সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > বিদ্যুৎ খাতে ৩ শতাংশ ঋণ নেওয়া হচ্ছে কার স্বার্থে?

বিদ্যুৎ খাতে ৩ শতাংশ ঋণ নেওয়া হচ্ছে কার স্বার্থে?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
আগামী নির্বাচনের আগে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সুদে ঋণ নিতে যাচ্ছে। আগে কনসেশনাল লোন/ প্রিফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ হারে ঋণ নেয়া হয়েছে। আগামীতে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ বছরের জন্য তা তিন শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী মাসে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইআরডি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য বেশি সুদে ঋণ নেওয়া হলে দেশের উপর সুদের বোঝা বাড়বে। যা আগামী দিনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পিজিসিবি ও ডিপিডিসি তাদের প্রকল্প- ট্রান্সমিশন লাইন ও ট্রান্সফরমার ক্রয়ে এ ঋণে সুদের হার তিন শতাংশ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং ইআরডি বিষয়টিতে সম্মতি দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ এতে সম্মত হলে চীন অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, যেখানে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ বিভাগকে বিদ্যুৎ খাতের বিডিং প্রতিযোগিতাপূর্ণ করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এমনকি সিঙ্গেল মনোপলি ভাংগতে এবং দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আইনগত কার্যক্রমের উপরও জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- দেশের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়নের যে কোন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত এবং আর্থিক মূল্য সাশ্রয় করা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ দিকে যতœবান ১‘বলে মনে হয় না। বরং তারা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অধিক মূল্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো উৎসাহী হয়ে উঠেছে।
ভারতের ডলার ক্রেডিটে সুদের হার প্রথমে ছিল ১.৫ শতাংশ। বর্তমানে এ হার ১শতাংশ। চায়নিজ কনসেশনাল লোন/প্রিফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটে সুদের হার কমবেশী ২ শতাংশ। কিন্তু বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পিজিসিবি ও ডিপিডিসি তাদের প্রকল্প- ট্রান্সমিশন লাইন ও ট্রান্সফরমার ক্রয়ে এ ঋণের সুদের হার তিন শতাংশ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং ইআরডি বিষয়টিতে সম্মতি দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কিন্তু কেন? কার স্বার্থে। যেখানে দাতাদেশ/ব্যাংক দুই শতাংশ-এ ঋণ দিতে আগ্রহী, নেগোশিয়েশন করলে যেখানে কমবেশী ২ শতাংশ এ লোন পাওয়া যায়- সেখানে কার স্বার্থে তিন শতাংশ এ চুক্তি করা হচ্ছে। যদিও ইআরডি এই ব্যাপারে যথাপোযুক্ত ও যুক্তিসঙ্গ কারণ দেখানে পারেনি।

এই ব্যাপারে ইআরডি এর উইং ৮ এর উইং চিফ ও অতিরিক্ত সচিব মো. জাহিদুল হক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বেশি সুদে ঋণ নেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছি কিংবা সম্মতি প্রস্তাব দিয়েছি বিষয়টি তেমন নয়। চীনের কাছ থেকে প্রস্তাবটি পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে এখনও সব চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা হয়েছে। ঋণ চুক্তিটা আমরা এই বছরই করতে চাইছি। আমরা দুটি প্রকল্পের জন্য দুই বিলিয়নের বেশি ডলার চেয়েছি। এবার চীনের কাছে আমরা অনেক বেশি ঋণ চেয়েছি, এই কারণে তারা বলেছে আমরা যে ঋণ চেয়েছি তা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। কারণ তারাও ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে কত টাকা ঋণ দিবে এর একটা নির্ধারিত সীমা থাকে। সেই সীমা অতিক্রম করার কারণে তারা বেশি সুদ চাইছে। কারণ তারা আমাদের বলেছে, তোমরা বেশি ঋণ চেয়েছো। কিন্তু আমাদের পক্ষে সেটা দিতে গেলে তোমাদেরকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে এবং মার্কেট থেকে টাকা ম্যানেজ করে দিব। সেই ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি দিতে হবে। সুদের হার বেশি দিলে টাকা ঋণ দিতে পারবো।

তিনি বলেন, এই দুটি প্রকল্প সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে যেগুলো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব বেশি দেওয়ার কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য টাকা বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্ডিয়ান ডলার ক্রেডিটে ভারতের ঠিকাদারদের মধ্যে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে দরদাতা নির্বাচন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। চীনের কনশেসনাল লোন/বায়ার্স ক্রেডিটের ক্ষেত্রেও উন্মুক্ত টেন্ডার হওয়া বাঞ্চনীয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন লিমিটেড টেন্ডারে প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মত ও চুক্তি সম্পাদন করলেও সংশ্লিষ্টরা টেন্ডার ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিকতর আগ্রহী। এই ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে জি-টু-জি পর্যাযে কাজের অর্থ-সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হবে- কাজ বাস্তবায়ন হবে। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এনিয়েও চলছে নানা কথা। কারণ চীনের টিবিইএ, যে একটি বেসরকারি সংস্থা, তার সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নে জি-টু-জির মর্যাদা দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এক প্রভাবশালীর ছেলে টিবিইএ-এর প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞারা মনে করেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো নির্মান নিয়ে দেশে হরিলুট চলছে। দেশের দ্রত উন্নয়নে বিদ্যুৎ কাঠামো নির্মানে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বকে সংশ্লিষ্টরা উন্নয়নের চেয়ে তাদের লাভালাভের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলে দেশ অধিকতর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। দেশের সম্পদের, অর্থের অপচয় হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। এভাবে বিদ্যুৎ খাত চলতে পারে না। এটা যেমন সরকারের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে, তেমনি বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে দেশের জন্য। বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ইআরডি’র উইং ৮ এর উইং চিফ ও অতিরিক্ত সচিব মো. জাহিদুল হক এর কাছে চীনের কাছ থেকে এর আগে কনসেশন লোনতো তিন শতংশ সুদে নেওয়া হয়নি সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদে নেওয়া হয়েছে, এখন বেশি কেন এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে কোন প্রকল্পের ঋণে কত শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে এটা হয় প্রকল্প টু প্রকল্প। এতে করে অনেক সময় সুদের হার কম বেশি হয়ে থাকে।

এই ঋণ কত বছরের জন্য নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, তাদের লোনগুলো সাধারণত ২০-২৫ বছরের জন্য হয়ে থাকে।

দীর্ঘ সময়ের জন্য এক শতাংশহারে বেশি করে সুদ দিলেও দুই বিলিয়ন ডলারে অনেক টাকা বেশি সুদ আসবে। এতে দেশের আর্থিক ক্ষতি হবে না? তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমাদের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে না। কারণ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় স্টেকহোল্ডার হিসাবে ব্যবস্থা নিবেন। সেই জন্য তাদের মতামতটি গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের ডলার ক্রেটিটে সুদের হার প্রথমে ১.৫ শতাংশ ও বর্তমানে ১ শতাংশ। তাহলে ভারতের কাছ থেকে কম সুদে লোন পাওয়া গেলে বেশি সুদে ঋণ নেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে ভারতের সুদের হারের বর্তমান বিষয়টি আমার এই মুহুর্তে ঠিক স্মরণে নেই।

কোন সিন্ডকেটের কারণে ও প্রভাবশালী কোন মহলের চাপে পড়ে আপনারা কাজটি করছেন কিনা এবং সম্মতি দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তেমন নয়। এই ব্যাপারে আমরা চাপে নেই। কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে সেটাই বাস্তব। আমরা চীনকে বলেছি কোন কোন প্রকল্পগুলো বাস্তবয়নের জন্য আমাদের ২০১৭ সালে ঋণ চুক্তি করতে হবে। সেই হিসাবে এই দুটি প্রকল্পও পরেছে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে।

টেন্ডারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেন্ডার হওয়ার বিষয়টি আগে হবে না। কারণ টেন্ডার করা হবে যখন কাজটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন। আগে তো টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এই টাকার ব্যবস্থা করার পর ঋন চুক্তি করা হবে। এরপর আসবে কে বাস্তবায়ন করবে সেই বিষয়টি। তখন টেন্ডার করা হবে।

তাহলে টিবিইএ কাজটি কিভাবে করছে আর এটি একটি বেসরকারি সংস্থা এটাকে কিভাবে জি টু জি এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এই ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে এটা একটু ভিন্ন। কারণ এই কোম্পানি কারা হবে সেটা ঠিক করে চীন। চীনই টিবিইএকে ঠিক করেছে।সেখানে আমাদের কোন হাত নেই। কারণ বাস্তবায়নের বিষয়টি করে থাকে সরকার ও ওই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সেখানে তারা ঠিক করবে কিভাবে তারা করবেন। টেন্ডার না করে যদি সমঝোতার ভিত্তিতে করতে চায় সেই ব্যাপারে সমঝোতা হতে পারে।

ইআরডিএর একটি প্রতিনিধি দল এই বিষয়টি চুড়ান্ত করার জন্য ১০ আগস্ট চীনে যাচ্ছেন। এই দলে তিনি যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সচিব স্যার যাচ্ছেন না। আমি ও আমার আরও একজন কর্মকর্তা এছাড়াও রেলওয়ের কয়েকজন মিলে একটি প্রতিনিধি দল আমরা চীনে যাচ্ছি। সেখানে রেলওয়ের একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করা হবে। আলোচনা হবে। সেটি এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আমাদের সময়.কম