শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বিদেশী শ্রমিক আটক অভিযান শুরু মালয়েশিয়ায়

বিদেশী শ্রমিক আটক অভিযান শুরু মালয়েশিয়ায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত ৬পি প্রোগ্রামের আওতায় বেঁধে দেয়া দ্বিতীয় দফার সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ গতকাল স্থানীয় সময় রাত ১২টায় শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ, রেলা ও ইমিগ্রেশনের সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা দেশব্যাপী অভিযান শুরু করেছে। কুয়ালালামপুরসহ দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত বিদেশী গ্রেফতার হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা টেলিফোনে জানিয়েছে।

স্থানীয় পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, এবারের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ধরপাকড় অভিযানে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে টার্গেট করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে যারা ধরা পড়বে তাদের শুধু জেল-জরিমানা হবে না কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেত্রাঘাতও করা হবে। একই সাথে অবৈধ শ্রমিকদের যারা আশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধেও বিপুল অঙ্কের রিংগিট জরিমানা করা হবে বলে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এমন ঘোষণার তথ্য আগে ভাগে জানাজানি হওয়ার পরপরই হাজার হাজার বাংলাদেশী নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বিভিন্ন প্রদেশের বনজঙ্গলে অবস্থান নিয়েছে। মালয়েশিয়া হাইকমিশন ও দেশটিতে বসবাসকারী শ্রমিকদের ধারণা দেশটিতে অবৈধভাবে কমপক্ষে দুই-তিন লাখ বাংলাদেশী কর্মী অবস্থান করছেন।

গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মালয়েশিয়ার মসজিদ ইন্ডিয়া এলাকায় অবস্থানরত বৈধ শ্রমিক হানিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে টেলিফোনে বলেন, সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অবৈধ কর্মী অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই পুলিশ, রেলা ও ইমিগ্রেশনের যৌথবাহিনী কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে বেশ কিছু শ্রমিককে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সোমবার বিকেলে কুয়ালালামপুরের ঘনবসতি এলাকা মসজিদ ইন্ডিয়া এলাকার একটি বাজার থেকে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের ৪০-৫০ জনকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমারতো কাগজপত্র আছে; কিন্তু তারপরও আতঙ্কে আছি। শুনছে এই অভিযানে তারা বৈধ-অবৈধ দেখছে না, যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

পরে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করবে। তিনি গ্রেফতার অভিযান শুরু প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা বৈধভাবে এসে হাইকমিশনের অসহযোগিতায় কোনো কারণে বৈধ হতে পারেননি তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে বনজঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। কুয়ালালামপুর শহর এই মুহূর্তে মোটেও নিরাপদ নয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের এবারের টার্গেট কমপক্ষে ১০ লাখ অবৈধ বিদেশী গ্রেফতার করে যার যার দেশে ফেরত পাঠানো। এসব খবর আগেভাগেই মালয়েশিয়ার পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। অবৈধদের মধ্যে বাংলাদেশের দুই-তিন লাখ শ্রমিক রয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পত্রিকার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হতে সরকার তিনবার সুযোগ দিয়েছে। তারপরও যারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তাদেরই এবার গ্রেফতার করে দেশে পাঠানো সরকারের আসল কাজ। ইতোমধ্যে দেশটির ১১টি ডিটেনশন ক্যাম্প ও কারাগার খালি করা হয়েছে। একই সাথে পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে অভিযানে যে শ্রমিকই গ্রেফতার হবে (এক বছরমেয়াদি) তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার রিংগিট জরিমানা করা হবে। শুধু তাই নয়, অবৈধ শ্রমিকদের প্লানটেশন, ফ্যাক্টরি, পেট্রল পাম্প, রেস্টুরেন্টেসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাবে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককেও ১৫ হাজার রিংগিট জরিমানা করা হবে।

অভিযান শুরুর দুই দিন আগে আতঙ্কে জহুরবারুর জঙ্গলে অবস্থান নেয়া ঢাকার মেহেদী হাসান টেলিফোনে জানান, সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অভিযান শুরুর কথা থাকলেও তার একদিন আগেই যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে রোববার রাতে কুয়ালালামপুরের পুচং এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশীসহ প্রায় ১৩০ জন বিদেশীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় বলে মালয়েশিয়ার টেলিভিশনে তিনি দেখেছেন। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে জহুরবারুর কোটাতিঙ্গি থেকে রোববার বিকেল ৫টায় মিয়ানমারের ৯ জন, স্কুডাই এলাকা থেকে তিন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের অবৈধ হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার পেছনে হাইকমিশনের অনিয়ম দুর্নীতিই সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে তিনি দাবি করে নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, যেসব শ্রমিক ডিজিটাল পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস হাইকমিশনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারেননি তারাই এখন সবচেয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছেন। হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শ্রমিকরা কখনো ভালো ব্যবহার পাননি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কর্মকর্তারা তাদের পেছনে দালাল লেলিয়ে দিয়ে উল্টো নানা কৌশলে কোটি কোটি রিংগিট কামাইয়ে ব্যস্ত ছিলেন। যার কারণে বৈধ হওয়ার স্বপ্ন দেখা অনেক শ্রমিকই এখন বাধ্য হয়ে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে বনজঙ্গলে আশ্রয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে তিনিও একজন।

গত রাতে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ কে এম আতিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার অভিযান শুরু করছে এখানে আমার বক্তব্য দেয়ার কি থাকতে পারে। এই অভিযানে যারা গ্রেফতার হবে তাদের অবশ্যই দেশে চলে যেতে হবে। কারণ মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের বৈধ হওয়ার জন্য বারবার সুযোগ দিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই। কী পরিমাণ অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশী খুব একটা নেই তবে ইন্দোনেশিয়ানসহ অন্যান্য দেশের অবৈধ শ্রমিক রয়েছে লাখো লাখো। এর আগে তিনি হাইকমিশনের অনিয়ম প্রসঙ্গে দাবি করে বলেছেন, হাইকমিশনে কোনো ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। যেসব শ্রমিক ডিজিটাল পাসপোর্ট করার জন্য হাইকমিশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফরম জমা দিচ্ছে তাদের কাছ থেকে সরকারি ফি ১১৬ রিংগিট জমা নেয়া হচ্ছে। কেউ যদি কোনো দালালের কাছে এক হাজার রিংগিট জমা দেয় সে ক্ষেত্রে আমার পক্ষে কী করার থাকতে পারে?নয়াদিগন্ত।