বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকাঃ পোশাক কারখানায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন নিয়ে দেশব্যাপী যখন চলছে নানা সক্রিয়তা ও দেনদরবার, তখন খোদ বিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলামের নিজ মালিকানাধীন কারখানা রোজ ড্রেসেজ আইন ভঙ্গ করছে একের পর এক।
শ্রম আইন ২০০৬ এর ১০০ ধারা অনুযায়ী, একজন শ্রমিক দিনে আট ঘন্টা কাজ করবেন এক ঘন্টা বিরতিসহ। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না সাভারে অবস্থিত রোজ ড্রেসেজ-এ। রোজ ড্রেসেজ-এ সাধারণ কর্মঘন্টা সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা। কিন্তু আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজ করার কথা সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত। এই সময়ের পর শ্রমিক যত ঘন্টা কাজ করবে তা ওভারটাইম হিসেবে গণ্য করার কথা। কিন্তু বিজিএমইএ সভাপতির গার্মেন্টে আট ঘন্টার জায়গায় নয় ঘন্টা কাজ করানো হচ্ছে।
অন্যদিকে শ্রম আইনের ১৭৫ ধারা মাফিক ট্রেড ইউনিয়ন বাধ্যতামূলক করা হলেও মো আতিকুল ইসলামের গার্মেন্টে কোনো ট্রেড ইউনিয়ন নেই। কারখানাটিতে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। আইন অনুযায়ী, ইউনিয়নের জন্য মোট শ্রমিকের অন্তত ৩০ শতাংশের রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। সে হিসাবে দুই হাজারের মতো শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের জন্য আবেদন না করলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সম্ভব নয়। মালিকপক্ষ সে সুযোগটাই নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কারখানাটির শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিকরা জানান, ট্রেড ইউনিয়নের যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো মালিকপক্ষ নানা রকমের ভয়ভীতি দেখিয়ে তা বন্ধ করেছে। কখনো শ্রমিকদের বলেছে যে, ট্রেড ইউনিয়ন হলেই কারখানা অশান্ত হবে। আর তখনই কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শ্রমিকরা আর এই দিকে এগুতে সাহস করেননি।
তবে শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন না থাকলেও ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেটরি কমিটি থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সেই কমিটির সদস্য শ্রমিকদের দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে এটাও বলা আছে। কিন্তু রোজ ড্রেসেজ-এ আদৌ পার্টিসিপেটরি কমিটি আছে কিনা তা জানেন না সাধারণ শ্রমিকরা।
রোজ ড্রেসেজ-এর শ্রমিক সাবিনা বলেন, আমাগো পার্টিসিপেটরি কোনো কমিটি নাই। থাকলে কারা আছেন জানি না।
এসব বিষয়ে টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সাধারন সম্পাদক তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, রোজ ড্রেসেজ সম্পর্কে আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে যে, ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলেই মালিকপক্ষের লোকজন শ্রমিকদের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। ফলে সেখানে এ পর্যন্ত কোনো ট্রেড ইউনিয়ন হয়নি। সেখানকার শ্রমিকদের সাথে আমি কথা বলে দেখেছি পার্টিসিপেটরি কমিটির বিষয়ে তারা কোনো কিছ’ই জানেন না।
অন্যদিকে শ্রম আইনের ২৩২ ধারাও বাস্তবায়ন করেননি বিজিএমইএ এর সভাপতি। ২৩২ ধারা অনুযায়ী, কারখানার লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের প্রাপ্য। কিন্তু রোজ ড্রেসেজ-এর শ্রমিকরা বলছেন, বাস্তবে কোনো শ্রমিকই বছরে মুনাফার কোনো অংশ পান না।
রোজ ড্রেসেজ-এর জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) সাধন সরকার এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কারখানার এসব বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবো না। যা বলার স্যার (বিজিএমইএ সভাপতি) বলবেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে বিজিএমইএ এর সভাপতি ও রোজ ড্রেসেজ-এর এর মালিক মোঃ আতিকুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম