ত প্রত্যেক নাগরিক, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপে,ে জাতীয় পরিচয়পত্র পাইবার অধিকারী হইবেন।”

(২) উপধারা (১)-এ যাহা কিছ্ইু থাকুক না কেন, কমিশন অন্যান্য নাগরিককে, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপে,ে পরিচয়পত্র প্রদান করিতে পারিবে।

বিলের ১৩ দফা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে- (১) কমিশন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত সংরণ করিবে (২) কমিশনের নিকট সংরতি তথ্য উপাত্ত গোপনীয় বলিয়া বিবেচিত হইবে

(৩) উপধারা (২)-এ যাই কিছুই থাকুকনা কেন, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কমিশনের নিকট সংরতি তথ্য উপাত্ত পাইবার আবেদন করিতে পারিবে এবং কমিশন উক্তরূপ চাহিত তথ্য উপাত্ত, ভিন্নরূপ বিবেচিত না হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করিবে।

বিলে নতুন সংযুক্ত ১৬ক উপধারায় বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি তথ্য উপাত্তে অননুমোদিতভাবে প্রবেশ করিলে বা বেআইনিভাবে তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেএবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনুর্ধ পাঁচ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’

নতুন সন্নিবিশিত ১৭ক ধারায় বলা হয়েছে- ‘কমিশনের কোন সদস্য.কর্মকর্তা, কর্মচারী বা উহার প্রতিনিধি অননুমোদিতভাবে তথ্য উপাত্ত কোনো ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনুর্ধ পাঁচ বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে।