শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা চুক্তির কোন সম্ভাবনা নেই

বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা চুক্তির কোন সম্ভাবনা নেই

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ নদী বাচাঁও, প্রকৃতি বাচাঁও, মানুষ বাচাঁও, এই দাবিতে আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল বিএনপি লং মার্চ করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এই লং মার্চে অšত্মত ৩ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিম্তার পানি চুক্তি করতে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু। ২২ এপ্রিল নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নেতৃত্বে লংমার্চ শুরু করা হবে।

এদিকে বিএনপি লংমার্চকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। আর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তি¯ত্মা অভিমুখে বিএনপির লংমার্চকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। এতে বিন্দুমাত্র আত্মরিকতা নেই বলেও মত্মব্য করেছেন তিনি। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি এসব বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এখন এই ইস্যূতে রাজনীতি শুরু করেছে। তবে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ইস্যূতে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য না থাকায় দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তিস্তার পানির বিষয়ে তারাও কোন জোড়ালো ভুমিকা নিতে পারেনি। তবে বিএনপির ব্যর্থতার জন্য এখন বর্তমান সরকার কেন জোড়ালো ভূমিকা নিতে পারবে না? তিস্তার ইস্যুটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফর থেকেই আলোচনা হচ্ছে। তাহলে এতদিন কেন সরকার সমস্যার কোন উদ্যোগ নিতে পারলো না।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, তিস্তা বিএনপি বা সরকারের কোন ইস্যু নয়। জাতীয় ইস্যুতেও আমাদের দেশের রাজনীতি যে দ্বিধা বিভক্ত তা আবারো প্রমাণ হলো তিস্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে। বিএনপি তিম্তার ইস্যুতে যেসব কর্মসূচী দিয়েছে সরকারের উচিত হবে তার বিরোধিতা না করে তাদের সাথে একটি ডায়ালগে বসা। জাতীয় এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যদি সব রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে সমাধান করা সম্ভব না হয় তা জাতির জন্য হতাশা ছাড়া কিছুই নয়। বিএনপি মনে করছে তিস্তার সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বার্থ জড়িত। এজন্যই তারা বিষয়টি সামনে এনেছে। এছাড়া তিস্তার পানির দাবিতে বামপন্থী দলগুলোও আন্দোলন করছে। সরকারের উচিত হবে সবাইকে সাথে নিয়েই তিস্তার ন্যায্য দাবি আদায়ের চেষ্টা করা।

ড. তারেক বলেন, ভারতের নির্বাচনের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে তিস্তার পানি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যদি দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এর একটি সমধান এখনই করা না যায় তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে উত্তরবঙ্গ মরুভূমিতে পরিণত হবে। ৯০ এর পর থেকে দুইবার তিস্তার চুক্তির বিষয়ে খুব কাছাকাছি গিয়েও তা করা সম্ভব হয় নি। সবশেষ ২০১১ সালে ঢাকায় মনমোহন সিং এর সফরের সময় মমতার আপত্তিতে চুক্তি হলো না। দুই দেশের সংলাপ বা সমঝোতার মাঝে একটি প্রদেশের আপত্তিতে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থেমে যাওয়ার নজির বিরল। পশ্চিমবঙ্গের অনেক এলাকা এই তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তাই বলে একতরফা পানি প্রত্যাহার সম্পূর্ণ আšত্মর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে পরষ্পরের বিরোধিতা কাঁদা ছোড়াছুড়ি এতটাই বেড়েছে যে, এখন জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো এক হতে পারছে না। বিএনপি এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সরকারের ভাবমূর্তিতে আঘাত করতে চায়। আবার সরকারও তাদের কোন ছাড় দিতে রাজি নয়। আসলে তিস্তা ইস্যুতে সবাইকে এক হয়ে কাজ না করলে এই দাবি জোড়ালো হবে না। তিস্তা ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলের একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধাত্ম দরকার।

তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ যেভাবে একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে তা আত্মর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ভারতের আগামী সরকার যদি এই বিষয়টির সমাধান না করে তাহলে পানি আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর হতে হবে। তি¯ত্মার ওপর যেমন ভারতের অনেক মানুষ নির্ভরশীল তেমনি বাংলাদেশেরও লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল। এছাড়া নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারনে এখানে মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা যাবে।

গত বছর তিস্তার নদীর পানি প্রবাহ ছিল ৭ হাজার কিউসেক থেকে ৮ হাজার কিউসেক। আর এখন তা দাঁড়িয়েছে চারশ’ কিউসেকে। যার ফলে দেশের শস্য ভান্ডার বলে খ্যাত উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা পানির অভাবে তাদের জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানক্ষেত শুকিয়ে মরছে।(আমাদের সময়.কম)